কলকাতায় বামদের মিছিলে পুলিশের লাঠিপেটা

নবান্নের পর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার রাস্তায় বাম দলের মিছিলে আবার লাঠিপেটা করল পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বামদের লালবাজার অভিযানকে ঘিরে রক্তাক্ত হলো কলকাতার রাজপথ। পুলিশের সঙ্গে বাম নেতা-কর্মীদের ধস্তাধস্তি আর পুলিশের বেপরোয়া লাঠির আঘাতে জখম হলেন বহু বাম নেতা-কর্মী। পুলিশের লাঠির আঘাতে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির বর্ষীয়ান নেতা দীপক দাশগুপ্তের মাথা ফেটে যায় বলে অভিযোগ করেছে দলটি।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ সন্ধ্যায় কলকাতার লালবাজার অভিযানে শামিল হন রাজ্যের বাম নেতা-কর্মীরা। কলকাতার সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার, ধর্মতলার ওয়াই চ্যানেল, কলেজ স্কোয়ার থেকে বামদের মিছিল বের হয়ে তা এগিয়ে যায় লালবাজারের দিকে। রাজপথে একের পর এক ব্যারিকেড ভেঙে মিছিল লালবাজারের দিকে এগোতেই বিশাল পুলিশ বাহিনী আটকানোর চেষ্টা করে বামদের মিছিল।
বাম মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন রাজ্যের বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র, সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির বর্ষীয়ান নেতা দীপক দাশগুপ্ত, সাংসদ মহম্মদ সেলিমসহ প্রথম সারির নেতারা।
সিপিএমের কর্মী উজ্জয়ন চক্রবর্তী জানালেন, মিছিলটি গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউয়ের কাছে আসতেই বাধা দেয় পুলিশ। সেই সময় পুলিশের বাধা অতিক্রম করে লালবাজারের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন বাম নেতা-কর্মীরা। শুরু হয় ধস্তাধস্তি। পুলিশের পাঁচ স্তরীয় নিরাপত্তাব্যবস্থার তৃতীয় স্তর ভাঙার পরেই রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় গোটা ডালোহৌসি চত্বর। পুলিশের পাঁচ স্তরবিশিষ্ট নিরাপত্তাব্যবস্থার প্রথম স্তরে ছিল মহিলা পুলিশ বাহিনী, দ্বিতীয় স্তরে ঢাল বাহিনী, তৃতীয় স্তরে লাঠি বাহিনী। এরপরেই ছিল লোহা ও ফাইবারের ব্যারিকেড ও জলকামান।
অভিযোগ উঠেছে, মিছিলের মধ্যে থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট, পচা ডিম ছোড়া হয়। এরপর মিছিল লালবাজারের কাছে বিপিন বিহারি গাঙ্গুলি স্ট্রিটের কাছে আসতেই শুরু হয়ে যায় পুলিশের লাঠিপেটা। পুলিশের বেপরোয়া লাঠির আঘাতে কার্যত ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় বামদের সংগঠিত মিছিল।
মিছিলে অংশ নেওয়া বাম নেতা-কর্মীদের রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মার শুরু করে পুলিশ। মিছিলে থাকা বাম নেতা-কর্মীদের বিপিন বিহারি গাঙ্গুলি স্টিট থেকে মারতে মারতে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ পর্যন্ত ধাওয়া করে পুলিশ। পুলিশের লাঠির আঘাতে গুরুতর জখম হন সিপিএমের বর্ষীয়ান নেতা দীপক দাশগুপ্ত। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুও রাজপথের মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়েন।
এর আগে গত ২৭ আগস্ট বামদের নবান্ন অভিযানেও ব্যাপক লাঠিপেটা করেছিল পুলিশ। সেই সময়েও পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ বাধে বাম নেতা কর্মীদের। চলে পুলিশ ও মিছিলকারীদের মধ্যে তুমুল ইটবৃষ্টি।
কার্যত রাজ্যে রাজনৈতিকভাবে পায়ের তলার জমি সরে যাওয়ায় এখন একের পর এক আন্দোলনের কর্মসূচি নিচ্ছে বামফ্রন্ট। রাস্তায় নেমে আন্দোলনের সেই পুরোনো নীতিকেই এখন ফিরিয়ে আনতে চাইছেন রাজ্যের বাম নেতারা। সেই মতোই এদিন পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে লাগাতার সন্ত্রাস এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিসহ একাধিক ইস্যুতে এই লালবাজার অভিযানের ডাক দেয় বামফ্রন্ট।