বিশ্ব প্রবীণ দিবস
প্রবীণদের কর্মক্ষম রাখতে ফিজিওথেরাপির গুরুত্ব

আজ ১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস। জাতিসংঘ ১৯৯০ সালে সিদ্ধান্ত নেয় যে প্রতি বছর এই দিনে প্রবীণ মানুষদের অবদান, অধিকার, সম্মান ও কল্যাণ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো হবে।
এ বছর এই দিবসের মূল প্রতিপাদ্য হলো- ‘প্রবীণরা স্থানীয় ও বৈশ্বিক কর্মকাণ্ডের চালক : আমাদের আকাঙ্ক্ষা, আমাদের সুস্থতা ও আমাদের অধিকার’।
এই ভাবনাটি মূলত বলছে যে, প্রবীণরা শুধু সেবা গ্রহণকারী নন, বরং তারা স্থানীয় ও বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন কাজে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারেন। তাদের চাহিদা, স্বপ্ন ও অধিকারকে গুরুত্ব দিয়ে সমাজ ও নীতিনির্ধারণের কাজে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা জরুরি।
এই প্রতিপাদ্যটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আজ বিশ্বের অনেক দেশেই প্রবীণ মানুষের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। ফলে তাদের সুস্বাস্থ্য, প্রয়োজনীয় সেবা, সামাজিক অংশগ্রহণ ও মানবাধিকার রক্ষার প্রশ্নগুলো আরও জোরালো হয়েছে। প্রবীণরা শুধু অতীত অভিজ্ঞতা বা স্মৃতির বাহক নন, তারা সমাজকে নানাভাবে সেবা ও নির্দেশনাও দিতে পারেন। তাদের ক্ষমতাকে স্বীকৃতি দেওয়া ও তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করাই এখনকার সময়ের দাবি।
প্রবীণ দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, প্রবীণদের কেবল সেবা দিলেই হবে না তাদের আকাঙ্ক্ষা, সুস্থতা ও অধিকারকে কেন্দ্র করে নীতিগত পরিবেশ তৈরি করাও জরুরি।
প্রবীণদের সুস্থ থাকতে শারীরিক কার্যক্রম ও ফিজিওথেরাপির ভূমিকা
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের শরীরে কিছু স্বাভাবিক পরিবর্তন আসে— যেমন মাংসপেশির শক্তি কমে যাওয়া, হাড়ের ঘনত্ব হ্রাস পাওয়া, শরীরের ভারসাম্য দুর্বল হওয়া ও স্পর্শের অনুভূতি কমে আসা। এই পরিবর্তনগুলো নানা রোগের ঝুঁকি বাড়ায় ও প্রতিদিনের স্বাভাবিক কাজ করা কঠিন করে তোলে।
এই পরিস্থিতিতে শারীরিক কার্যক্রম (ব্যায়াম) ও ফিজিওথেরাপি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
শারীরিক কার্যক্রমের গুরুত্ব
সুস্থতা বৃদ্ধি : নিয়মিত শারীরিক কার্যক্রম যেমন হাঁটা, হালকা দৌড়ানো, ভারবহন বা প্রতিরোধমূলক ব্যায়ামগুলো হৃৎপিণ্ড ও রক্তনালীর স্বাস্থ্য, হজম প্রক্রিয়া ও মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়।
রোগ প্রতিরোধ : এই ধরনের ব্যায়াম বার্ধক্যজনিত রোগ যেমন বহুমূত্র, হৃদরোগ, অস্থিসন্ধির ব্যথা ও মস্তিষ্কের দুর্বলতাকে প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
স্বাধীনতা রক্ষা : শরীরের ভারসাম্য ও স্থিতিশীলতা বাড়ানোর মাধ্যমে হঠাৎ পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা কমায় ও প্রবীণদের স্বাধীনভাবে চলাফেরার ক্ষমতা ধরে রাখতে সহায়ক হয়।
ফিজিওথেরাপির ভূমিকা
ফিজিওথেরাপি হলো এমন একটি সরাসরি স্বাস্থ্য-সেবা পদ্ধতি, যা প্রবীণদের শারীরিক কার্যক্ষমতা উন্নত করার জন্য পরিকল্পিত কৌশল ও ব্যায়ামের মাধ্যমে সাহায্য করে।
ব্যক্তিগত মূল্যায়ন ও পরিকল্পনা : ফিজিওথেরাপিস্ট প্রথমে রোগীর চলাফেরার ক্ষমতা, মাংসপেশির শক্তি, ভারসাম্য এবং চলন গতি ভালোভাবে মূল্যায়ন করেন এবং রোগীর জন্য উপযোগী একটি ব্যায়াম পরিকল্পনা তৈরি করেন।
শক্তি ও নমনশীলতা বৃদ্ধি : বিশেষ ধরনের শক্তিবর্ধক ও প্রসারণমূলক ব্যায়ামের মাধ্যমে মাংসপেশির শক্তি ও নমনীয়তা বজায় রাখতে সাহায্য করা হয়।
ভারসাম্য ও প্রশিক্ষণ : স্থির ব্যায়াম ও হাঁটার অনুশীলনের মাধ্যমে চলাফেরার স্থিতিশীলতা বাড়ায় এবং পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি অনেক কমিয়ে দেয়।
দৈনন্দিন কাজে সহায়তা : ম্যানুয়াল থেরাপি ও ব্যায়ামের মাধ্যমে রোগীকে দৈনন্দিন কাজ (যেমন বসা, দাঁড়ানো, হাঁটা) সহজ ও নিরাপদে করতে শেখানো হয়।
প্রতিরোধমূলক ভূমিকা : ফিজিওথেরাপি কেবল রোগ নিরাময় নয়, বরং প্রবীণদের স্বাস্থ্য খারাপ হওয়া বা অক্ষমতা প্রতিরোধে একটি প্রাথমিক উদ্যোগ হিসেবে কাজ করে।
হসপিটালাইজেশন ও পুনরুদ্ধারে সহায়ক : হাসপাতালে ভর্তি থাকা অবস্থায় ফিজিওথেরাপি রোগীর শারীরিক দুর্বলতা কমিয়ে দ্রুত সুস্থ হতে সহায়তা করে।
প্রবীণ দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে প্রবীণরাও সক্ষম, অধিকারবান ও সমাজের সক্রিয় সদস্য। আমাদের দায়িত্ব হলো তাদের সেই ভূমিকাকে স্বীকৃতি দেওয়া ও উৎসাহ দেওয়া।
একই সঙ্গে, প্রবীণদের সুস্বাস্থ্য ও কর্মক্ষমতা বজায় রাখার জন্য নিয়মিত শারীরিক কার্যক্রম এবং পেশাদার ফিজিওথেরাপি অপরিহার্য। নিয়মিত ও পরিকল্পিত থেরাপির মাধ্যমে প্রবীণরা কেবল জীবনযাপন করবে না— তারা তাদের জীবনকে অর্থবহ ও গুণমানপূর্ণ রাখতে পারবে।
লেখক : চেয়ারম্যান ও চীফ কনসালটেন্ট ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল ধানমণ্ডি, ঢাকা।