১০ কোটি টাকায় লক্ষ্মীবরণ!

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মতে, আজ মা দুর্গার মেয়ে লক্ষ্মীদেবীর মর্ত্যে পা রাখার দিন। ফলে আজ অধিকাংশ হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে মহাধুমধাম করে ধনদেবী মা লক্ষ্মীর আরাধনা শুরু হয়েছে। আর এই লক্ষীপূজায় পশ্চিমবঙ্গের দুটি গ্রামে বারোয়ারি লক্ষ্মীপূজার পেছনে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ১০ কোটি টাকা!
কলকাতার পাশেই হাওড়া জেলার আমতা ও বাগনান গ্রাম। এই দুটি গ্রামে বারোয়ারি লক্ষ্মী আরাধনা হচ্ছে প্রায় ১২০টি। যার প্রতি প্যান্ডেলেই লক্ষ্মীপূজার বাজেট ধার্য করা হয়েছে ছয় লাখ টাকার বেশি। লক্ষ্মীর প্রতি এমন শ্রদ্ধার কারণে সবাই আজ ওই দুটি গ্রামকে চিনছে ‘লক্ষ্মীর গ্রাম’ নামে।
স্থানীয় উদ্যোক্তাদের দাবি, বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বড় বাজেটের লক্ষ্মী আরাধনা একমাত্র তাঁরাই করেন। মা দুর্গার মেয়ে লক্ষ্মীকে নিয়ে আমতা ও বাগনান গ্রামে মাতামাতির শেষ নেই। টানা তিনদিন ধরে লক্ষ্মীপূজা উপলক্ষে আমতা ও বাগনান গ্রামজুড়ে চলতে থাকে লাগাতার মেলা, অনুষ্ঠান আর খাওয়াদাওয়া। এবারও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি।
লক্ষ্মীর আগমনে দুই গ্রামে প্যান্ডেল সাজানোতেও একে অপরকে টেক্কা দিচ্ছে। অজন্তা ইলোরার গুহাচিত্র, দিল্লির লোটাস টেম্পল, জ্যান্ত উটসহ রাজস্থানের মরুভূমি, কাশ্মীরের শৈলশিখর সবই লক্ষ্মীর কৃপায় দেখতে পাওয়া যাবে এই দুটি গ্রামে। এখানে ধনদেবী লক্ষ্মী নানা রূপে বিরাজমান। কোথাও তিনি ধামা হাতে গোলায় ধান ঢালছেন, কোথাও আবার রাজস্তানী রমণী হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছেন, আবার কোথাও একেবারে নতুন ঢঙে শহুরে তরুণী সেজে বিরাজ করছেন।
এই আমতা ও বাগনানের বেশ কয়েকটি এলাকা বরাবর বন্যাকবলিত। প্রতিবছর এই দুটি গ্রামে বন্যার পানিতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে ব্যাপক ক্ষতি হয় চাষবাসের। ফলে, আজ থেকে আনুমানিক ৩০০ বছর আগে গ্রামবাসীর মধ্যে ধারণা হয়, বন্যা থেকে কৃষিজমিকে বাঁচাতে ধনলক্ষ্মীর আরাধনা প্রয়োজন। সেই থেকেই শুরু হয় ধনলক্ষ্মীর আরাধনা। যা আজ ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে এই দুটি গ্রামজুড়ে। যে কারণে গ্রাম দুটির নাম হয়ে গিয়েছে আজ ‘লক্ষ্মীর গ্রাম’। এই এলাকার বিধায়ক অসিত মিত্র বলেন, ‘বন্যায় কৃষিজমির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে থাকায় আজ বাসিন্দাদের অনেকেই কৃষিকাজ ছেড়ে দিয়ে অন্যান্য পেশায় ঢুকে পড়েছেন। তবে চিরাচরিতভাবে লক্ষ্মী আরাধনাটা এই দুটি গ্রামের ঐতিহ্য হয়ে রয়ে গেছে।’