টাকা হজম করতে না পেরে ২ পুলিশ শ্রীঘরে

ব্যবসায়ীর ব্যাগে থাকা কড়কড়ে ১৬ লাখ টাকা হজম করতে চেয়েছিলেন ভারতীয় রেলের দুই পুলিশ। ওই টাকা বদহজম হয়ে শেষ পর্যন্ত শ্রীঘরে ঢুকতে হলো তাঁদের।
তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে এক ব্যবসায়ীর ওপর দিব্য বাটপাড়ি করে ওই বিশাল অঙ্কের টাকা গ্যাঁটবন্দী করে ফেলেছিলেন তাঁরা। কিন্তু শেষ অবধি ধর্মের কল বাতাসে নড়ে যাওয়ায় বিপদ ঘটে যায়। ধরা পড়ে যেতে হয় উচ্চপদস্থ আধিকারীকদের কাছে। গ্রেপ্তারের পাশাপাশি তাদের প্রত্যাহার (ক্লোজ) করা হয়। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিমবঙ্গের খোদ শিয়ালদহ সেকশনে।
শিয়ালদহ রেলপুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে বিধাননগর রোড (উল্টোডাঙ্গা) স্টেশনে এক ব্যক্তিকে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে দেখে সন্দেহ হয় কর্তব্যরত এক জিআরপি (গভর্নমেন্ট রেলওয়ে পুলিশ) কনস্টেবেলের। রাত আনুমানিক পৌনে ৯টা নাগাদ বিধাননগরের তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা ওই ব্যক্তির হাতে একটা কালো রঙের বড়োসড়ো মাপের ব্যাগ দেখে সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়। ওই ব্যক্তিকে তল্লাশি করার সময় ব্যাগে উঁকি মারতেই আত্মারাম খাঁচাছাড়া হওয়ার জোগাড় হয় কনস্টেবলের। তিনি দেখতে পান, ব্যাগের মধ্যে থরে থরে সাজানো ১৬ লাখ টাকা। এদিকে কোথা থেকে ওই ব্যক্তি এত টাকা নিয়ে এলেন তাঁর কোনো সদুত্তর দিতে না পেরে অগত্যা জিআরপি কনস্টেবেলের পায়ে পড়তে শুরু করে দেন তিনি। অনুরোধ করতে থাকেন, এই টাকা আপনি নিয়ে নিন। কিন্তু আমাকে গ্রেপ্তার করবেন না। অনেক ভেবেচিন্তে জিআরপি কনস্টেবল তাঁকে শর্ত দেন, তিনি তাঁকে গ্রেপ্তার করবেন না। তবে এই টাকার কথাও যেনো তিনি কাউকে না বলেন। অগত্যা হাঁফ ছেড়ে বেঁচে ওই ব্যক্তি জিআরপি কনস্টেবলকে কথা দিয়ে কোনোমতে গ্রেপ্তারি বাঁচিয়ে উঠে পড়েন ট্রেনে।
ওদিকে মোটা অঙ্কের ওই টাকা নিয়ে তো রীতিমতো দরদর করে ঘামতে শুরু করেন ওই কনস্টেবল। এক সঙ্গে এত টাকা তিনি কী করবেন বুঝে উঠতে না পেরে ঘটনাস্থল থেকেই তিনি ফোন করেন বিধাননগর রোড স্টেশনের দায়িত্বে থাকা ওইদিনের এক উপপরিদর্শককে (এসআই)। ওই এসআই ঘটনার কথা বেমালুম চেপে গিয়ে টাকাভর্তি ব্যাগ গোপনে নিয়ে আসতে বলেন তাঁর কাছে। এরপর বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়। কিন্তু কথায় বলে, ধর্মের কল নাকি বাতাসে নড়ে! আর সেটা নড়ে বলেই হয়তো চলতি সপ্তাহের গোড়ার দিকে এই ঘটনার কথা কানাঘুষোর মাধ্যমে কানে পৌঁছে যায় শিয়ালদহ শাখার রেলওয়ে পুলিশ সুপারের কাছে। তিনি ঘটনার কথা জানতে পেরেই বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন। নির্দেশ মতো চলতি সপ্তাহের শুরু থেকেই ওই কনস্টেবল এবং এসআইয়ের ফোন কল ট্র্যাপ করা শুরু হয়। আর তাতেই বেরিয়ে পড়ে থলের বেড়াল। গত বৃহস্পতিবারেই ওই জিআরপি কনস্টেবলকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তাঁকে শুরু করা হয় ম্যারাথন জেরা। জেরার মুখে এক সময় ভেঙে পড়ে ওই কনস্টেবল জানিয়ে দেন, তিনি কার নির্দেশে এ কাজ করেছেন। এবং সেই ভাগে পাওয়া টাকা তিনি কোথায় লুকিয়ে রেখেছেন সেটাও জানিয়ে দেন। এরই মধ্যে তদন্তে গতি বাড়ান রেলওয়ে পুলিশ সুপার। খুঁজে বের করা হয় সেই ব্যক্তিকেও।
জানা যায়, ওই ব্যক্তি আসলে একজন ব্যবসায়ী। তাঁকে দিয়ে একটি অভিযোগও দায়ের করা হয়। এরপরেই অভিযুক্ত কনস্টেবলের বয়ানের ভিত্তিতে ঘটনার দিন বিধাননগর রোড স্টেশনে দায়িত্বে থাকা এসআইকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরই মধ্যে ওই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত করা ১৬ লাখ টাকা সরকারি ভান্ডারে জমা না দেওয়ার অভিযোগে জিআরপির ওই এসআই ও কনস্টেবলকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। কনস্টেবলের কাছ থেকে মাত্র ছয় লাখ টাকা উদ্ধার হয়েছে। বাকি টাকা কোথায় রয়েছে তার খোঁজ চালাচ্ছে রেল পুলিশ। পাশাপাশি খতিয়ে দেখা হচ্ছে ওই ব্যবসায়ী কোথা থেকে এত টাকা নিয়ে আসছিলেন সেই বিষয়টিও।
এই চাঞ্চল্যকর ঘটনার কথা নিশ্চিত করে শিয়ালদহ শাখার রেলের পুলিশ সুপার দেবাশিষ বেজ জানিয়েছেন, এই ঘটনার উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত চলছে। তাই এখনই বিষয়টি নিয়ে আর কিছু জানানো যাবে না।