দুই স্তরের টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে চিন্তিত ইংল্যান্ড

টেস্ট ক্রিকেট কতটা জমজমাট হতে পারে তা আরো একবার প্রমাণ করেছে অ্যান্ডরসন-টেন্ডুলকার ট্রফি। ইংল্যান্ড-ভারত টেস্ট সিরিজের ফল বের হতে পঞ্চম টেস্টের পঞ্চম দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। টেস্টের মর্যাদাপূর্ণ সিরিজগুলোর মধ্যে অ্যাশেজ, বোর্ডার–গাভাস্কার ট্রফি, অ্যান্ডারসন-টেন্ডুলকার ট্রফির নামগুলো সবার ওপরে আসবে। টেস্টের উত্তাপ ছড়ানো ম্যাচগুলো দেখা যায় এসব সিরিজেই। তবে দুই স্তরের টেস্ট ক্রিকেট চালুর সিদ্ধান্ত হলে এসব সিরিজ নিয়মিতভাবে মাঠে গড়ানো নিয়ে শঙ্কা তৈরি হবে।
বিশ্ব ক্রিকেটে অনেকদিন থেকেই আলোচনা হচ্ছে ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড নিজেদের মধ্যে আরও বেশি টেস্ট খেলতে এই সংস্করণকে দুই স্তরে ভাগ করতে চায়। টেস্ট ক্রিকেটে দুই স্তরের মডেল গত ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে আলোচনার মধ্যে রয়েছে। ২০০৯ সালেই আইসিসি এ ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছিল। তবে পূর্ণ সদস্য দেশগুলো বিভিন্ন কারণে বরাবরই বিভক্ত থেকেছে।
এবার এই মডেলের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করেছে। যার নেতৃত্বে আছেন সাবেক নিউজিল্যান্ড ব্যাটার রজার টোয়েস। জুলাইয়ে আইসিসির বার্ষিক সভার আলোচনার কেন্দ্রে ছিল এই দুই-স্তরের টেস্ট মডেল, যা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা মনে করছে ইংল্যান্ড যদি দ্বিতীয় বিভাগে নেমে যায়, তাহলে আর অস্ট্রেলিয়া বা ভারতের মতো দলগুলোর সঙ্গে তাদের ঐতিহ্যবাহী ও বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হওয়ার মতো দ্বিপাক্ষিক সিরিজগুলো অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।
এই বিষয়ে ইসিবি চেয়ারম্যান রিচার্ড থম্পসন বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা কখনোই চাইব না যে আমরা একটা খারাপ সময় পার করি এবং দ্বিতীয় বিভাগে নেমে যাই। আর তাতে কি আমরা অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের সঙ্গে খেলব না? এমনটা হতে পারে না।’
রিচার্ড থম্পসন মনে করেন বর্তমান বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের কিছু কাঠামোগত পরিবর্তনই হয়তো এই সমস্যার সমাধান হতে পারে। এক্ষেত্রে তিনি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন। সেটাকে তিনি টেস্ট ক্রিকেটের জন্য দারুণ এক মুহূর্ত বলে অভিহিত করেন। তার মতে প্রয়োজনীয় সহায়তা পেলে অপেক্ষাকৃত ছোট দলগুলোও বড় কিছু অর্জন করতে পারে।
বিষয়টি নিয়ে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার প্রধান নির্বাহী টড গ্রিনবার্গ মনে করেন যে, বড় দলগুলোর দায়িত্ব হলো ছোট দলগুলোকে প্রতিযোগিতামূলক রাখা। এর জন্য একটি শক্তিশালী ফার্স্ট ক্লাস (প্রথম শ্রেণির) ক্রিকেট কাঠামো থাকা জরুরি।
এসইএন রেডিওকে গ্রিনবার্গ বলেন, ‘আসল চ্যালেঞ্জটা হচ্ছে প্রত্যেকে কীভাবে ভূমিকা পালন করছে এখানে। যখন আমি বলি ‘আমরা’, আমি বলছি সেই তিনটি দেশ যারা টেস্ট ক্রিকেটে নিয়মিতভাবে অর্থ ও সময় বিনিয়োগ করে যাচ্ছে। আমাদের নিজেদের স্বার্থেই শক্তিশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজ, পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে দেখতে চাই। আমরা চাই তারা এই সংস্করণে ভালো করুক। কিন্তু এটা পরিষ্কার যে, তারা একা একা পারবে না। পুরো ক্রিকেট বিশ্বেরই দায়িত্ব তাদের সহায়তা করা।’
গ্রিনবার্গ আরও জনান, আইসিসির নির্বাহী কমিটির সিঙ্গাপুরে যে বৈঠক করেছে, সেখানে অনেক বোর্ড প্রধানের সাথেই এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সবাই মেনে নিচ্ছেন যে, কিছু পরিবর্তন প্রয়োজন। আমার খোলা মনোভাবের মানে হচ্ছে যদি এই দুই-স্তর বিশিষ্ট মডেল ছোট দলগুলোর উন্নতি ও টেস্ট ক্রিকেটে বেশি সুযোগ সৃষ্টি করে, তাহলে আমি সমর্থন করব। কিন্তু যদি তা না করে বরং উল্টো ক্ষতি করে, তবে আমি এর পক্ষে নই।’