নায়িকাদের সাথে প্রতারণার অভিযোগ

ঢালিউডের চলচ্চিত্রে অনেকেই নায়িকা হওয়ার ইচ্ছে পোষণ করেন। তারকা হওয়ার বাসনায় অনেক তরুণী রুপালি জগতের দিকে পা বাড়ান। সেই বাসনা কারো সত্যি হয়, আবার কেউ কেউ হন প্রতারিত। নায়িকা বানানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতারণা করা নতুন কিছু নয়। এবার এনটিভি অনলাইনের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে নতুন ধরনের প্রতারণার গল্প।
এম কে জামান মাস্টারের পরিচালনায় ‘বিষাক্ত ইয়াবা’ ছবির মহরত অনুষ্ঠিত হয় কিছুদিন আগে। যার প্রযোজক হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় সিরাজুল ইসলাম আকাশ ও মঞ্জুরুল ইসলাম রনিকে। সেই মহরত অনুষ্ঠানে প্রধান নায়িকা হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় সাদিয়া আফরিনকে। কিছুদিন পরে পরিচালকের পক্ষ থেকে তাঁকে জানানো হয় এই ছবিতে নায়িকা হিসেবে তিনি থাকছেন না।
এ বিষয়ে পরিচালক জামান মাস্টার বলেন, ‘সাদিয়া আফরিন একজন ভালো অভিনেত্রী। আমি এই ছবিতে না হলেও ভবিষ্যতে সাদিয়া আফরিনকে নিয়ে কাজ করব। এই ছবিতে প্রযোজকের ইচ্ছেতে এবং গল্পের পরিবর্তনের কারণে সাদিয়াকে বাদ দেওয়া হয়েছে।’ জামান মাস্টার আরো জানান, তিনি এই পর্যন্ত ছয়টি ছবি করেছেন। কিন্তু কোনো ছবিই মুক্তি পায়নি। কোনো ছবিতেই বড় কোনো নায়ক-নায়িকা ছিল না।
সাদিয়া আফরিনের কাছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এই বিষয়ে এখনই কোনো মন্তব্য করতে চাই না। সময় হলে সবার মুখোশ খুলে দেব।’
কিছুদিন আগে বুলবুল বিশ্বাসের ‘রাজনীতি’ ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন লাক্স তারকা এবং মডেলিংয়ে জনপ্রিয় মুখ পিয়া বিপাশা । এ ছবিতে তাঁর বিপরীতে ছিলেন ঢাকাই চলচ্চিত্রের ‘কিং খান’ খ্যাত শাকিব খান এবং জায়েদ খান। কিন্তু হঠাৎ করেই রাজনীতি ছবি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে পিয়াকে।
বাদ দেওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়, চুক্তি অনুযায়ী শর্ত মানেননি পিয়া বিপাশা। তাই তাঁকে বাদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পিয়া জানালেন ভিন্ন কথা। তাঁকে অনৈতিক প্রস্তাব দেওয়ায় তিনি নিজেই ছবি থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন।
কিন্তু নির্মাতা বুলবুল বিশ্বাস বলেন, “পিয়ার সাথে শর্ত ছিল ‘রাজনীতি’ ছবিতে অভিনয় করলে ছয় মাসের মধ্যে নতুন ছবিতে কাজ কিংবা চুক্তিবদ্ধ হতে পারবেন না পিয়া। পরে পিয়া শর্ত না মেনে ‘মনের রাজা’ ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। এ জন্য তাঁকে রাজনীতি ছবি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।”
কিন্তু পিয়া দাবি করেছেন, তাঁকে ছবিতে কাজ করার জন্য অনৈতিক প্রস্তাব দেওয়া হয়। তাতে তিনি হতাশ হন এবং ছবিটি থেকে সরে দাঁড়ান।
পিয়া বলেন, ‘ক্যারিয়ারের লোভে কোনো অনৈতিক কাজে জড়িয়ে যাওয়ার ইচ্ছে বা মানসিকতা আমার নেই। যদি শাহরুখ খানের নায়িকা হিসেবেও আমাকে সুযোগ দেওয়া হয় তবুও না। এর বেশি কিছু বলতে চাই না। আমি শিল্পী মানুষ, নিজেকে শিল্পচর্চায় যুক্ত রাখতে চাই। কিন্তু নোংরামি নয়। তাই ছবিটি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি।’
শাহ আলম মণ্ডল পরিচালিত ‘জানে মন তুই জীবন’ চলচ্চিত্রে নবাগত নায়িকা আলভিরা ইমুর কাজ করার কথা ছিল। এই ছবিতে তাঁর নায়ক হিসেবে নেওয়া হয়েছিল শাকিব খানকে। কিন্তু কয়েকদিন গড়াতেই ইমু সিদ্ধান্ত নেন তিনি ছবিটি করবেন না।
এনটিভি অনলাইনকে দেওয়া বক্তব্যে তাঁর ক্ষোভ প্রকাশ পায়। কারণ হিসেবে ইমু বলেন, ‘নায়িকা মানে কারো গৃহপালিত পশু নই যে দড়ি ধরে টান দিলেই সেদিকে ছুটতে হবে। আমি কারো প্রতি অভিযোগ করছি না। তবে এটুকু বলব, ভালো পরিবারের ছেলেমেয়েরা যদি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে কাজ করতে না পারে, তাহলে আমাদের চলচ্চিত্র কোনোদিনই উঠে দাঁড়াতে পারবে না।’ ‘জানে মন তুই জীবন’ নামের ওই ছবিটি সন্ধানী কথাচিত্রের ব্যানারে তৈরি হওয়ার কথা ছিল।
অনৈতিক প্রস্তাব দেওয়ার বিষয়টি নায়িকারা এভাবেই তুলে ধরেন এনটিভি অনলাইনের কাছে। যদিও অভিযোগ যাঁদের বিরুদ্ধে তাঁরা বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। প্রথমে নায়িকা হিসেবে নেওয়া হলেও পরে নানা অজুহাতে বাদ দেওয়ার কারণ হিসেবে নায়িকারা বলছেন অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়া। চলচ্চিত্র অঙ্গনে মোটামুটি পরিচিত এমন নায়িকাদের সঙ্গেই এমন ঘটনা ঘটছে, আর যাঁরা একেবারেই নতুন তাঁদের ভাগ্যে কী ঘটছে তাহলে?
প্রতারণার হাত থেকে রেহাই পাওয়ার তাহলে উপায় কী? এর প্রতিকার জানতে চাইলে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমিত হাসান বলেন, ‘আমাদের অগোচরে ঘটনাগুলো ঘটছে। কেউ আমাদের এই অভিযোগগুলো করছে না। আমাদের কাছে যদি শিল্পীরা অনৈতিক প্রস্তাবের অভিযোগ করেন তবে আমরা ব্যবস্থা নেব। আর যাঁরা নতুন কাজ করছেন, তাঁরা যদি আমাদের এখানে এসে এতটুকু জেনে যান, তিনি যে ছবিটাতে কাজের জন্য কথা বলছেন, সেটা আসলে কে বা কারা করছেন, তাঁদের ছবি করার পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে কি না। সে ক্ষেত্রে আমরা তাঁদের সহযোগিতা করতে পারি।’