মানসিক অবসাদে ভুগে বুধবার রাতে অনন্তের পথে চলে গেলেন কিংবদন্তি রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী সাদি মহম্মদ। বুধবার (১৩ মার্চ) সন্ধ্যায় নিজ ঘর থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরিবারের সদস্য, পুলিশ এবং হাসপাতাল সূত্রে অনেকটা স্পষ্ট, আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছিলেন এই শিল্পী।

তাঁর মৃত্যুর খবরটি জানিয়েছেন নৃত্যশিল্পী শামীম আরা নীপা। এ বিষয়ে নৃত্যশিল্পী শামীম আরা নীপা বলেন, ‘মা মারা যাওয়ার পর থেকেই তিনি মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। মা হারানোর বেদনা সম্ভবত নিতে পারেননি। এভাবেই চলছিল। বুধবার রোজা রাখলেন। ইফতারও করলেন। এরপরই তিনি নীরবে না ফেরার দেশে পাড়ি জমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে ধারণা করছি।’

সাদী মহম্মদের বাবা সলিমউল্লাহ মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রহরে শহীদ হন। তাঁর মায়ের নাম জেবুন্নেছা সলিমউল্লাহ। ১৯৭১ সালে মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের সি-১২/১০ বাড়িটি ছিল স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম সূতিকাগার। ওই বছরের ২৩ মার্চ বাড়িতে সাদী মহম্মদের আঁকা বাংলাদেশের পতাকা ওড়ান সলিমউল্লাহ। সেই পতাকা ওড়ানোর সূত্র ধরে ২৬ মার্চ অবাঙালি বিহারি ও পাকিস্তানি সেনারা বাড়িটি পুড়িয়ে দেয়, গুলি করে মারা হয় সলিমউল্লাহকে।

বাবা-মায়ের ইচ্ছা অনুযায়ী ১৯৭৩ সালে বুয়েটে ভর্তি হয়েছিলেন সাদি মহম্মদ। তবে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মন বসাতে পারেননি তিনি। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াকালীন ১৯৭৫ সালে স্কলারশিপ নিয়ে শান্তিনিকেতনে সংগীত নিয়ে পড়তে যান। বিশ্বভারতী থেকে রবীন্দ্রসংগীতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। সেই থেকে শুরু পথচলা।

২০০৭ সালে ‘আমাকে খুঁজে পাবে ভোরের শিশিরে’ অ্যালবামের মধ্য দিয়ে তিনি সুরকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। এছাড়া ২০০৯ সালে তার ‘শ্রাবণ আকাশে’ ও ২০১২ সালে তার ‘সার্থক জনম আমার’ অ্যালবাম প্রকাশিত হয়।

গত বছরের জুলাই মাসে সাদি মহম্মদের মা জেবুন্নেছা সলিমউল্লাহ মারা যান। এরপর থেকেই নাকি নানা কারণে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন এই সংগীত তারকা।