‘নবান্ন অভিযানে’ রণক্ষেত্র কলকাতা

পশ্চিমবঙ্গের বাম দলগুলোর অঙ্গসংগঠন কৃষকসভার পক্ষে ডাকা নবান্ন অভিযানকে ঘিরে রীতিমতো রণক্ষেত্রে হয়ে উঠল কলকাতা। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রেড রোডে বামদের বিক্ষোভ মিছিলে প্রথমে বাধা দেয় পুলিশ। এ সময় বিক্ষোভকারীরা ধস্তাধ্বস্তি শুরু করলে লাঠিপেটাও করা হয়। জবাবে মিছিল থেকেও বৃষ্টির মতো ছুটে আসে ইট আর আধলার টুকরো। পরিস্থিত সামাল দিতে একপর্যায়ে জলকামান থেকে গরম পানি এবং টিয়ার গ্যাসও ছোঁড়া হয়।
কলকাতার ডাফরিন রোড ও মেয়ো রোডের সংযোগস্থলে মহাত্মা গান্ধীর মূর্তির কাছে বিক্ষোভকারীদের ইটের আঘাতে গুরুতর জখম হন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু।
মূলত কলকাতা এবং হাওড়া দুদিক থেকে মিছিল এসে নবান্নের সামনে জড়ো হওয়ার কথা ছিল। ওই সময় হাওড়ার ‘ফোরশোর রোডের’ কয়লা ডিপো ক্রসিংয়ের কাছে এক সিপিএমকর্মীর মাথা ফেটে যায় বলে অভিযোগ করা হয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে মিছিলকারীরা আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় জলকামান ছোড়ে পুলিশ। এ ছাড়া নামানো হয় বিশেষ কমব্যাট ফোর্স।
অন্যদিকে হাওড়ার সাঁতরাগাছি থেকে আসা মিছিলে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে কোনা এক্সপ্রেসওয়ে নামক এলাকা। এ ছাড়া হাওড়ার বেলেপোলের কাছে মিছিল আটকালে সেখানেও খণ্ডযুদ্ধ বেধে যায়। ইটের আঘাতে সেখানে আহত হন এক পুলিশ সদস্য। পরিস্থিতি সামলাতে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ।
এ ছাড়া খিদিরপুর এলাকায় সুজন চক্রবর্তীর নেতৃত্বে বামদের মিছিল পিটিএস মোড়ে আটকে দেয় পুলিশ। সেখানেও পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা হলে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয় বিক্ষোভকারীদের।
আর কলকাতার রানি রাসমণি রোড থেকে আসা বামদের মিছিলে নেতৃত্ব দেন স্বয়ং বিমান বসু ও সূর্যকান্ত মিশ্র। মিছিলটি ডাফরিন রোডে পৌঁছাতেই পুলিশ ব্যারিকেড করে মিছিলটি আটকে দেয়। ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা হলে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ধ্বস্তাধ্বস্তি বেধে যায়। এরপরেই পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে। পাল্টা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি শুরু করে আন্দোলনকারীরা।
পুলিশও এ সময় পালটা ইট ছোড়ে। দুই পক্ষের এই ইটবৃষ্টির মধ্যে মাথায় জখম হন বিমান বসু। মাথায় আঘাত লেগে রাস্তায় পড়ে যান তিনি। এ সময় বেশ কয়েকজন সাংবাদিক এবং পুলিশ সদস্যও আহত হন। আহতদের কলকাতার বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
বাধা ঠেলে বিকেল ৪টার দিকে নবান্নে জড়ো হন বামফ্রন্টের নেতারা। শীর্ষ নেতারা পুলিশি প্রতিরোধের কড়া সমালোচনা করে কলকাতার রেড রোডে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, ‘কৃষকদের স্বার্থ সুরক্ষিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এই আন্দোলন চলবেই।’ বিমান বসু বলেন, পুলিশের এই আচরণ মেনে নেওয়া যায় না। তৃণমূলের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছে তারা।
বিমান বসু আরো বলেন, ‘আগে থেকেই জানানো হয়েছিল নবান্নের সামনে গিয়ে অভাব-অভিযোগ জানাবেন বামরা। অনুমতিও নেওয়া হয়েছিল পুলিশের কাছ থেকে। কিন্তু পুলিশ এমন আচরণ করেছে তাতে মনে হয়েছে, যেন বাম কর্মীদের নিয়ে নবান্ন দখলে যাচ্ছিলাম আমরা।’
উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গে ন্যায্যমূল্যে কৃষকদের ফসল কেনা, সহায়ক মূল্য দেওয়া, রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিকের দাবিতে বামপন্থী কৃষক সংগঠন এ কর্মসূচির ডাক দিয়েছিল। সংগঠনটির আরো দাবি ছিল, কেন্দ্রীয় সরকারের জমি অর্ডিন্যান্স প্রত্যাহার, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ঋণ মওকুফ ও ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারি সাহায্যের দাবি।