‘অপারেশন সিঁদুরে তিন প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হয়েছিল ভারত’

দুই মাস আগে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সময় পাকিস্তানের সঙ্গে চার দিনের সামরিক সংঘাতে ভারত কেবল একটি নয়, বরং তিনটি প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হয়েছিল। শুক্রবার (৪ জুলাই) ভারতের একজন শীর্ষ জেনারেল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, এই সংঘাতে পাকিস্তানের মিত্র চীন ও তুরস্ক ইসলামাবাদকে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সহায়তা দিয়েছিল। ৭ থেকে ১০ মে’র এই সংঘাত থেকে ভারত অনেক কিছু শিখেছে বলেও তিনি জানান। খবর দ্য হিন্দুস্তান টাইমসের।
সেনাবাহিনীর উপ-প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাহুল আর সিং বলেন, চীন এই সংঘর্ষকে পাকিস্তানে সরবরাহ করা তাদের অস্ত্রশস্ত্রের কার্যকারিতা পরীক্ষা করার জন্য একটি ‘লাইভ ল্যাব’ হিসেবে দেখেছিল। তার মতে, চীনের এই কাজ ভারতের বিরুদ্ধে ‘ধার করা ছুরি দিয়ে হত্যা’ করার কৌশল প্রতিফলিত করে, অর্থাৎ নিজের সুবিধার জন্য পাকিস্তানকে ব্যবহার করা। তিনি আরও জানান, এই সংঘর্ষের সময় চীন ভারতকে নিয়ে রিয়েল-টাইম তথ্য (সরাসরি পাওয়া তথ্য) পাকিস্তানকে দিচ্ছিল।
সিং ব্যাখ্যা করেন— কেন পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি চেয়েছিল : কারণ একটি বড় আঘাত (আক্রমণ) করার জন্য ভারত প্রস্তুত ছিল, তারা বুঝতে পেরেছিল যদি সেই আঘাত হানা হয়, তাহলে পাকিস্তান খুব খারাপ অবস্থায় পড়বে। তার কথায়, তিনি সম্ভবত ভারতের কঠোর সামরিক প্রতিক্রিয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন।

আগে ধারণা করা হতো— ১০ মে সকালে পাকিস্তানের সামরিক ও বিমান ঘাঁটিতে ভারতের হামলার পরই পাকিস্তান শান্তির (যুদ্ধবিরতি) জন্য আবেদন করেছিল। তবে ভারতের পক্ষ থেকে যে আরও বড় হামলার প্রস্তুতি ছিল, তা নিয়ে সবসময় সন্দেহ ছিল। জেনারেল সিং এ প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে এমন মন্তব্য করেন।
গত কয়েক দশকের মধ্যে এই সংঘাত ছিল দুটি পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশীর মধ্যে সবচেয়ে তীব্র। ভারতীয় সামরিক বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এই প্রথমবার চার দিনের সামরিক সংঘর্ষে চীন ও তুরস্কের ভূমিকার বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিলেন।
৭ মে ভোরে ভারত অপারেশন সিঁদুর শুরু করে। পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিশোধ হিসেবে ভারত পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরের (পিওকে) নয়টি সন্ত্রাসী ও সামরিক স্থাপনায় হামলা চালায়। এই হামলায় ২৬ জন সন্ত্রাসী নিহত হয়। এর ফলে পাকিস্তানের সঙ্গে চার দিনের সামরিক সংঘাত শুরু হয়, যেখানে যুদ্ধবিমান, ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন, দূরপাল্লার অস্ত্র ও ভারী কামান ব্যবহার করা হয়। এরপর ১০ মে উভয় পক্ষ সব সামরিক অভিযান বন্ধ করতে সম্মত হয়।
সিং বলেন, চীন পাকিস্তানের সামরিক সরঞ্জামের ৮১ শতাংশ সরবরাহ করে, তাই চীনের সমর্থন আশ্চর্যজনক ছিল না। তিনি বলেন, চীন সম্ভবত তাদের ‘ধার করা ছুরি দিয়ে হত্যা করো’ নীতি ব্যবহার করেছে, অর্থাৎ ভারতের সঙ্গে সরাসরি ঝামেলায় না গিয়ে পাকিস্তানকে ব্যবহার করে ব্যথা দিয়েছে।
কংগ্রেস অবিলম্বে সিংয়ের মন্তব্য তুলে ধরে সংসদে ভারত-চীন সম্পর্ক নিয়ে আলোচনার দাবি জানিয়েছে। কংগ্রেস সাংসদ জয়রাম রমেশ বলেন, লেফটেন্যান্ট জেনারেল সিং বলেছেন, কীভাবে চীন পাকিস্তান বিমানবাহিনীকে সাহায্য করেছিল। এটি সেই একই চীন যা পাঁচ বছর আগে লাদাখে পুরোপুরি স্থিতাবস্থা নষ্ট করেছিল, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মোদি ২০২০ সালের ১৯শে জুন প্রকাশ্যে চীনকে ‘ক্লিনচিট’ দিয়েছিলেন। পাঁচ বছর ধরে কংগ্রেস সংসদে ভারত-চীন সম্পর্কের পুরো বিষয়টি নিয়ে আলোচনার দাবি করে আসছে। মোদি সরকার বারবার এমন বিতর্ক করতে অস্বীকার করেছে।
নিজের বক্তৃতায় সেনাবাহিনীর উপ-প্রধান তুরস্কের ভূমিকার কথাও উল্লেখ করেন, বিশেষ করে পাকিস্তানকে সরবরাহ করা ড্রোনগুলোর কথা। তিনি বলেন, অবশ্যই, বায়রাক্টর (ড্রোন) তুরস্ক আগে থেকেই পাকিস্তানকে দিয়ে আসছেন। আমরা আরও অনেক ড্রোন আসতে দেখেছি, যুদ্ধের সময় সেখানে প্রশিক্ষিত ব্যক্তিরাও ছিলেন।
সিং বলেন, এই সংঘর্ষের সময় পাকিস্তানের লক্ষ্যবস্তুতে ভারতের জনবহুল এলাকাগুলো খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। তবে ভবিষ্যতের জন্য দেশকে এর প্রস্তুতি নিতে হবে। এর জন্য আরও বেশি বিমান প্রতিরক্ষা, আরও বেশি রকেট বিরোধী কামান, ড্রোন ব্যবস্থার মতো প্রস্তুতি খুব দ্রুত নিতে হবে।