সমঝোতা নয়, চিটাগংয়ের কাছে ৪৬ কোটি টাকা দাবি বিসিবির
চিটাগং কিংসের কাছে বিসিবির ৪৬ কোটি টাকা পাওনা নিয়ে গত কয়েক দিনে বিভিন্ন রকম খবর এসেছে। সর্বশেষ চিটাগং কিংসের মালিক সামির কাদের জানিয়েছিলেন, বিসিবি থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। সমঝোতায় বসে সমাধান করতে চায় বিসিবি। এবার নতুন খবর হলো, কোনো সমঝোতা নয়, চিটাগং কিংসের কাছে পাওনা ৪৬ কোটি টাকাই দাবি করেছে বোর্ড।
গত সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে সামির কাদের বলেছিলেন, ৪৬ কোটি টাকার অংকটা নাকি তিনি জানেন না। এমনকি বিসিবি নিজেও জানে না। তবে, আজ বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সেই টাকার হিসাব স্পষ্ট করেছে বোর্ড।
বিপিএলের প্রথম দুই আসরে অংশ নেওয়ার পর অনেক অভিযোগ ও বিতর্কের জন্ম দেওয়া এই ফ্র্যাঞ্চাইজিকে বাদ দেয় বিসিবি। সেসময় ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক বকেয়া রেখেছিল চিটাগং। সেই পারিশ্রমিক পরিশোধ করেছিল বিসিবি।
এরপর লম্বা সময় আর বিপিএলে ফ্র্যাঞ্চাইজি নিতে পারেনি সামির কাদেরের সত্ত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠান এস.কিউ. স্পোর্টস এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড। তবে গত বছর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পথ ধরে বিসিবিতেও পরিবর্তন আসার পর বিস্ময়রকরভাবে আবার ফেরানো হয় এই ফ্র্যাঞ্চাইজিকে।
ফারুক আহমেদের বোর্ড তখন জানিয়েছিল, প্রথম দুই আসরের সেই পাওনায় অনেক ছাড় দিয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজিটির সঙ্গে সমঝোতা হয়েছে। সমঝোতার সেই অর্থ পরে কমানো হয় আরও। তার পরও সেটি তারা শোধ করেনি বলে খবর ছড়িয়েছিল। বিসিবির বিজ্ঞপ্তিতে সেটি স্পষ্ট করা হয়েছে আরেকবার। প্রথম দুই আসরের অর্থ মিলিয়েই ৪৬ কোটি টাকার এই অংক।
বিসিবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রথম দুই আসরের পাওনার সঙ্গে যোগ করা হয়েছে ২০১২ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সুদের অর্থ। এছাড়াও প্রথম দুই আসরের পাওনা ছিল মার্কিন ডলারে। ডলারের বিপরীতে টাকার মানের অনেক পতন হয়েছে গত ১৩ বছরে। সেটির সমন্বয় করেই গত ৩০ জুন পর্যন্ত ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি, আয়কর এবং ক্রিকেটারদের ও দল সংশ্লিষ্টদের পারিশ্রমিক মিলিয়ে ৩৭ লাখ ৮২ হাজার ১৫৬ মার্কিন ডলার, চলতি বাজার দর অনুযায়ী যা প্রায় ৪৬ কোটি টাকা।
পাওনা টাকার হিসাব দেওয়া হয়েছে বিসিবির পক্ষ থেকে। যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, ফ্র্যাঞ্চাইজিটির কাছে বোর্ডের মূল পাওনা ১৫ লাখ ৫০ হাজার ৬৫ মার্কিন ডলার। আর গত ১৩ বছরের মোট সুদ ২২ লাখ ৩২ হাজার ৯২ ডলার।
নতুন করে দল নিয়ে গত আসরেও বির্তকের জন্ম দিয়েছিল ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। সময় মতো ক্রিকেটার ও কোচিং স্টাফদের পারিশ্রমিক পরিশোধ করেনি চিটাগং। দলটির ‘মেন্টর’ পাকিস্তানি সাবেক তারকা শাহিদ আফ্রিদির পাওনা পরিশোধ না করায় টক অব দ্যা টেবিলে পরিণত হয় সামির কাদেরের দল। এছাড়াও পারভেজ হোসেন ইমনের মালিককে সন্তুষ্ট করতে না পারা, লঙ্কান পেসার বিনুরা ফার্নান্দোর পারিশ্রমিক না পেয়ে মাঠে না যাওয়ার মতো ঘটনাও সামনে এসেছিল।
বিসিবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ২০১৩ সাল থেকে ২০২৫ পর্যন্ত বিসিবির পক্ষ থেকে অনেকবার তাগাদা ও নোটিশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ফ্র্যাঞ্চাইজিটি চুক্তির শর্ত রক্ষা করতে পারেনি। পাওনার মধ্যে আছে ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি, আয়কর এবং ক্রিকেটার ও দল সংশ্লিষ্টদের পারিশ্রমিক।
ফারুক আহমেদ থাকাকালীন সমঝোতার বিষয়টি উল্লেখ করে বিসিবির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সৌহার্দ্যপূর্ণ পথে বিষয়টি সমাধানের জন্য গত সেপ্টেম্বর ফ্র্যাঞ্চাইজিটির সঙ্গে একটি চুক্তি করে বিসিবি। কিন্তু সেই চুক্তির অর্থ পরিশোধ করতেও পুরোপুরি ব্যর্থ হয় তারা। যে কারণে, গত ২২ জুলাই নোটিশ দিয়ে সেই সমঝোতা চুক্তি বাতিল করে দেয় বিসিবি। সেই সঙ্গে ৩৭ লাখ ৮২ হাজার ১৫৬ মার্কিন ডলার পাওনা দাবি করা হয়।