ছাগল বেচে শৌচাগার

অজপাড়াগাঁ বলতে যা বোঝায় সেটাই ভারতের ছত্তিশগড় রাজ্যের ধামাতাড়ি জেলার কোটাভরি গ্রাম। উন্নয়নের ছোঁওয়া এখনো এই গ্রামে লাগেনি। দারিদ্র্য, অশিক্ষা আর কুসংস্কারের অন্ধকারে ডুবে রয়েছে এই গ্রামের অধিকাংশ অধিবাসী। আদিবাসী প্রধান এই গ্রামের মানুষ আজও প্রকৃতির ডাকে খোলা প্রকৃতিকে বেছে নিতেই অভ্যস্ত। পাকা শৌচাগার কিংবা পরিবেশ বান্ধব শৌচাগার ব্যবস্থা এই গ্রামের অনেকেই আজও ভাবতেই পারে না। সেই গ্রামে থেকেই নজির স্থাপন করলেন শতবর্ষী এক আদিবাসী নারী। নাম তাঁর কুয়ারবাই যাদব। নিজের পোষ্য কয়েকটি ছাগল বিক্রি করে তিনি নিজের বাড়িতে শৌচাগার নির্মাণ করেছেন।
শুধু নিজের বাড়িতে শৌচাগার দিয়েই তিনি ক্ষান্ত হননি। এ বয়সে তিনি হেঁটে গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে শৌচাগার ব্যবহারের উপকারিতার কথা জানান এবং তাদের শৌচাগার নির্মাণে উদ্বুদ্ধ করেন।
কোটাভরি গ্রামে কয়েকদিন আগে স্থানীয় পঞ্চায়েতের এক সভায় খোলা জায়গায় মলত্যাগ করলে কী কী রোগ ছড়াতে পারে সে সম্পর্কে জানার পরই কুয়ারবাই মনে মনে স্থির করেন,যেভাবেই হোক বাড়িতে শৌচাগার নির্মাণ করবেন। বয়স ১০০ পেরিয়ে। আর কত দিনই বা বাঁচবেন! তবে যে কটা দিন বাঁচবেন,সে কটা দিন ভালো পরিবেশে থাকার চিন্তা করেন তিনি। যে রকম ভাবনা, সেই রকম কাজ। শেষ বয়সে বৃদ্ধা কুয়ারবাইয়ের সম্বল বলতে ছিল কয়েকটি ছাগল। মায়া ত্যাগ করে সাধের পোষ্যগুলোকে বিক্রি করে দেন ২২ হাজার রুপিতে। সেই রুপি দিয়েই নিজের বাড়িতে নির্মাণ করেছেন শৌচাগার।
৪৫০ জন আদিবাসীর বাস এই ছোট্ট কোটাভরি গ্রামে। তারা এত দিন ধরে খোলা জায়গায় মলত্যাগ করাকেই রেওয়াজ বলে মনে করত। তাদের কাছে আজ বৃদ্ধা কুয়ারবাই নজির স্থাপন করে দেখিয়ে দিয়েছেন, শিক্ষার আলো জীবনের শেষ বয়সেও জীবনকে আলোকিত করে কীভাবে। এই বৃদ্ধার অনুপ্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে অনেকেই তাদের বাড়িতে পরিবেশবান্ধব শৌচাগার নির্মাণ করেছে।