এয়ার ইন্ডিয়া দুর্ঘটনায় ২৬০ জনের মৃত্যু, তদন্তে মিলল চাঞ্চল্যকর তথ্য

ভয়াবহ এক বিমান দুর্ঘটনায় গত মাসে কেঁপে উঠেছিল ভারত। আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনগামী এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার উড্ডয়নের মাত্র তিন সেকেন্ড পরেই বিধ্বস্ত হয়। এই মর্মান্তিক ঘটনায় বিমানে থাকা ২৪২ যাত্রী ও ক্রু সদস্যের প্রায় সবাইসহ মোট ২৬০ জন প্রাণ হারান। এ ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে বেরিয়ে এসেছে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। উড্ডয়নের পরপরই বিমানের ইঞ্জিনের জ্বালানি নিয়ন্ত্রণ সুইচগুলো ‘রান’ থেকে ‘কাটঅফ’ অবস্থানে চলে গিয়েছিল, যা এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার পেছনে একটি বড় কারণ হতে পারে।
ভারতের বিমান দুর্ঘটনা তদন্ত ব্যুরো (এএআইবি) তাদের প্রাথমিক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে। এই প্রতিবেদন দুর্ঘটনা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তৈরি করেছে।
জ্বালানি সুইচ হঠাৎ ‘কাটঅফ’ অবস্থানে
প্রতিবেদন অনুযায়ী, সুইচগুলো উল্টে যাওয়ার পরপরই বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনারটি সঙ্গে সঙ্গেই শক্তি হারাতে শুরু করে ও নিচের দিকে নামতে থাকে। ককপিটের ভয়েস রেকর্ডারে এক পাইলটকে অন্যজনকে জিজ্ঞাসা করতে শোনা যায়, কেন তিনি জ্বালানি বন্ধ করে দিয়েছেন। জবাবে অন্য পাইলট বলেছিলেন, তিনি এমনটা করেননি।
দুর্ঘটনার ঠিক আগে বিমানের ক্যাপ্টেন ও প্রথম কর্মকর্তার মধ্যে কে কী বলেছিলেন তা চিহ্নিত করা যায়নি। একই ভাবে, কোন পাইলট ‘মেডে, মেডে, মেডে’ বার্তাটি পাঠিয়েছিলেন, তাও শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। ভারতের আহমেদাবাদ শহর থেকে লন্ডনগামী ফ্লাইটে কীভাবে সুইচটি কাটঅফ অবস্থানে চলে গেল, তা প্রাথমিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিমান চলাচল নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ জন কক্স বলেছেন, একজন পাইলট দুর্ঘটনাক্রমে ইঞ্জিনে জ্বালানি সরবরাহকারী সুইচগুলো সরাতে পারবেন না। রয়টার্স সংবাদ সংস্থাকে তিনি বলেন, ‘আপনি সেগুলোকে ধাক্কা দিতে পারবেন না ও সেগুলো নিজে থেকে নড়বে না।’
জ্বালানি সুইচ ‘কাটঅফ’ অবস্থানে উল্টে দেওয়ার ফলে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। সাধারণত বিমানবন্দরের গেটে পৌঁছানোর পর ইঞ্জিন বন্ধ করতে বা ইঞ্জিনে আগুন লাগার মতো জরুরি পরিস্থিতিতে এটি ব্যবহার করা হয়। প্রতিবেদনে এমন কোনো জরুরি অবস্থার ইঙ্গিত দেওয়া হয়নি যার জন্য ইঞ্জিন ‘কাটঅফ’ করার প্রয়োজন ছিল।
ভারতের এএআইবি জানিয়েছে, ‘তদন্তের এই পর্যায়ে, বোয়িং ৭৮৭-৮ অথবা জিই জিইএনএক্স-১বি ইঞ্জিন অপারেটর ও প্রস্তুতকারকদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়নি।’

এয়ার ইন্ডিয়া সোশ্যাল মিডিয়া সাইট এক্স-এ (সাবেক টুইটার) এক বিবৃতিতে এই প্রতিবেদনটি স্বীকার করেছে। বিমান সংস্থাটি জানিয়েছে, তারা ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সহযোগিতা করছে, তবে এ বিষয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
তদন্তে আরও যা জানা গেল
এই সপ্তাহের শুরুতে বিশেষজ্ঞ ওয়েবসাইট দ্য এয়ার কারেন্ট তদন্তের সঙ্গে পরিচিত একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, তারা ‘ইঞ্জিনের জ্বালানি সুইচগুলোর নড়াচড়ার ওপর তাদের মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছে।’ তারা আরও উল্লেখ করেছে, সম্পূর্ণ বিশ্লেষণ শেষ হতে ‘কয়েক মাস সময় লাগবে—যদি এর চেয়ে বেশি না হয়।’ এতে আরও যোগ করা হয়েছে, ‘তদন্তকারীদের মনোযোগ সেই সময়ের মধ্যে পরিবর্তিত হতে পারে।’
ভারতীয় সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ২০১৮ সালে ‘জ্বালানি নিয়ন্ত্রণ সুইচ লকিং বৈশিষ্ট্যের সম্ভাব্য বিচ্ছিন্নতা’ সম্পর্কে একটি তথ্য বুলেটিন জারি করেছিল। যদিও এই উদ্বেগটিকে ‘অনিরাপদ অবস্থা’ হিসাবে বিবেচনা করা হয়নি, যার জন্য আরও গুরুতর নির্দেশের প্রয়োজন হতো, এয়ার ইন্ডিয়া তদন্তকারীদের জানিয়েছে, তারা প্রস্তাবিত পরিদর্শনগুলো করেনি, কারণ সেগুলো ‘পরামর্শমূলক ও বাধ্যতামূলক নয়।’ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এয়ার ইন্ডিয়া বিমানের সমস্ত বিমান চলাচল নির্দেশিকা ও সতর্কতা পরিষেবা বুলেটিন মেনে চলে।
তদন্ত ব্যুরো বিমানের নির্মাতা বোয়িংকে দোষারোপ করেনি। তবে, তদন্ত এখনও চলছে ও ‘অংশীদারদের কাছ থেকে’ অতিরিক্ত প্রমাণ ও তথ্য চাওয়া হয়েছে। বোয়িং তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্যের অনুরোধের জবাব দেয়নি। এর আগে, মারাত্মক দুর্ঘটনার পর কোম্পানিটি তার পৃথক ৭৩৭ ম্যাক্স প্রোগ্রামের উৎপাদন ও সুরক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে তদন্তের মুখোমুখি হয়েছিল।

বিমানটিতে যাত্রী ও ক্রুসহ ২৪২ জন ছিলেন। বিশ্বকুমার রমেশ নামে মাত্র একজন বেঁচে গিয়েছিলেন। বিমানটি মেঘনী নগর নামক একটি আবাসিক এলাকায় বিধ্বস্ত হয়েছিল ও মাটিতে থাকা ১৯ জনও নিহত হয়েছিলেন। ভারতের বেসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে এএআইবি এক দশকের মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে মারাত্মক বিমান দুর্ঘটনার তদন্তের নেতৃত্ব দিচ্ছে।