যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে সাড়া দিতে হামাসের ৩-৪ দিন সময় আছে : ট্রাম্প

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, গাজা যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের প্রতি সাড়া দেওয়ার জন্য হামাসের কাছে 'তিন বা চার দিন' সময় আছে। তিনি সাংবাদিকদের জানান, ইসরায়েলি ও আরব নেতারা ইততোমধ্যেই এই পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। খবর আলজাজিরার।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প বলেন, হামাস হয় তা করবে, অথবা করবে না। এবং যদি তা না হয়, তবে এটি অত্যন্ত দুঃখজনক পরিণতি হবে। তিনি আরও বলেন, প্রস্তাবটি নিয়ে আলোচনার সুযোগ বেশি কিছু নয়।
ট্রাম্প এই পরিকল্পনায় সম্মত হওয়ার জন্য ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ধন্যবাদ জানান।
এদিকে, হোয়াইট হাউস ট্রাম্পের দেওয়া ২০ দফা নথিটি প্রকাশ করেছে। প্রস্তাবনা অনুযায়ী—
গাজা উপত্যকায় তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে হবে।
হামাস কর্তৃক বন্ধি ইসরায়েলিদের সঙ্গে ইসরায়েলি কারাগারে আটক ফিলিস্তিনিদের বন্ধি বিনিময় করতে হবে।
গাজা থেকে ইসরায়েলিদের প্রত্যাহার করতে হবে।
হামাসকে নিরস্ত্র হতে হবে ও গাজা শাসনে কোনো ভূমিকা পালন করা যাবে না।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আরব ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে একটি অস্থায়ী আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী স্থাপনের জন্য কাজ করবে।
হামাসের সদস্যরা যদি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান-এর প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হন তবে তাদের সাধারণ ক্ষমা প্রদান করা হবে ও যারা উপত্যকা ছেড়ে যেতে চান তাদের বিদেশে নিরাপদে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে।
পরিকল্পনায় ফিলিস্তিনি টেকনোক্র্যাটদের নিয়ে গঠিত একটি অন্তর্বর্তী সরকার-এর কথা বলা হয়েছে, যা গাজায় দৈনন্দিন পরিষেবা, স্ব-শাসন, বাস্তুচ্যুত বাসিন্দাদের প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করবে এবং গাজার জনগণকে অপসারণ করা হবে না এই আশ্বাস দেবে।

কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে, হামাসের আলোচনাকারী দল ট্রাম্পের পরিকল্পনা পর্যালোচনা করছে। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আলজাজিরাকে এক হামাস কর্মকর্তা জানান, ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীটিকে কোনো পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়নি।
এদিকে, অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক দল ফাতাহ যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে ও বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য মার্কিন প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়েছে। তারা যুদ্ধ শেষ হওয়ার এক বছরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য পিএ প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের প্রতিশ্রুতিও পুনর্ব্যক্ত করেছে।
তবে ফাতাহের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আব্বাস জাকি মার্কিন প্রস্তাবকে ফিলিস্তিনিদের সম্মতি ছাড়াই চাপিয়ে দেওয়া আত্মসমর্পণের দলিল হিসেবে নিন্দা করেছেন। তিনি সতর্ক করেন, এটি গ্রহণ করলে অপমান বৃদ্ধি পাবে, দখলদারিত্বকে বৈধতা দেওয়া হবে ও ফিলিস্তিনি ঐক্য ভেঙে পড়বে।
আলজাজিরার মাইক হান্না মন্তব্য করেছেন, ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা কোনো প্রস্তাব নয় বরং হামাসের জন্য একটি আল্টিমেটাম। তিনি মনে করেন, ট্রাম্পের মন্তব্য গাজায় তীব্র ইসরায়েলি পদক্ষেপের জন্য কার্যকরভাবে একটি সবুজ সংকেত।
কাতারের হামাদ বিন খলিফা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুলতান বারাকাত ট্রাম্পের পরিকল্পনাকে “সমস্যাযুক্ত” বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, পরিকল্পনাটির শুরুতে হামাসকে এমন এক দলের হাতে সমস্ত ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে যাদের তারা বিশ্বাস করে না। তিনি আরও মনে করেন, নেতানিয়াহুর পাশে যেভাবে পরিকল্পনাটি উপস্থাপন করা হয়েছে, তাতে বোঝা যায় যে এটি ইসরায়েলের সুবিধার জন্য ক্ষতিকর।
এদিকে, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের একজন মুখপাত্র বলেছেন, জাতিসংঘ প্রধান মার্কিন প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়েছেন ও “সব পক্ষকে একটি চুক্তি এবং এর বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন”।
গাজার ওপর ইসরায়েলি হামলার দুই বছরে ফিলিস্তিনিদের মৃতের সংখ্যা ৬৬ হাজার অতিক্রম করেছে। এই উপত্যকাটি একটি গুরুতর মানবিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।