থাইল্যান্ড-কাম্বোডিয়া সংঘাত : মালয়েশিয়ায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা শুরু

চলমান সীমান্ত সংঘাত বন্ধে মালয়েশিয়ায় যুদ্ধবিরতি আলোচনায় বসেছেন থাইল্যান্ড ও কাম্বোডিয়ার নেতারা। সংঘাত ইতোমধ্যেই পঞ্চম দিনে পা দিয়েছে এবং এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৩৫ জন নিহত এবং উভয় দেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ২ লাখ ৭০ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। খবর আল জাজিরার।
সোমবার (২৮ জুলাই) মালয়েশিয়ার প্রশাসনিক রাজধানী পুত্রজায়ায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সরকারি বাসভবনে এই উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আনোয়ার বর্তমানে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় আঞ্চলিক সংস্থা আসিয়ান-এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
আলোচনায় থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম উইচায়াচাই এবং কাম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত উপস্থিত আছেন। বৈঠকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের রাষ্ট্রদূতারাও অংশ নিয়েছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
সোমবার এক্সে (সাবেক টুইটার) হুন মানেত বলেন, "এই বৈঠকের উদ্দেশ্য হলো থাইল্যান্ডের সঙ্গে চলমান সংঘাতে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠা।"
তবে ব্যাংকক ছাড়ার আগে থাই প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম সাংবাদিকদের বলেন, "আমরা মনে করি না কাম্বোডিয়া আন্তরিকভাবে সমঝোতার চেষ্টা করছে। তারা যদি সত্যিই আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে আগ্রহী হয়, তাহলে সেটা বৈঠকে স্পষ্ট হতে হবে।"
এদিকে বৈঠকের কয়েক ঘণ্টা আগেই সীমান্তের বিভিন্ন স্থানে আবারও সংঘর্ষ শুরু হয়। থাইল্যান্ডের সামরিক মুখপাত্র কর্নেল রিচা সুকসুয়ানন জানান, সোমবার ভোরে কাম্বোডিয়ার ওডার মিনচেই প্রদেশের সামরং এলাকায় গুলির শব্দ শোনা যায়।
রোববার (২৭ জুলাই) থাইল্যান্ড দাবি করে, কাম্বোডিয়ার ছোড়া একটি রকেট হামলায় তাদের সিসাকেত প্রদেশে একজন নিহত এবং আরেকজন আহত হয়েছেন। থাই সেনাবাহিনী আরও জানায়, কাম্বোডিয়ার স্নাইপাররা একটি বিরোধপূর্ণ মন্দিরে অবস্থান নিয়েছে এবং সীমান্তে সেনা সংখ্যা বাড়িয়ে একের পর এক রকেট হামলা চালাচ্ছে।
অন্যদিকে, কাম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মালি সোচেতা অভিযোগ করেন, থাইল্যান্ড "অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করছে" এবং ভারী অস্ত্র দিয়ে কাম্বোডিয়ার ভেতরে গোলাবর্ষণ চালাচ্ছে।
তিনি আরও দাবি করেন, সোমবার ভোরে থাই বিমান থেকে ধোঁয়ার বোমা ফেলা হয়েছে এবং প্রাচীন তা মুয়েন থম ও তা কোয়াই মন্দিরের কাছে ভারী অস্ত্র দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে। তবে তিনি বলেন, কাম্বোডিয়ার সেনারা এসব হামলা সফলভাবে প্রতিহত করেছে।
আল জাজিরার সাংবাদিক টনি চেং থাইল্যান্ডের সুরিন সীমান্ত থেকে জানান, আলোচনার বিষয়টি প্রথমে প্রকাশ করতে মালয়েশিয়ান কর্তৃপক্ষ দ্বিধাগ্রস্ত ছিল। গত সপ্তাহে আনোয়ার ইব্রাহিমের পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতি নিয়ে ঘোষণা আসলেও থাইল্যান্ড তা দ্রুত অস্বীকার করে।

তবে ক্রমবর্ধমান হতাহতের সংখ্যা ও বাস্তুচ্যুত মানুষের দুর্দশা এই সংকট নিরসনে দুই নেতার জন্য একটি চাপ সৃষ্টি করতে পারে বলে বিশ্লেষকদের মত।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও রোববার বলেন, "আমাদের প্রতিনিধিরা মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন এবং শান্তি আলোচনায় সহায়তা করছেন।" চীনও উভয় পক্ষকে শান্ত থাকতে এবং শিগগিরই যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর আহ্বান জানিয়েছে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গুও জিয়াকুন বলেন, "আমরা আশা করি উভয় দেশ তাদের জনগণের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে সংযম দেখাবে, আগ্রাসন থেকে বিরত থাকবে এবং শিগগিরই সংঘাতের অবসান ঘটাবে।"