পহেলা বৈশাখ কাটুক সুস্থতায়

আজ উৎসবের দিন। ঝলমলে চারদিক। তবে সাথে সাথে কিন্তু প্রচণ্ড রোদ, আবহাওয়ার একটা তারতম্য, একটি অসহনীয় পরিবেশ বললেও ভুল হবে না। বাসায় কিন্তু কেউ বসে নেই। কেউ কেউ বের হয়ে গেছেন, বের হয়ে যাচ্ছেন, বিকেলে হয়তো বের হবেন। সারাদিন ধরে তাদের কর্ম ব্যস্ততা, পরিকল্পনা। তবে এ সময়েও সুস্থ থাকতে হবে।
এনটিভির নিয়মিত আয়োজন ‘স্বাস্থ্য প্রতিদিন’ অনুষ্ঠানের ২৩৫৭তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. ফারুক আহমেদ। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজের লিভার বিভাগীয় প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : কোন কোন বিষয় মাথায় রাখা উচিত যাতে করে সবাই আজকের দিনটিতে সুস্থ থাকতে পারে?
উত্তর : নববর্ষের দিনটি সবার জন্যই একটি আনন্দময় দিন। এই দিনটিতে গরম ও আর্দ্রতা দুই থাকে। এর মধ্যেই আমরা আমাদের সমস্ত অনুষ্ঠান এবং বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করা, এসবের মধ্যেই ব্যস্ত থাকি। এই উৎসবকে বাঙালিরা খুব উপভোগ করে।
এই গরম ও আর্দ্রতার মধ্যে যখন আমরা বাইরে যাই, তখন কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে। দীর্ঘ সময় গরমের মধ্যে এবং এই আর্দ্রতা পূর্ণ অবস্থা থাকার কারণে আমাদের শরীরের যে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, সেগুলোর কার্যপ্রণালি বেড়ে যায়। আমাদের হৃৎপিণ্ডের গতি বেড়ে যায়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, আমাদের শরীরে ঘামের মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণে পানি এবং খনিজ লবণ এগুলো বেরিয়ে আসে। শুধু ঘাম নয় ঘামের সাথে সাথে নিশ্বাসের সাথে সাথেও এই পানি অনেকটা বেরিয়ে যায়। এই বিষয়গুলো আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। এ কারণে যে সব সমস্যা দেখা দেয়, সেগুলো যাতে না হয়।
প্রশ্ন : গরমে বের হলে শরীরে কী কী সমস্যা হতে পারে? পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলো মাথায় রাখা উচিত?
উত্তর : একটু হালকা ধরনের কাপড় পরতে হবে। সুতির তো অবশ্যই, কাপড়ও ঢিলে ঢালা হতে হবে। খুব বেশি টাইট কাপড় থেকে ঘাম বেশি হয়। এগুলো এড়িয়ে যাওয়া উচিত। যারা শিশু ও যারা বয়োবৃদ্ধ, এদের বিষয়ে আমাদের একটু বেশি সতর্ক থাকতে হবে।
প্রশ্ন : কী কী ধরনের সমস্যা শিশুটির ক্ষেত্রে হতে পারে?
উত্তর : অতিরিক্ত সময় যদি তারা গরমের মধ্যে থাকে, তাহলে ঘামের মাধ্যমে যে পানি বেরিয়ে যায়, এতে লবণের ঘাটতি দেখা দেয়। এতে করে শিশুরা এবং বয়োবৃদ্ধ যারা আছে, বিশেষ করে ষাঠোর্ধ্ব যারা আছে, বিশেষ করে যারা ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের রোগী, তাদের মধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে রোদজনিত কারণে অসুবিধাগুলো হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। এই সময় ছাতা ব্যবহার করা উচিত। রোদের মধ্যে অতিরিক্ত সময় ধরে বেশি হাঁটাহাঁটি না করা উচিত। মাঝে মাঝে একটু বিশ্রাম নেওয়া উচিত। সাথে পানি রাখা উচিত। পানি বা ফলের রস, লবণ মেশানো ফ্রুট জুস রাখতে হবে। অবশ্যই নিজের বাড়ি থেকে বিশুদ্ধ পানিটাই নেওয়া ভালো বলে আমি মনে করি।
আবার বাইরের এসব খাবার খেয়ে অসাধু কারো খপ্পরে পড়ে খারাপ একটি ঘটনার মধ্যে পড়ে যেতে পারে।
প্রশ্ন : আজকে যারা ঘরের বাইরে বের হবে, হিটস্ট্রোকের সমস্যা প্রতিরোধে কী করবে? যদি হয়ে যায় হঠাৎ করে সেক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে কী করণীয়?
