বিশ্ব হার্ট দিবসে মাতৃভূমি হার্ট কেয়ারের উদ্যোগে আলোচনা সভা

বিশ্ব হার্ট দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশের অন্যতম ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান মাতৃভূমি গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান মাতৃভূমি হার্ট কেয়ার আলোচনা সভা ও ম্যাগাজিন উদ্বোধন অনুস্থান আয়োজন করেছে।
আজ সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সফিকুল কবীর মিলনায়তনে মাতৃভূমি হার্ট কেয়ার লিমিটেডের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এ বি এম হানিফ মাস্টারের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে মাতৃভূমি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. মাইনউদ্দিন মিয়া বলেন, আমাদের হাসপাতাল মূলত সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। মানব দেহের সবচে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হৃদপিণ্ড, অর্থাৎ হার্ট। এটি বিকল হলে মানুষ বাঁচে না। সাধারণ মানুষকে সেবা দেওয়ার মানসিকতা থেকে আমরা এ হাসপাতাল গড়ে তুলেছি। ইতোমধ্যে প্রাকৃতিক বাইপাস পদ্ধতির এই চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়মিত রোগীরা সেবা পাচ্ছে। বিশ্ব হার্ট দিবস উপলক্ষে আজকের এই আলোচনা সভায় সরকারকে বলতে চাই, প্রত্যেকটি সরকারি হাসপাতালে আমাদের মতো এ ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি প্রচলন করে সাধারণ মানুষকে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি থেকে মুক্তি দেওয়া সম্ভব।
সভায় প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন মাতৃভূমি হার্ট কেয়ার লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ডা. এম এম রহমান, বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হিসেবে বক্তব্য দেন ডক্টরস ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আশরাফ আলী, ইবনে সিনাহ হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ও হার্ট বিশেষজ্ঞ ডা. মো. মফিজুল ইসলাম, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিভাগের সাবেক পরিচালক ড. আব্দুল হান্নান, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল সাবেক সিইও ডা. আমির হোসেন, হরমোন ও মেটাবলিজম বিশেষজ্ঞ ডা. সাকিরা নোভা।
বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা বলেন, প্রতি বছর বাংলাদেশে প্রায় তিন লক্ষাধিক ব্যক্তি হার্ট অ্যাটাকে মারা যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে। এজন্য সরকার ও ডাক্তারদের সমন্বিত প্রয়াস দরকার। কারণ মানবদেহের সবচেয়ে শক্তিশালী ও অক্লান্ত পরিশ্রমী অঙ্গ হার্ট। প্রতিদিন প্রায় এক লাখবার এটি স্পন্দিত হয়ে শরীরের প্রতিটি কোষে অক্সিজেন ও পুষ্টি পৌঁছে দেয়। অথচ আধুনিক জীবনের ব্যস্ততা, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, ধূমপান, মানসিক চাপ ও শারীরিক পরিশ্রমের অভাব আমাদের এই মহামূল্যবান অঙ্গটিকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছি।
প্রতি বছর ২৯ সেপ্টেম্বর বিশ্বব্যাপী পালিত হয় বিশ্ব হার্ট দিবস। এর উদ্দেশ্য— হৃদরোগ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা, সুস্থ জীবনযাপনের গুরুত্ব তুলে ধরা এবং মৃত্যুহার হ্রাসে মানুষকে অনুপ্রাণিত করা। এ বছরের প্রতিপাদ্য—‘প্রতিটি হৃদস্পন্দনের যত্ন নিন’।

আলোচনা সভায় জানানো হয়, মানুষের প্রতি সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মাতৃভূমি হার্ট কেয়ার লি.। প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বাস করে, হার্টের রোগের চিকিৎসায় সর্বদা অস্ত্রোপচারই একমাত্র সমাধান নয়। মাতৃভূমি হার্ট কেয়ার কাজ করছে আধুনিক ও প্রমাণিত দুটি বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতিতে—ইইসিপি : নন-সার্জিকাল চিকিৎসা, যা রক্তসঞ্চালন বাড়িয়ে হার্ট ব্লকেজ ও এনজাইনা কমায়। অপরটি হলো বিসিটি : রক্ত পরিশোধনের মাধ্যমে শরীরকে নতুন সজীবতা দেয় এবং হৃদপিণ্ডকে শক্তিশালী করে।
অনুষ্ঠানে মাতৃভূমি হার্ট কেয়ারের পক্ষ থেকে হার্ট এট্যাকের ঝুঁকি কমাতে সরকারের কাছে কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরা হলো। সেগুলো হলো—
১. দেশের সব গণমাধ্যমে বাধ্যতামূলক হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে করণীয় সম্পর্কে নিয়মিত প্রচার করা।
২. সুষম খাদ্য গ্রহণ, নিয়মিত ব্যায়াম, ধূমপানে নিরুৎসাহিত করতে সরকারি-বেসরকারি সব অফিসে স্বাস্থ্য কর্নার চালু করা।
৩. উপজেলা ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে আরও উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা এবং জরুরি স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের তত্ত্বাবধানে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালু করা।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব প্রফেসর ড. মো. শহিদুল ইসলাম, আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেনিথ লাইফ ইনস্যুরেন্সের সিইও মো. নুরুজ্জামান মিয়া, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. শাহরুখ আদনান। এ ছাড়া কোম্পানির পরিচালক, উপদেষ্টা, অতিরিক্ত পরিচালক ও অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।