দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম বিদেশ সফরে শুক্রবার রোমের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রয়াত পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নিতে এই সফরে তিনি ইউক্রেনের ভলোদিমির জেলেনস্কিসহ একাধিক বিশ্বনেতার মুখোমুখি হবেন।

ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, ট্রাম্পের সঙ্গে পোপ ফ্রান্সিসের সম্পর্ক ছিল দূরত্বপূর্ণ। ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী নীতির কড়া সমালোচক ছিলেন পোপ।

তবু প্রায় ৫০ জন রাষ্ট্রপ্রধান ও ১০ জন শীর্ষ কর্মকর্তার উপস্থিতিতে আয়োজিত এই জমায়েতে অনুপস্থিত থাকছেন না ট্রাম্প।

এই অনুষ্ঠানে জেলেনস্কিরও উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। ফেব্রুয়ারির ২৮ তারিখ হোয়াইট হাউজে অনুষ্ঠিত এক ব্যর্থ বৈঠকের পর এই প্রথম দুই নেতা মুখোমুখি হচ্ছেন। ওই বৈঠকে ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স জেলেনস্কিকে কয়েক বিলিয়ন ডলারের মার্কিন সামরিক সহায়তার জন্য ‘অকৃতজ্ঞ’ বলে তিরস্কার করেন।

তবে এরপর দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক কিছুটা সহজ হয়। ইউক্রেন এক মাসের নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়, যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব ছিল। তবে রাশিয়া এখনও সে প্রস্তাব গ্রহণ করেনি এবং বৃহস্পতিবার কিয়েভে গত এক বছরে সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছে।

রাশিয়াকে হামলা বন্ধের আহ্বান জানালেও ট্রাম্প আবারও জেলেনস্কিকে দায়ী করে বক্তব্য দিয়েছেন এবং ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে মেনে নিতে ইউক্রেনকে চাপ দিচ্ছেন।

ট্রাম্প শুক্রবার টাইম ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘ক্রিমিয়া রাশিয়ার সঙ্গেই থাকবে। জেলেনস্কি সেটা বোঝেন।’

বাইডেনের সঙ্গে কাঁধে কাঁধে?

রোমে ট্রাম্পের কোনো নির্ধারিত বৈঠকের ঘোষণা আসেনি। তিনি অর্ধদিবসের জন্য ‘চিরন্তন নগরী’তে অবস্থান করবেন। তবে সেখানে তার জন্য অস্বস্তিকর হতে পারে সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপস্থিতি। বাইডেন একজন ধর্মপ্রাণ ক্যাথলিক এবং পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। বাইডেন আলাদাভাবে রোম যাচ্ছেন, যদিও প্রোটোকল অনুযায়ী সাবেক প্রেসিডেন্টদের সাধারণত একসঙ্গে এয়ার ফোর্স ওয়ানে ভ্রমণ করার রেওয়াজ রয়েছে।

প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ২০০৫ সালে প্রয়াত পোপ জন পলের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় বিল ক্লিনটন ও নিজের পিতাকে সঙ্গে নিয়ে এয়ার ফোর্স ওয়ানে গিয়েছিলেন।

ইউরোপের মিত্রদের হতচকিত করে ট্রাম্প যেভাবে শুল্ক আরোপ করেছেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে ইতালির এই সফর গুরুত্বপূর্ণ। যদিও তিনি সাময়িকভাবে সবচেয়ে কঠোর শুল্ক থেকে পিছিয়ে এসেছেন।

অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ, যিনি ট্রাম্পের সঙ্গে কিছুটা ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন, ও বিদায়ী জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎজ উপস্থিত থাকবেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ কর্মকর্তা উরসুলা ফন ডের লায়েন ও আন্তোনিও কস্তাও থাকবেন সেখানে।

উপস্থিত থাকবেন ব্রাজিলের বামপন্থি প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভাও। তার পরাজিত প্রতিদ্বন্দ্বী জাইর বলসোনারো ছিলেন ট্রাম্পের আদর্শিক সহযোগী। লুলা ট্রাম্পের সমালোচক হলেও সরাসরি সংঘাতে যাননি।

তবে ট্রাম্পের সঙ্গে আদর্শিকভাবে ঘনিষ্ঠ হিসেবে উপস্থিত থাকবেন হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবান ও আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট জাভিয়ের মিলে, যিনি প্রয়াত পোপ ফ্রান্সিসের দেশের নাগরিক।

ট্রাম্প নির্বাচনের পর কিন্তু অভিষেকের আগে একবার ফ্রান্স সফর করেন নোত্র দামের পুনঃউদ্বোধনে অংশ নিতে। ম্যাক্রোঁ তাকে জেলেনস্কির সঙ্গে একান্ত সাক্ষাতের সুযোগ করে দিয়েছিলেন।

ট্রাম্পের প্রথম বিদেশ সফরের পরিকল্পনা ছিল তেলসমৃদ্ধ উপসাগরীয় আরব দেশগুলোর দিকে। সেখানেই ব্যবসায়িক সম্ভাবনা খোঁজার পাশাপাশি ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের চেষ্টাও করবেন তিনি। ১৩ মে থেকে তার সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরের সূচি রয়েছে।