বুড়ো আঙুল কি দুর্বল লাগে?

মাঝে মাঝে কি বুড়ো আঙুল দুর্বল লাগে বা শক্তি কমে যায়? পাশাপাশি তর্জনি ও মধ্যমার অনুভূতি কমে যায়? রোগটির নাম কার্পেল টানেল সিনড্রম।
এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৩৪৮তম পর্বে রোগটি নিয়ে কথা বলেছেন ডা. মো. মহিউদ্দীন। বর্তমানে তিনি হ্যান্ড অ্যান্ড মাইক্রোসার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : কার্পেল টানেল সিনড্রম রোগটি কী?
উত্তর : কার্পেল টানেল সিনড্রম খুব প্রচলিত একটি রোগ। এটি সাধাণত মা-বোনদের বেশি হয়। তবে এটি এত প্রচলিত যে সম্পূর্ণ জনসংখ্যার ১০ ভাগ লোকের হতে পারে। আমাদের হাতের তিনটি স্নায়ু রয়েছে, স্নায়ু দিয়ে অনুভূতি বুঝতে পারি। মেডিয়ান নার্ভ, আলনার রেডিয়ান নার্ভ। মেডিয়ান নার্ভ হাতের সামনে দিয়ে যায়। এটি কমপ্রেসড (চাপ হলে) হলে কার্পেল টানেল সিনড্রম হয়।
এটি হলে হাতে ঠিকমতো অনুভূতি পাওয়া যায় না। ঝিন ঝিন, শিন শিন – এ রকম অনুভূতি হয়। আরেকটু বেশি হলে অনেক সময় হাতের দুর্বলতা আসে। বিশেষ করে থাম্ব দুর্বল হতে শুরু করে।
আমাদের বুড়ো আঙুলের শক্তি কমে যায়। পাশাপাশি তর্জনি ও মধ্যমার অনুভূতি কমে যায়। সেই ক্ষেত্রে হাত সব সময় ভোঁতা ভোঁতা ও ভারী ভারী মনে হয়। একধরনের অস্বস্তি সব সময় থাকে। দেখা গেল, চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়াচ্ছে, হাত থেকে নিজের অজান্তে চিরুনি পড়ে গেল বা হাত থেকে একটি গ্লাস পড়ে ভেঙে গেল। বা হয়তো আগুনের পাশে আছে সে টেরই পাচ্ছে না, হাত পুড়ে যাচ্ছে।
প্রশ্ন : এই সমস্যায় কারা বেশি আক্রান্ত হন?
উত্তর : প্রধানত নারীরা বেশি ঝুঁকিপ্রবণ। যাঁরা মোটা বেশি, তাঁদের এই সমস্যা হতে পারে। ডায়াবেটিস, রিউমাটয়েড আরথ্রাইটিস, গর্ভাবস্থায় বেশি হতে পারে। এ ছাড়া হাইপোথাইরয়েডিজমে হতে পারে।
প্রশ্ন : এই সমস্যায় সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করালে কী ক্ষতি হতে পারে?
উত্তর : সময়মতো চিকিৎসা না করালে দিনে দিনে রোগটি বাড়তে থাকে। যে সমস্যাগুলো কথা বললাম, এগুলো ধীরে ধীরে বাড়বে। পরে পেশি দুর্বল হতে শুরু করলে শেষ পর্যন্ত এটি প্যারালাইসিস পর্যন্ত হতে পারে।
প্যারালাইসিস হলে বুড়ো আঙুল আর কার্যকর থাকবে না। এটি সম্পূর্ণ প্যারালাইসিস না হলেও কিছু অংশ প্যারালাইসিস হয়ে যায়। বুড়ো আঙুল হাতের ৪০ ভাগ কাজ একাই করে। তাই দেখা যায়, এতে হাত আর সেই রকম কর্মক্ষম থাকবে না।
প্রশ্ন : কী ধরনের চিকিৎসা দরকার এই ক্ষেত্রে?
উত্তর : এতে আমরা দুই ধরনের চিকিৎসা দিই। যখন প্রাথমিকভাবে একটি রোগী আসে, তখন ওষুধ দিই। কিছু ওষুধ আছে যেগুলো খেলে রোগী ঠিক হয়ে যায়।
প্রশ্ন : যদি ভালো না হয়, আরো একটু বেশি হয়, তখন?
উত্তর : আরো একটু বেশি হলে, আমরা নাইট স্প্লিন্ট ব্যবহার করি। এটা রাতে ঘুমের সময় হাতে লাগালে ভালোর দিকে নিয়ে যেতে পারে।
প্রশ্ন : এরপরও ভালো না হলে কী করেন?
উত্তর : এরপর ভালো না হলে আমরা কারণ খুঁজি। যেমন হাইপোথাইরয়েডিজম যদি কারণ হয়, তখন এর চিকিৎসা করলে রোগটি ভালো হয়ে যায়। এরপরও ভালো না হলে কার্পেল টানেলের ভেতর ইনজেকশন দিতে পারি। এটা স্টেরয়েড জাতীয় ইনজেকশন। এটি দিলে সম্যাটা ভালো হয়ে যায়।
প্রশ্ন : সমস্ত ওষুধীয় ব্যবস্থাপনা যদি ফেল করে, তাহলে কী সার্জিক্যাল পদ্ধতি রয়েছে?
উত্তর : হ্যাঁ রয়েছে। যখন এগুলো ফেল করবে, তখন আমরা সার্জারি করি। সার্জারিটা খুব বড় নয়।