‘চিকিৎসা ব্যয়বহুল, সচেতনতা কমাতে পারে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি’
হৃদরোগ প্রতিরোধ ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে আজ সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) পালিত হচ্ছে বিশ্ব হার্ট দিবস। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হৃদরোগ প্রতিরোধ করতে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা দরকার। সমস্যার আগেই যদি সচেতন হওয়া যায়, তাহলে অনেকাংশেই ঝুঁকি কমানো সম্ভব। কারণ হার্ট অ্যাটাক হওয়ার পর চিকিৎসা অনেক ব্যয়বহুল ও ঝুঁকিপূর্ণ।
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মহসিন আহমদ এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে বিশেষ সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, হার্টের সমস্যা প্রতিরোধ করতে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনুন। সমস্যা পর আর কোনোভাবে শতভাগ সুস্থ হ্ওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন এনটিভি অনলাইনের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ফখরুল ইসলাম শাহীন।
অধ্যাপক ডা. মহসিন আহমদ বলেন, আমাদের খাদ্যাভ্যাস ও লাইফস্টাইল মূল সমস্যা। আমরা প্রচুর কার্বোহাইড্রেট ও চর্বি খাই, কিন্তু ব্যায়াম বা হাঁটার অভ্যাস নেই। কাজের চাপ ও অনিয়মিত ঘুমের কারণে শরীরে লিপিড ও কোলেস্টেরল জমে রক্তনালী ব্লক হয়ে যায়। যদি আমরা নিয়মিত হাঁটতাম, এই লিপিড বার্ন হতো এবং হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা কমে যেত।
ডা. মহসিন আহমদ বলেন, হৃদরোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে জরুরি হলো লাইফস্টাইল পরিবর্তন ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস। খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন মানে হলো সাদা খাবার, যেমন ভাত, চিনি, পনির, দুধের সর—এসব গ্রহণ কমাতে হবে। লাল বা আঁশযুক্ত খাবার ও শাকসবজি বেশি খেতে হবে। মাংস খাওয়ার ক্ষেত্রে ‘যত পা, তত না’ নীতি মানতে হবে—যেমন গরুর মাংস কম, মুরগি বেশি। তবে মাছ তুলনামূলক বেশি খাওয়া যেতে পারে।
ডা. মহসিন পরামর্শ দিয়ে বলেন, হাঁটা ও ব্যায়াম প্রসঙ্গে সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট হাঁটা জরুরি (প্রতিদিন ৩০ মিনিট করে পাঁচ দিন)। সময় না পেলে কর্মস্থলে ছোট ছোট হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলুন। লিফটের বদলে সিঁড়ি ব্যবহার এবং অফিসের ছোট কাজ নিজে করুন।
ডা. মহসিন আহমদ বলেন, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন। ৩০ বছর বয়সের পরে প্রতি বছর কোলেস্টেরল ও ডায়াবেটিস পরীক্ষা করাতে হবে। ধূমপান, অ্যালকোহল ও তামাকজাত দ্রব্য সম্পূর্ণভাবে পরিহার করতে হবে।
চাকরিজীবী, সাংবাদিক, পুলিশ বা চিকিৎসকদের জন্য বিশেষ পরামর্শ হিসেবে অধ্যাপক ডা. মহসিন আহমদ বলেন, ‘ঢাকায় খেলার মাঠ নেই, গ্রামের মাঠও দখল হয়ে যাচ্ছে। তাই বাসা বা কর্মস্থলে হাঁটার সুযোগ খুঁজে নিতে হবে। প্রতিটি কলোনিতে কমপক্ষে দুটি খেলার মাঠ থাকা উচিত। মাঠ ছাড়া স্কুলের অনুমতি দেওয়া যাবে না। প্রতি সপ্তাহে খেলাধুলার আয়োজন বাধ্যতামূলক করতে হবে।’
ডা. মহসিন আহমদ বলেন, ‘আমাদের তরুণ সমাজ ধূমপান ও মাদকে জড়িয়ে পড়ছে। সরকার, এনজিও ও সামাজিক সংগঠনগুলোকে একযোগে ধূমপান ও মাদকবিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এখনই যদি আমরা সচেতন না হই, হৃদরোগ ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।’
সর্বশেষে অধ্যাপক মহসিন আহমদ বলেন, ‘হার্ট অ্যাটাক হওয়ার পর চিকিৎসা অনেক ব্যয়বহুল ও ঝুঁকিপূর্ণ। তাই হার্ট অ্যাটাক হওয়ার আগেই সচেতন থাকতে হবে। স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাস, ইতিবাচক লাইফস্টাইল ও সার্বক্ষণিক স্বাস্থ্য সচেতনতাই পারে এই রোগের লাগাম টেনে ধরতে।’