ইউক্রেনে কিছু সামরিক সহায়তা বন্ধ করছে যুক্তরাষ্ট্র

রাশিয়ার আক্রমণের বিরুদ্ধে কিয়েভের লড়াইয়ের জন্য বাইডেন প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া ইউক্রেনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রের চালান বন্ধ করে দিচ্ছি ট্রাম্প প্রশাসন। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১ জুলাই) হোয়াইট হাউজের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদেন এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
তিন বছর ধরে চলা এ যুদ্ধে রাশিয়া ইউক্রেনে সবচেয়ে বড় ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও যুদ্ধাস্ত্রসহ অন্যান্য সামরিক সহায়তা সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া কিয়েভের জন্য একটি বড় ধাক্কা।
হোয়াইট হাউসের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আনা কেলি এএফপিকে ইমেইলে জানান, বিশ্বজুড়ে অন্যান্য দেশে সামরিক সহায়তা পর্যালোচনার পর আমেরিকার স্বার্থ রক্ষার্থে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সামরিক সহায়তা কমানো ইঙ্গিত দেয়—মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতিতে পরিবর্তন আসছে। ট্রাম্প রাশিয়া ও ইউক্রেনকে দ্রুত শান্তি আলোচনা শুরুর জন্য চাপ দিয়েছেন। রিপাবলিকানরা গাজায় যুদ্ধবিরতি ও ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা কমাতে বেশি ভূমিকা রাখতে আগ্রহী।
পেন্টাগনের পর্যালোচনায় দেখা গেছে, আগে দেওয়া কিছু অস্ত্রের মজুদ কমে গেছে। তাই কিছু পাঠানো হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মার্কিন কর্মকর্তা পলিটিকোকে এই তথ্য দেন। পলিটিকোই প্রথম এই খবর প্রকাশ করে।
কেলি আরও বলেন, মার্কিন সশস্ত্র বাহিনীর শক্তি নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। ইরানকে জিজ্ঞাসা করলেই বুঝবেন। তিনি সম্প্রতি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলা ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কথা উল্লেখ করেন।
পলিটিকো ও অন্যান্য মার্কিন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, প্যাট্রিয়ট বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ক্ষেপণাস্ত্র, নির্ভুল কামান ও হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্র আটকে রাখা হয়েছে।
গত সপ্তাহে নেদারল্যান্ডসে ন্যাটো সম্মেলনে ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভলোদিমির জেলেনস্কি ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করেন। প্যাট্রিয়ট বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে ট্রাম্পের কাছ থেকে তিনি স্পষ্ট কোনো উত্তর পাননি।
ট্রাম্প বলেছিলেন, আমরা দেখব কিছু পাওয়া যায় কিনা। এগুলো জোগাড় করা খুব কঠিন।
ইউক্রেনের খারকিভ অঞ্চলে রাশিয়ার ড্রোন হামলায় একজন নিহত ও একজন আহত হয়েছে। বুধবার (২ জুলাই) ভোরে খারকিভের গভর্নর এই খবর জানান।
এর আগে মঙ্গলবার রাশিয়ার ইজেভস্ক শহরে ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলায় তিনজন নিহত ও কয়েক ডজন আহত হয়। এই হামলা রাশিয়ার যুদ্ধক্ষেত্র থেকে এক হাজার কিলোমিটার (৬২০ মাইল) দূরে হয়েছিল। এটি রাশিয়ার অভ্যন্তরে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলাগুলোর একটি।
মঙ্গলবার প্রকাশিত এএফপির বিশ্লেষণে দেখা গেছে, জুন মাসে রাশিয়া বিমান হামলা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। তারা হাজার হাজার ড্রোন ছুড়েছে। এতে ইউক্রেনের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও সাধারণ মানুষ আরও চাপের মুখে পড়েছে।
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এসআইপিআরআই) এর এপ্রিলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিরক্ষা খাতে জিডিপির বেশি খরচ করেও ইউক্রেন রাশিয়ার চেয়ে বেশি অস্ত্র ব্যবহার করছে। এসআইপিআরআই জানিয়েছে, ২০২৪ সালে ইউক্রেনের সামরিক ব্যয় ছিল ৬৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার। ইউক্রেন অস্ত্র ও সাহায্যের জন্য ইউরোপ ও মার্কিন মিত্রদের ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল।
রাশিয়ার নেতা ভ্লাদিমির পুতিন এই সাহায্যের জন্য পশ্চিমা দেশগুলোকে দায়ী করেছেন। তিনি মঙ্গলবার ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রনকে বলেন, পশ্চিমারা অনেক বছর ধরে রাশিয়ার নিরাপত্তা স্বার্থকে উপেক্ষা করেছে।
ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট পদের কারণে ইউক্রেনের প্রতি হোয়াইট হাউসের সুর পাল্টে গেছে। ২০২২ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হোয়াইট হাউসে জেলেনস্কিকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন। সেসময় তার প্রশাসন ইউক্রেনের জন্য আরও দুই বিলিয়ন ডলারের অস্ত্রের ঘোষণা দেয়।

এই বছরের শুরুতে জেলেনস্কির ওয়াশিংটন সফরে ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স তাকে ক্যামেরার সামনে অবজ্ঞা করেন। তারা ইউক্রেনীয় নেতার বিরুদ্ধে অকৃতজ্ঞতার অভিযোগ তোলেন।
এএফপির পক্ষ থেকে অস্ত্র পাঠানো বন্ধের কারণ জানতে চাইলে পেন্টাগন সরাসরি কোনো মন্তব্য করেনি। তবে এর প্রধান মুখপাত্র শন পার্নেল বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও সচিব (পিট) হেগসেথের নেতৃত্বে আমেরিকার সামরিক বাহিনী এখন সবচেয়ে প্রস্তুত ও সক্ষম।