প্রতারিত নায়িকারা আইনি সহায়তা পেতে পারেন যেভাবে

একের পর এক ছবির মহরত অনুষ্ঠিত হচ্ছে। অভিনয়ের বিষয়ে চুক্তি করে নায়িকাদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে প্রযোজনা সংস্থা। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই নায়িকারা সরে যাচ্ছেন সেই ছবি থেকে, তাঁদের অভিযোগ আপত্তিকর প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে তাঁদের। এ ধরনের পরিস্থিতির কারণে বিব্রত হন পরিচালক, প্রযোজক, নায়ক-নায়িকা সবাই। বিষয়টি নিয়ে কিছুদিন আলোচনা হয়, এরপর বিরতি দিয়ে আবারও নতুন অভিযোগ শোনা যায়। কিন্তু এর সমাধান কী? প্রতারিত হলে নায়িকারা কী দেশের প্রচলিত আইনে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারবেন? চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতিই বা কী ভূমিকা রাখতে পারে? কিংবা শিল্পী সমিতি কীভাবে সহায়তা করতে পারে?
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ঢালিউডের নায়িকাদের শ্লীলতাহানি ও যৌন হয়রানি করলে তাঁরা ফৌজদারি ও নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করতে পারেন। এ মামলা প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ হতে পারে। এ ছাড়া ধর্ষণ মামলা প্রমাণিত হলে যাবজ্জীবন ও গণধর্ষণ মামলা প্রমাণিত হলে মৃত্যুদণ্ডাদেশ হতে পারে।’
ছবিতে চুক্তি ও পরে বাদ দেওয়া প্রসঙ্গে রেজাউল করিম বলেন, ‘কোনো ছবিতে চুক্তি করার পর যদি সেটা ভঙ্গ করা হয়, তাহলে দণ্ডবিধির ৪২০ ধারা অনুযায়ী প্রতারণার মামলা করা যায়। এ মামলা প্রমাণিত হলে তিন বছর পর্যন্ত করাদণ্ড এবং অর্থ দণ্ডও হতে পারে। এ ছাড়া ক্ষতিপূরণের মামলাও করা যায়। চুক্তি ভঙ্গের কারণে অন্য ছবিতে আর্থিকভাবে ক্ষতি হয়েছে মর্মেও আদালতে মামলা করা যায়। এ ক্ষেত্রে আদালতে ৫০ হাজার টাকার বন্ড দিয়ে ক্ষতি পূরণ মামলা করতে পারেন ভুক্তভোগীরা।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সহসভাপতি সোহানুর রহমান সোহান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আসলে যে ধরনের অভিযোগ ইদানীং নায়িকারা করছেন তাতে আমরা পরিচালকরা বিব্রত। এটা সম্মানজনক নয়, এ ধরনের অভিযোগ ফেসবুকে তুলে ধরলে সাধারণ মানুষের চলচ্চিত্রের প্রতি বাজে ধারণা তৈরি হবে। আমাদের পরামর্শ হচ্ছে যদি কেউ এ ধরনের কোনো সমস্যায় পড়েন তাহলে তিনি সরাসরি পরিচালক সমিতিতে অভিযোগ করতে পারেন। এখন তথ্যপ্রযুক্তির যুগ, মানুষের কথা রেকর্ড করা বা ভিডিও করাও অনেক সহজ। যদি কেউ প্রমাণসহ আমাদের কাছে আসতে পারেন, তবে সেটার জন্য উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। নাম প্রকাশ না করেই বলছি, এর আগেও আমাদের কাছে এ ধরনের অভিযোগ এসেছে আমরা প্রমাণ পেয়েছি এবং সেই পরিচালক আজ পর্যন্ত এফডিসিতে প্রবেশ করতে পারেন না। আমার মনে হয়, অযথা দেশের মানুষের কাছে বিভ্রান্তি না ছড়িয়ে চলচ্চিত্রের সংগঠনগুলোর কাছে থেকে সাহায্য নিতে পারেন।’
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নায়ক অমিত হাসান এ বিষয়ে বলেন, ‘আসলে কেন, কী হচ্ছে আমরা এর কিছুই জানি না। শিল্পীদের নিরাপত্তার বিষয়ে আমরা সচেষ্ট, কিন্তু কেউ যদি কোনো অভিযোগ না করে, তা হলে আমাদের কী করার আছে? সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে এসব লিখে চলচ্চিত্রকে অসামাজিক করে দিচ্ছে। আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ এলে আমরা এর প্রতিকারে কাজ করব।’
এর আগে গণমাধ্যমে নানা সময়ে প্রযোজক ও পরিচালকদের বিরুদ্ধে অভিযোগের কথা উঠে এসেছে। তাঁদের বিরুদ্ধে থানায় নায়িকারা সাধারণ ডায়েরিও করেছেন। এনটিভি অনলাইনেও নায়িকাদের সঙ্গে প্রতারণার খবর প্রকাশ পেয়েছে। এর পর পরই চলচ্চিত্র পরিচালক ও শিল্পী সমিতিতে বিষয়টি নিয়ে আলাপ শুরু হয়। তাঁরা এনটিভি অনলাইনকে জানান, বিষয়টি রোধে তারা আরো বেশি সচেতন হবেন।