ইসরায়েলের সঙ্গে সিরিয়ার সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে কি?

দীর্ঘ ১৪ বছরের গৃহযুদ্ধের পর সিরিয়ার নতুন সরকার প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনে উদ্যোগী হয়েছে। এরই মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে - ইসরায়েলের সঙ্গে সিরিয়ার সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে কি না।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি আলোচনা হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যস্থতায় এই যোগাযোগ স্থাপন হয়েছে বলে জানা গেছে। খবর আল জাজিরার।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সমঝোতা যদি হয়, তা হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হওয়া আব্রাহাম চুক্তির সম্প্রসারণ। ২০২০ সালে আব্রাহাম চুক্তির মাধ্যমে আমিরাত, বাহরাইন, সুদান ও মরক্কো ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছিল।
মে মাসে সৌদি আরব সফরের সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প সিরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আহ্বান জানান।
সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু?
বিশ্লেষক রবিন ইয়াসিন-কাসাব বলছেন, এখনই সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়া অসম্ভব। কারণ সিরিয়া-ইসরায়েলের মধ্যে দীর্ঘকালীন শত্রুতা রয়েছে, বিশেষ করে ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর ইসরায়েল গোলান হাইটস দখল করে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী গিডিয়ন সা’র স্পষ্ট জানিয়েছেন, যে কোনো সমঝোতায় ইসরায়েল গোলান হাইটসের দখল বজায় রাখবে।
এছাড়া সিরিয়ার জনগণ গোলান ইসরায়েলের কাছে ছেড়ে দেওয়ার ঘোর বিরোধী। যদিও কিছু সিরিয়ান কূটনৈতিক সমাধানকে স্বাগত জানাবেন বলেই ধারণা।
সাম্প্রতিক অগ্রগতি কী?
সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা সিরিয়ার সঙ্গে একটি নিরাপত্তা চুক্তির প্রস্তাবে আগ্রহ দেখিয়েছেন। মার্কিন বিশেষ দূত টম ব্যারাকের মধ্যস্থতায় আলোচনা এগোচ্ছে বলেও খবর।
ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের প্রধান নিজেই আলোচনার তদারকি করছেন এবং মার্কিন প্রতিনিধিরাও এই আলোচনায় উপস্থিত রয়েছেন।
লেবাননের দৈনিক আল-আখবার জানায়, সিরিয়ার প্রতিনিধিরা ইসরায়েলের আক্রমণ বন্ধের শর্তে আলোচনা করতে চাচ্ছেন, যদিও পূর্ণ সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে রাজি নন।
সিরিয়ার দাবিগুলি কী?
সিরিয়া চায়, ইসরায়েল যেন তাদের ভূখণ্ডে হামলা বন্ধ করে এবং সম্প্রতি দখল করা এলাকাগুলো ছেড়ে দেয়। তবে গোলান হাইটস ইস্যু নিয়ে সরকার কী অবস্থান নেবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
ইসরায়েল নতুন সিরিয়ান সরকারকে সতর্ক করেছে, যেন দামাস্কাসের দক্ষিণ অঞ্চলে সৈন্য মোতায়েন না করে।

ইসরায়েলের শর্ত কী?
ইসরায়েল চায় একটি নতুন নিরাপত্তা চুক্তি, যা ১৯৭৪ সালের চুক্তির হালনাগাদ সংস্করণ হবে। এতে ধাপে ধাপে পূর্ণ শান্তি স্থাপনের রূপরেখা থাকবে।
তাদের শর্তের মধ্যে রয়েছে - সিরিয়ায় কোনো তুর্কি সামরিক ঘাঁটি রাখা যাবে না, ইরান বা হিজবুল্লাহর মতো গোষ্ঠীর উপস্থিতি থাকবে না এবং সিরিয়ার দক্ষিণ অংশকে নিরস্ত্রীকরণ করতে হবে।
বিশ্লেষক ইয়াসিন-কাসাব বলছেন, “গোলান হাইটসের মতো ইস্যুতে সিরিয়ার নতুন সরকারের পক্ষে কোনো ছাড় দেওয়া রাজনৈতিকভাবে অসম্ভব।”