উত্তর : দীর্ঘ সময় ঘামের মাধ্যমে যদি কারো শরীর থেকে পানি বেরিয়ে যায়, তার ডিহাইড্রেশন বা পানি শূন্যতা দেখা দেয়। গরমের প্রভাব তার স্নায়ুতন্ত্রের মধ্যেও প্রভাব ফেলে। এর কারণে কয়েক ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। হিটস্ট্রোক শেষের দিকে দেখা দেয়। প্রাথমিকভাবে কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এর আগে তার শরীরে ব্যথা হতে পারে। এটি প্রাথমিক অবস্থায় হয়। এর চেয়ে পরবর্তীকালে যেটা হয় বমি বমি ভাব হতে পারে। মাথা ঘুরাতে পারে। মাথা ব্যথা হয়, মাথা ঘুরতে পারে। পাশাপাশি প্রচুর ঘামের কারণে তার শরীর ঠান্ডা হয়ে যেতে পারে। হিট এক্সোশনে এই বিষয়টি হয়। এটি একটি মেডিকেল ইর্মাজেন্সি। সেই অবস্থায় রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে হাসপাতালে পাঠাতে হয়।
হিটস্ট্রোকের উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো দীর্ঘক্ষণ রোদে থাকার পর যদি কেউ হঠাৎ করে অজ্ঞান হয়ে যায় বা অজ্ঞান অজ্ঞান ভাব চলে আসে, শরীরের তাপমাত্রা ১০৫ বা তার বেশি ডিগ্রি ফারেনহাইট চলে আসে। ওই মুর্হূতে কারো মনে হতে পারে এই ব্যক্তিটি হয়তো জ্বরে ভুগছে। কিন্তু আমাদের মাথায় এটা রাখতে হবে দীর্ঘ সময় রোদে থাকার পর যদি কেউ অজ্ঞান হয়ে যায় এবং তার শরীরের তাপমাত্রা যদি ১০৫-এর বেশি হয়, তাহলে ধরে নিতে হবে সে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছে। তাকে দ্রুত ছায়ায় নিয়ে যেতে হবে। বাতাস করতে হবে। শরীরের যে বাড়তি কাপড়চোপড় সেগুলো সরিয়ে ফেলতে হবে। ১০৫ থেকে কমে এসে তার নিচে তাপমাত্রা নামিয়ে নিয়ে আসতে হবে। এই প্রাথমিক চিকিৎসাগুলো নেওয়ার পর তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।
প্রশ্ন : অনেক বয়োবৃদ্ধ লোক সিস্টেমিক অসুখে ভুগে থাকে, বাইরে বের হলে কোন কোন বিষয়গুলো তাদের মাথায় রাখতে হবে?
উত্তর : রোদ থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখার চেষ্টা করতে হবে। আর অবশ্যই কিছুক্ষণ পর পর পানি বা স্যালাইন পানি খেতে হবে। এ বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে। তাহলে আশা করি কোনো সমস্যা হবে না।
প্রশ্ন : অনেকের ত্বক ফটোসেনসিটিভ থাকে। সূর্যের কাছাকাছি যারা যেতে চায় না বা সূর্যের সংস্পর্শে থাকলে অসুবিধা হয়। কী করণীয় তাদের ক্ষেত্রে? তাদের প্রতি আপনার পরামর্শ কী?
উত্তর : সানস্ক্রিন ব্যবহার করলে সূর্যের আলো থেকে একটু সুরক্ষা পেতে পারে। এ ছাড়া সাথে ছাতা রাখতে হবে।
প্রশ্ন : প্রসাধনী ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয় মাথায় রাখতে হবে?
উত্তর : প্রসাধনী যত হালকা ব্যবহার করা যায়, ততই ভালো। কারণ বাড়তি প্রসাধনীর কারণে গরমের আক্রমণ তার মধ্যে বেশি দেখা দিতে পারে।
প্রশ্ন : খাবারের বিষয়ে একটু বলুন।
উত্তর : বাইরের খাবার তো খাওয়া ঠিক নয়। পাশাপাশি তেলে ভাজাপোড়া খাবারগুলো ক্ষতি করতে পারে। গরমের সময় এসব খাবার খেলে বমি বমি ভাব দেখা দিতে পারে। কারো কারো বমি হয়। এসব খাবার খেলে সমস্যা দেখা দিতে পারে। সুতরাং খাবার নির্বাচনের বিষয়ে সচেতন হতে হবে। বাসার খাবারই ভালো আমি মনে করি। তারপরও যেসব খাবার খেতে হচ্ছে, এ ক্ষেত্রে যতটুকু পারা যায় নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। পানির বিষয়টি অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে।