ঢাক বাজারে নারী

উৎসবের মেজাজে মাতোয়ারা কলকাতার বাঙালিরা। কোরবানি ঈদ শেষ হতে না হতেই শরতের শিশিরভেজা সকালে শিউলির গন্ধ গায়ে মেখে এসে পড়বে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপূজা। তাই পূজার আনন্দে এখন থেকেই মেতে উঠেছে পশ্চিমবাংলা। কলকাতাসহ রাজ্যের আনাচে কানাচে এখন পূজার গন্ধ। তবে পশ্চিমবঙ্গে এবারের পূজাতে নতুন চমক থাকছে নারী ঢাকি।
এত দিন পুরুষদের দেখা যেত ঢাক কাঁধে নিয়ে নেচে নেচে পূজা প্যান্ডেলে ঢাক বাজাতে। এবারে সেই ঘরানা ভেঙে ঢাক কাঁধে তুলে নিয়েছেন এক দঙ্গল নারীরা। লালপেড়ে সাদা শাড়ি পরে সুরের তালে তালে কোমর দুলিয়ে এবার পূজাতে ঢাক বাজাবেন তাঁরা। আর নারী ঢাকিদের নিয়ে রীতিমতো ঢাক বাজানোর কর্মশালা এরইমধ্যেই শুরু হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার মসলন্দপুরে।
মসলন্দপুরের বাসিন্দা বছর পঞ্চাশেকের গোকুল দাস ২৫ জন নারী ও ৫০ জন পুরুষ ঢাকিকে নিয়ে তৈরি করে ফেলেছেন ঢাক বাজানোর দল। গোকুল দাসের বাবা মতিলাল দাস ছিলেন নামকরা ঢাক বাজিয়ে। এপার বাংলা ওপার বাংলাতেও ছিল তাঁর ঢাক বাজানোর সুখ্যাতি। বাপ ঠাকুর্দার আমলের এই পেশাকে আঁকড়ে ধরে গোকুল দাস বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঢাক সংস্কৃতিকে আজ নতুন মাত্রা দিয়েছেন। প্রতিবছর পূজা এলেই গোকুল দাসের বাড়িতে পড়ে যায় তুমুল ব্যস্ততা। ঢাক বাজানোর মহড়ায় মেতে ওঠেন প্রত্যেকে। শুধু কলকাতায় নয়, তাঁরা ঢাক বাজাতে যান দিল্লি, মুম্বাই আসামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এমনকি ঢাক বাজাতে তাঁরা পাড়ি দিয়েছেন দেশের বাইরে লন্ডন, ইন্দোনেশিয়া, আমেরিকা, নরওয়েসহ বিভিন্ন দেশেও।
এখন পূজার দিন ঘনিয়ে আসতেই জোর কদমে চলছে ঢাক বাজানোর মহড়া। পুরুষ ঢাকিদের পাশাপাশি এলাকার নারীরা প্রতিদিন নিয়ম করে ঢাক কাঁধে নিয়ে করছেন এই ঢাক বাজানোর প্র্যাকটিস। নারী ঢাকিরা বছরভর টুকটাক ঢাক বাজানোর অর্ডার পেলেও পূজার সময় মূলত ঢাক বাজিয়ে বাড়তি রোজগার ঘরে তোলেন তাঁরা।
ঢাক কাঁধে নিয়ে স্থানীয় এলাকার বাসিন্দা উমা দাস, টুকু দাস, প্রমিলা দাসরা জানালেন, ঢাক বাজিয়ে বাড়তি উপার্জন হয় তাঁদের। সংসারে সচ্ছলতা আসে। সারা বছর বাড়িতে বসে সেলাই ফোড়নসহ নানা কাজ করলেও দুর্গাপূজার সময় ঢাক কাঁধে নেন তাঁরা। রীতিমতো ছন্দের তালে তালে নেচে নেচে ঢাকে দুর্গা মায়ের বোল ফুটিয়ে তোলেন।
আর নারী ঢাকিদের চাহিদাও এখন প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে যথেষ্ট জনপ্রিয় হচ্ছে বলে জানালেন গোকুল দাস। বললেন, ইতিমধ্যেই বিভিন্ন প্যান্ডেলে নারী ঢাকিদের ঢাক বাজানোর জন্য অর্ডার হয়ে গেছে। এমনকি বিদেশেও নারী ঢাকিদের কদর বাড়ছে। আর পূজার সময় বাড়তি আয়ের জন্য ঢাক কাঁধে তুলে নিতে আপত্তি নেই নারী ঢাকিদের।
ঢাক বাজাতে বাজাতে, হাসতে হাসতেই কয়েকজন নারী ঢাকি বললেন, ঢাক বাজাতে লজ্জা কীসের? আর ঢাক বাজাতেও আমাদের ভীষণ ভালো লাগে। আর এই ভালো লাগা থেকে যদি সংসারে বাড়তি সচ্ছলতা আসে তাহলে মন্দ কী?