‘গো হত্যাকারীদের মেরে ফেলা উচিত’

ভারতে যারা গোহত্যা করবে, তাদের একমাত্র শাস্তি হওয়া উচিত মৃত্যুদণ্ড। দেশটির কট্টর হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের (আরএসএস) মুখপত্র ‘পাঞ্চজন্য’র সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছে এমন কথা।
পাঞ্চজন্যর সম্পাদকের দাবি, হিন্দু ধর্মগ্রন্থ বেদে লেখা রয়েছে, যারা গো হত্যা করবে, তাদের মেরে ফেলা উচিত। তাই যারা বেদ মেনে চলে, তাদের প্রত্যেকেরই উচিত গো হত্যাকারীদের মেরে ফেলা।
এই সম্পাদকীয় প্রকাশিত হতেই সমালোচনার ঝড় উঠেছে গোটা ভারতে। আরএসএসের এমন মন্তব্য আবারও দাদরিকাণ্ডের বিষয়টি উসকে দেওয়া হলো বলে মনে করছেন দেশটির সচেতন মহল।
এর পাশাপাশি ভারতে সাহিত্যিকদের সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি ‘অসংবেদনশীল হিন্দু অনুভূতি’ বলেও দাবি করা হয়েছে ওই সম্পাদকীয়তে।
‘ইস পাত কে উস পার’ নামক ওই সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, মাদ্রাসা এবং ইসলাম ধর্মের ধর্মগুরুরাই তাঁদের সম্প্রদায়ের মানুষকে ঘৃণা করতে শেখাচ্ছে। ভারতের দাদরির ঘটনা সেই শিক্ষারই ফল।
ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের দাদরি এলাকায় গোমাংস রাখার অভিযোগে চলতি মাসের শুরুতে ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের দাদরিতে মুহাম্মদ আখলাক নামে ৫০ বছরের এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়। এমনকি আখলাকের ২২ বছরের ছেলে দানিশকেও মারধর করা হয়।
এই ঘটনায় পাঞ্চজন্যর সম্পাদকীয়তে দাবি করা হয়েছে, ইসলাম ধর্মের ধর্মগুরুদের শিক্ষার প্রভাবেই মুহাম্মদ আখলাক বাড়িতে গোমাংস রাখার মতো ঘৃণ্য কাজ করেছিলেন। সম্ভবত মুহাম্মদ আখলাককে জাতীয় ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে কাজ করতে বাধ্য করা হয়েছিল।
সম্পাদকীয়তে আরো লেখা হয়েছে, হিন্দুধর্মগ্রন্থ বেদে নির্দেশ দেওয়া আছে, যাঁরা এ দেশে থেকে গোহত্যা করছেন, তাঁদের একমাত্র শাস্তি হওয়া উচিত মৃত্যু। গো হত্যা হিন্দুধর্মের অনেক মানুষের কাছে জীবন-মরণের শামিল বলেও উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনটিতে। কারণ গোমাতাকে হিন্দুধর্মে ভগবানরূপে পূজা করা হয়।
শত বছর ধরে ভারতের মানুষ গো হত্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন বলেও সম্পাদকীয়তে উল্লেখ করা হয়। বলা হয়েছে, তাঁরা বিভিন্ন সময়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভারতে গো হত্যা বন্ধের চেষ্টা চালিয়ে গেছেন।
সম্পাদকীয়তে ইতিহাসের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, বিদেশি আক্রমণকারীরা অনেক সময় ভারত আক্রমণ করে ভারতীয় হিন্দুদের ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করতে মুখে জোর করে গোমাংস ঢুকিয়ে দিয়েছে।
আরএসএসের মুখপত্রতে এই সম্পাদকীয় প্রকাশ পাওয়ার পর চারিদিকে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে। আর এই সমালোচনার চাপের মুখে পড়ে অবশ্য আরএসএস মুখপত্রের সম্পাদক হিতেশ শঙ্কর জানান, ওই সম্পাদক কেবলমাত্র লেখার মাধ্যমে তাঁর নিজের মত প্রকাশ করেছেন। তিনি পাঞ্চজন্যর সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নন। তাই এই লেখার সঙ্গে পত্রিকার কোনো রকম সম্পর্ক নেই।