৯৫ বছরে এসে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি!

বয়েস ৯৫। রয়েছে ছেলে-পুলে নাতি-নাতনিও। তাতে কী! তাই বলে কি আর এই বয়সে ডিগ্রি অর্জন করা যাবে না? লেখাপড়া কি আর বয়সের গণ্ডি মানে? মানে না বলেই হয়তো ৯৫ বছর বয়সে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের জন্য পরীক্ষায় বসলেন এক বৃদ্ধ।
ভারতের বিহার রাজ্যের নালন্দা ওপেন ইউনিভার্সিটিতে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রির জন্য ৯৫ বছর বয়সী ছাত্র রাজ কুমার বৈশ্যের নাম দেখে সবার চোখ চড়কগাছ। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৩৮ সালে ভারতের আগ্রা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন করেছিলেন রাজ। এর দুই বছর পর আইন নিয়ে পড়াশোনা করে একটা ডিগ্রিও অর্জন করেছিলেন। কিন্ত স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন আর হয়ে ওঠেনি।
পঁচানব্বই বছর বয়সী রাজ কুমার বৈশ্য জানালেন, সংসারের দায়িত্ব কাঁধে চেপে যাওয়ায় পড়াশোনায় ইতি টেনে ঢুকে পড়তে হয়েছিল কাজের দুনিয়ায়। তারপর সংসার সংগ্রামে আর সময় বের করা সম্ভব হয়নি তাঁর। স্ত্রী, সন্তান, সংসারের চাপে জীবনে একের পর এক কেটে যেতে থাকে বছর। এভাবেই চলতে চলতে একসময় চাকরি থেকে অবসর গ্রহণও করে ফেলেন তিনি। একটা সময় জীবন সঙ্গীনিও তাঁকে ছেড়ে পরপারে চলে যান। সেটাও আজ থেকে প্রায় ১০ বছর আগের কথা।
স্ত্রী বিয়োগের পর থেকেই অসম্পূর্ণ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের ইচ্ছেটা ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। কিন্ত তত দিনে বয়স অনেকটাই বেড়ে গেছে। তবু সাহস হারাননি অদম্য রাজ। জীবনের অপূর্ণ ইচ্ছে পূরণ করতে শেষ বয়সে বিহারের পাটনার নালন্দা ওপেন ইউনিভার্সিটিতে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করার জন্য নাম লিখিয়ে ফেললেন তিনি।
আর ওই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার ব্যাপারে পূর্ণ আশাবাদী রাজ কুমার বৈশ্য। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, ‘মনে রাখবেন, আমি শুধু ডিগ্রি অর্জন করতে যাচ্ছি না। আমি আমার স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে চলেছি। আমার জ্ঞানের পিপাসা রয়েছে, আমি সেটা মেটানোর লক্ষ্যেই পাস করব। আমাকে পাস করতেই হবে।’
এদিকে নালন্দা ওপেন ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার এস পি সিনহা জানালেন, তিনি তো প্রথমে এই প্রস্তাব শুনে রীতিমতো চমকে উঠেছিলেন। পরে দেখলেন, ৯৫ বছর বয়সি ছাত্রের পড়তে বা লিখতে কোনো অসুবিধাই হচ্ছে না। ফলে আর দেরি না করে রাজ কুমার বৈশ্যর নাম নথিভুক্ত করে তাঁর বাড়িতেই পাঠিয়ে দিয়েছেন স্টাডি মেটিরিয়াল।
এখন দেখার বিষয়, শেষ পর্যন্ত ৯৫ বছরের ছাত্র সবাইকে টেক্কা মেরে হাসতে হাসতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রির তকমাটা নিজের পকেটে ঢোকাতে পারেন কি না।