ছোবল খেয়েও সাপের প্রাণ বাঁচালেন নারী!

ছোবল খাওয়ার পরও ওই সাপের প্রাণ বাঁচালেন এক নারী। ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের রাঁচি শহরের অদূরে সরাইকেলার বড়াবাম্বো গ্রামে ঘটেছে এ ঘটনা।
গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় স্থানীয় এলাকায় একটি ঝোপঝাড়ে ঘেরা অঞ্চলে টিউবঅয়েল থেকে পানি আনতে গিয়েছিলেন এলাকার সুরকুই বোদরা (৩৫) নামে এক মহিলা। সেই সময় অন্ধকারের মধ্যে একটি কেউটে সাপের লেজে পা দিয়ে ফেলেন তিনি। মুহূর্তের মধ্যে ফণা উঁচিয়ে ওই মহিলার পায়ে ছোবল মারে সাপটি। ভয়ে চিৎকার দিয়ে ওঠেন ওই নারী। এর পরেই এলাকার লোকজন লাঠি হাতে মারতে উদ্যত হয় সাপকে। কিন্তু বিষের যন্ত্রণায় কাতর ওই নারী নিজেই নিরস্ত করেন স্থানীয় বাসিন্দাদের। বলেন, ‘ও তো নিরীহ প্রাণী। ওর লেজে পা পড়ায় ভয় পেয়ে কামড়ে দিয়েছে। ওর কোনো দোষ নেই।’
এরপর ওই নারী নিজের হাতেই ফুট দুয়েক লম্বা ওই সাপকে মাটি থেকে তুলে একটি প্ল্যাস্টিকের কৌটায় ভরে নেন। এরপর নিজের হাতেই পায়ের আক্রান্ত জায়গায় ব্লেড দিয়ে শিরা কেটে ফেলে শক্ত করে বেঁধে নেন। তারপর কৌটায় ভরা সাপটিকে নিয়ে স্থানীয় মানুষজনের সহায়তায় হাসপাতালে পৌঁছে যান।
এলাকার বাসিন্দা মনোজ মুন্ডা জানান, সাপটা ওই মহিলাকে ছোবল মেরে জঙ্গলে পালিয়ে যাচ্ছিল। কিন্ত সুরকুই নিজের হাতে সাপটিকে ধরে কৌটায় ভরে নেন।
আপাতত সাপে কাটা ওই নারীকে রাখা হয়েছে রাঁচির রিমস হাসপাতালে। হাসপাতালে নিজের বেডের পাশেই কৌটাবন্দি সাপটিকে রেখে দিয়েছেন সুরকুই বোদরা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ঝাড়খন্ডের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে সাপের কামড় খাওয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটে। চলতি বছরে প্রায় শ তিনেক সাপে কাটা রোগীও ভর্তি হয়েছিলেন হাসপাতালে। কিন্ত সুরকুই বোদরার মতো আর কেউ এর আগে এমন সাহস দেখাতে পারেননি। তবে বেডের পাশে কৌটাভর্তি সাপ নিয়ে সুরকুইয়ের থাকাটা যে বিপজ্জনক সে কথা স্বীকার করে নিয়েছেন রাঁচির রিমস হাসপাতালের চিকিৎসক আর প্রসাদ।
চিকিৎসক আর প্রসাদ বলেন, অন্য রোগীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে কৌটাবন্দি সাপটিকে সরিয়ে ফেলতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তাতে রাজি হননি সুরকুই বোদরা। ফলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কৌটার মুখ আপাতত সিল করে দিয়েছে।
হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আপাতত চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন সুরকুই বোদরা। তাঁর অবস্থা এখন অনেকটাই স্থিতিশীল। এদিকে হাসপাতালের বেডে শুয়ে আচ্ছন্ন অবস্থায় সুরকুই জানিয়েছেন, নিরীহ এই প্রাণীটিকে মারলে তাঁর পরিবারের বাচ্চাদের ওপর অমঙ্গল নেমে আসতে পারে। তাই কোনোভাবেই সাপটিকে কাছছাড়া করতে চান না তিনি। সুস্থ হয়ে উঠলে সাপটিকে তিনি দূরে অন্য কোথাও ছেড়ে দেবেন বলে জানিয়েছেন।