ফেসবুকে ঝড়
শাকিবে ক্ষোভ, অপুকে সমবেদনা পাঠকের

শাকিব খান ও অপু বিশ্বাসের বিয়ে ও সন্তানকে নিয়ে শুধু গণমাধ্যম নয়, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও ঝড় উঠেছে গতকাল থেকে। ফেসবুকে এনটিভির অফিশিয়াল পেজে শাকিব ও অপু সম্পর্কিত খবরগুলোতে দেদার মন্তব্য করছেন পাঠকরা। তবে বেশির ভাগ পাঠক শাকিবের প্রতি ক্ষোভ জানিয়েছেন আর অপুর প্রতি জানিয়েছেন সমবেদনা। তারই কিছু নমুনা এখানে দেওয়া হচ্ছে।
নাজমুল হক অপু নামের এক পাঠক মন্তব্য করেন, “Dear শাকিব খান, এটিএম বুথে কার্ড ঢুকাইসো! পাসওয়ার্ড চাপসো! টাকাও বের হইসে! দাবি করছো সেই টাকার মালিকও তুমি। কিন্তু অ্যাকাউন্ট তোমার না; সেটা কী করে হয়। আজব ক্যারেক্টার মাইরি “প্রশ্ন : Hello dear বালিকা, এটিএম বুথ থেকে কেন তোমরা এত expart? জাতি চানতে চায়?”মায়া আকতার নামের এক পাঠক বলেন, “অপু বিশ্বাস নামের অভিনেত্রীটি আজ (গতকাল সোমবার) বিকেলে জানিয়েছেন, তিনি একজন স্বীকৃতিহীন মা এবং শাকিব খান তাঁর সন্তানের পিতা। অপু বিশ্বাস বলছিলেন তাঁর গর্ভবতী অবস্থায় একা হাসপাতালে নিজে বন্ডে সই করে অপারেশন থিয়েটারে ঢোকার কথা, যেটা সম্ভবত একজন মেয়ের জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে নিষ্ঠুর মুহূর্ত। আমি বিস্ময়ে থ হয়ে যাইনি, কেবল ভাবলাম- সেই বস্তি থেকে শুরু করে ওপরতলা, সমাজের মেয়েদের দশা ওই একই! জিম্মি হিসেবে জীবনযাপন করা। এই জিম্মি হওয়ার প্রধান উপকরণ হচ্ছে সন্তান। তুমি বাংলা সিনেমাকে টেনে নিয়ে যাও, তুমি খুব ভালো কাজ করো, তুমি ডিরেক্টর প্রডিউসারদের কোটি কোটি টাকার মুখ দেখাও, কিন্তু আদতে তুমি একজন মেয়ে। যাকে হেরে যেতে হয় সমাজের কাছে, প্রতারক পুরুষের কথার মারপ্যাঁচের কাছে! আমি অপু বিশ্বাসের প্রশংসাই করব। কারণ আট বছর ধরে একটা বিষয় গোপন রাখা, সহ্য করে যাওয়া, প্রতিনিয়ত নানা মানসিক যন্ত্রণা তিনি একা সামলেছেন। শেষ মুহূর্তে যখন সহ্য করার মাত্রা অসহ্য হয়ে গেছে, সেই মুহূর্তে তিনি পারতেন আত্মহত্যা করে সান্ত্বনা কুড়াতেন। তিনি এসবের কিছুই করেননি। ক্যামেরার সামনে এসে সব বলেছেন, কেঁদেছেন এবং চেয়েছেন- সবাই সব কিছু জানুক। পুরুষ হওয়া সম্ভবত খুব আনন্দের! নিজের সন্তানের জন্য ক্যারিয়ার যদি ধ্বংস হয়ে যায়, তবে সেই ক্যারিয়ারের কোনো দরকারই নেই। একটি মেয়েকে কেবল ঠকিয়ে যাওয়া যায় ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে বলে। অথচ মেয়েদের কোনো ক্যারিয়ার নেই। কারণ তারা জিম্মি। সন্তানের বাবা হওয়া যায়, কিন্তু স্বীকৃতি দেওয়া যায় না! সেই স্বীকৃতিহীনতাকে পুঁজি করে ক্যারিয়ারে রং লাগানো যায়। সন্তানের মা হলে একই সঙ্গে বাবাও হওয়া লাগে, যখন একা একা অপারেশন থিয়েটারে ঢুকেছেন তখনই বুঝিয়ে দিয়েছেন এই সমাজকে! অভিনন্দন অপু বিশ্বাস, আপনি পেরেছেন! অন্য নায়িকাদের মতো কেবল কেঁদে হেরে যাননি, হেরে গিয়ে জিতে গিয়েছেন!
কাজী মাহমুদ নামের আরেক পাঠক মন্তব্য করেন, “২০ বছর পরে... শাকিব খানের পোলায় একটা সিনেমা করবে, নাম হবে ‘মায়ের অধিকার’... নায়ক থাকবে পোলায়, ভিলেন শাকিব খান... ডায়ালগ... ছেলে : আজ থেকে ২০ বছর আগে তুমি আমার মাকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছিলে... আমাকে বাবা ডাক থেকে বঞ্চিত করেছিলে আমি তোমাকে ক্ষমা করব না খান..... আজ তোমার একদিন তো আমার একদিন ওইইইই ডিশুম্যাঁএএএএ..... অপু বিশ্বাস : না বাবা, ও কথা বলিস না সে শত হলেও তোর বাবা... আমার সোয়ামি, তার রক্ত তোর শরীরে, ক্ষমা কইরা দে.. দর্শকের চোখে আনন্দের পানি... সিনেমা শেষ... — feeling funny.”
বিশ্বজিৎ দাস নামের এক পাঠক লেখেন, ‘তাহলে এবার বুবলীর পিছু বাদ দিয়ে আব্রাহাম জয়কে নিয়ে অপুর সংসার সাজাও মিঃ মাসুদ রানা ওরফে শাকিব খান।’
নায়েম আলী নামের এক পাঠক লেখেন, “শাকিব বলছে বাচ্চা আমার But বউ না! তাইলে বাচ্চা কি Google থেকে Download করছে?”
কাজী মাছুমা সুলতানা নামের এক পাঠক মন্তব্য করেন, “কাউকে মিস করলে যদি তার কাছে Notification যেত তাহলে অভিমানের আড়ালে প্রকাশিত, ভালোবাসাও ধরা পড়ে যেত ...”
সুলতানা জিথি লেখেন, ‘শাকিব খান থেকে এসব আশা করিনি। বাচ্চাটা কোলে নিয়ে অপু বিশ্বাস যেভাবে কাঁদছিলেন, সত্যিই খুব খারাপ লাগছিল। বাচ্চাটা নিষ্পাপ অপলক সব শুনছিল কিন্তু কিছুই বুঝতেছিল না। সন্তান আর মাকে এভাবে দূরে সরিয়ে দেওয়া, এটা ভালোবাসার নিকৃষ্টতম ফল। আসলেই সুখ জিনিসটা ভাগ্যের ব্যাপার। দোয়া করি, অপু বিশ্বাস বিশেষ করে বাচ্চাটা যেন তার বাবা-মায়ের সুখী সংসারে বড় হতে পারে এবং শাকিব খান ফিরে আসুক তার পরিবারে।’
জয়ন্ত বিশ্বাস লেখেন, ‘অবশেষে শাকিব খান কলঙ্কমুক্ত হলো।’
নাসির আহমেদ নামের এক পাঠক লেখেন, ‘সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে লাইভে যাওয়া ছাড়া উপায় কী! অপু বিশ্বাসও তাই করেছেন। ঘি উঠেছেও। নিউজ টুয়েন্টি ফোরে যখন অপু বিশ্বাস লাইভে ছিলেন, শাকিব খান তখন জিমে। সেখান থেকেই তিনি প্রথম আলোকে ফোন করে ঘটনা স্বীকার করে নেন। তবে স্বীকারোক্তির ভাষাটা আমার কাছে জঘন্য মনে হয়েছে। শাকিব খানের বক্তব্য অনুযায়ী, ‘ব্যক্তিগত জীবন সামনে আনতে চাইনি। এখন সে (অপু বিশ্বাস) এনেছে। তার সব চাহিদা পূরণ করেছি। যখন বলেছে টাকা দিয়েছি।’ এটুকু পড়ার সময় আমি মনে মনে বলেছি, What the hell! কী কয় এই লোক? বিয়ে করে এত বছর লুকিয়ে রাখা, স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়া (যেখানে স্ত্রী নিজেও ইন্ডাস্ট্রির শীর্ষ পর্যায়ের নায়িকা), স্ত্রী (যিনি নায়িকাও বটে) অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর তাঁকে আড়ালে চলে যেতে বলা, (তাঁর জীবন ক্যারিয়ার এসব কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে!) এগুলাকে ব্যক্তিগত জীবন সামনে না আনা বলে? বিয়ে, স্ত্রী, সন্তান, এগুলো ব্যক্তিগত জীবনের কোন অংশ যেগুলো সামনে না আনার মতো? স্ত্রী নিজেই একজন সেলিব্রিটি এবং ইন্ডাস্ট্রির গুরুত্বপূর্ণ নাম সে কথা বাদ দিলাম। এগুলো সামনে না আনাকে ব্যক্তিগত জীবন সামনে না আনা বলে? এগুলো সামনে না আনা কোন ধরনের সুস্থ চর্চা? এ ক্ষেত্রে সমস্যাটা কী ছিল? কেন অপু বিশ্বাস পাবলিকলি স্ত্রীর মর্যাদা পেতে পারেন না? নায়ক শাকিব খান বিয়ে করেছেন, তা জানলে দেশ ও জাতির সমস্যা কোথায়? তাঁর সমস্যাটা কী তবে? এই ঘটনা সম্পর্কে ‘ব্যক্তিগত জীবন সামনে আনতে চাইনি’, এই কথা বলতে কি ভীষণ নির্লজ্জ হওয়া লাগে! শাকিব খান গোয়ার্তুমি এবং নির্লজ্জতার সীমা ছাড়িয়েছেন আরো। তিনি নাকি সন্তানের দায়িত্ব নেবেন, কিন্তু অপুর দায়িত্ব নেবেন না। কারণ হলো, অপু নাকি মিডিয়ায় এগুলো বলে তাঁকে অসম্মান করেছেন! হায়রে পুরুষের সম্মান! একজন নারীকে নয় বছর যাবৎ বিয়ে করার পরও স্বীকৃতি না দেওয়া, এমনকি অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় তাঁকে আড়ালে চলে যেতে বলা, এতদিন পর্যন্ত সন্তানের স্বীকৃতিটাও না দেওয়া, এগুলো কোনো নারীকে অসম্মানের পর্যায়ে পড়ে না জনাব ‘নাম্বার ওয়ান’? অপু আজকে না বললে আপনি ঠিক কবে নাগাদ তাকে ‘সম্মান’ দিতেন? ততদিন আপনার অপু সম্মান কোলে করে বসে থাকত, এতদিন যেমনটা ছিল? নির্লজ্জতার একটা সীমা থাকা উচিত! শাকিব খান বিবাহিত, এটা মানুষজন জানাটা তাঁর জন্য অসম্মান কেন কে জানে! সম্ভবত তিনি তাঁর পুরুষ পরিচয়ে খুশি না! আমি এ ছাড়া আর কোনো কারণ ভাবতে পারছি না বলে আন্তরিকভাবে দুঃখিত! শাকিব খান সবচেয়ে যে বাজে কথাটা বলেছে, সেটা এমন ‘তাঁর সব চাহিদা পূরণ করেছি। যখন বলেছে টাকা দিয়েছি।’ জনাব নাম্বার ওয়ান, আপনার রক্ষিতা আর স্ত্রীর মধ্যে পার্থক্য জানা না থাকতে পারে। আমাদের আছে। স্ত্রীর টাকা পয়সা ছাড়া আরো অনেক চাহিদা থাকে, অধিকার থাকে। টাকা দিয়ে আপনি তাকে উদ্ধার করেননি। ‘অপুর দায়িত্ব নেব না’ বরং এই কথা বলে আপনি সরাসরি আইনকানুনের প্রতি অশ্রদ্ধা জানিয়েছেন। এগুলো গ্রামের অশিক্ষিত ভ্যানচালকেরা বলে থাকে। এই জঘন্য পুরুষতান্ত্রিক কীট আমার দেশের শীর্ষ নায়ক! কী লজ্জার কথা!
মিজানুর রহমান নামের এক পাঠক মন্তব্য করেন, ‘সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে লাইভে যাওয়া ছাড়া উপায় কী! অপু বিশ্বাসও তাই করেছেন।’