বৈশাখ বরণ
ঘোরাঘুরি চলবে, সুস্থও থাকতে হবে

আসছে নতুন বছর। বাংলা ১৪২৩ সনকে বরণ করে নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে আপামর বাঙালি। তবে এর মধ্যে গরমটাও কিন্তু পড়েছে ব্যাপক! গরম যতই পড়ছে পড়ুক, তাই বলে ঘোরাঘুরি কি ব্ন্ধ থাকবে? ঘোরাঘুরি, বেড়ানো, আড্ডা, খাওয়া-দাওয়া, হৈ-হুল্লোড়, নাগরদোলায় চড়া সব চলবে পুরোদমে। তবে শরীরটাকেও কিন্তু রাখা চাই সুস্থ। আর এ জন্য কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।
বারডেমের ল্যাব সার্ভিসেসের ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী বলেন, ‘বৈশাখে প্রখর রোদ হবে। সবাই বাইরে বেরোবে, এটাই নিয়ম। কিন্তু মাথার ওপর থাকবে সূর্য। প্রচণ্ড রোদে হবে ঘাম। আমাদের দেশে বাতাসে জলীয় বাষ্প বেশি। সে জন্য ঘাম বেশি হয়। মাথা ঝিম ঝিম করে, সংজ্ঞা লোপ পায়। তাপাহত হয়। হিটস্ট্রোক হয়। বেশি রোদে থাকলে তাপাহত হয়ে যায়। তাই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে এই দিনটিতে।’
বঙ্গবন্ধু শেখু মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের ডিন অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, ‘বৈশাখে সবাই আনন্দ করবে, বাইরে বেরোবে। তবে বাইরে বের হলেও স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে হবে। নয়তো অসুস্থ হয়ে বড় ধরনের রোগ বাধিয়ে ফেলার ঝুঁকি থাকবে।’
চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী বৈশাখের প্রথম দিনে স্বাস্থ্য সচেতনায় কী করতে হবে- এ বিষয়ে কিছু পরামর্শ নিচে দেওয়া হলো।
পহেলা বৈশাখের আগে রাতে আট ঘণ্টা ঘুম আবশ্যক
পহেলা বৈশাখে সারা দিন বাইরে থাকবেন অনেকে। তাঁদের জন্য কিন্তু আগের রাতে একটা ভালো ঘুম খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভালোভাবে ঘুমালে পরের দিনের জন্য চাঙ্গা হয়ে বেরোতে পারবেন। অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী বলেন, ‘পহেলা বৈশাখের আগের রাতে অবশ্যই আট থেকে নয় ঘণ্টা ঘুমাবেন। এতে ত্বকও সতেজ থাকবে এবং পরের গোটা দিনটা ঘোরার সময় ক্লান্তি কম বোধ হবে। শুধু মাত্র পহেলা বৈশাখের দিনেই নয়, সব সময় আট থেকে নয় ঘণ্টা ঘুম জরুরি।’
পানি পান করুন পর্যাপ্ত
সারা দিন ছুটোছুটিতে শরীর দ্রুত পানিশূন্য হয়ে পড়বে। পানিশূন্যতা থেকে হতে পারে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা। অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী বলেন, ‘এ সময় সজল থাকতে হবে। পানি খেতে হবে বেশি বেশি। সঙ্গে রাখতে হবে পানির বোতল। পানীয় জাতীয় ফল যেমন তরমুজ, শসা এসব খেতে হবে। তাহলে সুস্থ থাকা যাবে।’
রাস্তার শরবত বারণ
অনেকে এ সময় রাস্তার শরবত খায় বা রাস্তার খোলামেলা খাবার খায়। এসব খাবার খাওয়া এড়িয়ে যেতে হবে জানিয়ে অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, ‘এসব খাবার থেকে জণ্ডিস, ডায়রিয়া, আমাশয় ইত্যাদি রোগ হতে পারে।’
‘অনেকে পহেলা বৈশাখের দিন বাইরে গিয়ে পান্তা-ইলিশ খায়। এই পান্তা ভাতে কী পানি ব্যবহার করা হয়- সেটি অনেকে জানে না। আবার ইলিশটা ভালো নাকি খারাপ- সেটি জানা থাকে না অনেকের। তবে খায়। এসব থেকেও কিন্তু শরীর অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। তাই এসব খেতেও সাবধান হতে হবে।’
অস্বাস্থ্যকর খাবার খাবেন না
অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, ‘অনেকে বৈশাখের দিন বাইরে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের খাবার খায়। গরমের দিনে খাবার দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। খাবারগুলো অনেক সময় পচা-বাসি হয়। এসব পচা-বাসি খাবার খেলে হতে পারে ফুড পয়জনিং। তাই সারা দিন ঘোরাঘুরি করবেন ভালো। তবে যেনতেন জায়গার খাবার খাবেন না। ভারী খাবার এড়িয়ে যেতে পারলে ভালো হয়।’
ছায়ায় থাকুন যতটা সম্ভব
বাইরে তো ঘুরাঘুরি করবেনই। তবে যতটা সম্ভব ছায়ার মধ্য দিয়ে হাঁটার চেষ্টা করুন বা থাকুন। অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী বলেন, ‘হাঁটার সময় ছায়া দিয়ে হাঁটার চেষ্টা করুন। ভালো হয়, সকাল ১০টা থেকে ৩টা পর্যন্ত বাইরে কম থাকতে পারলে।’
সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন
রোদে বেরোলে ত্বকের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে জানিয়ে অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী বলেন, ‘রোদে বেরোলে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। ৩০ এইচপিএফ হলে ভালো হয়। এটি নারী-পুরুষ উভয়ই ব্যবহার করতে পারবেন। বাইরে বের হলে রোদচশমা ব্যবহার করবেন। ছাতা বা ক্যাপ ব্যবহার করতে পারেন।’
স্নিগ্ধ থাকুন
‘স্নিগ্ধ সাজ কার না ভালো লাগে? খুব ভারী মেকআপ করলে ঘেমে গিয়ে মুখ আরো বেশি কদর্য হয়ে পড়ে। তাই এই সময়ে হালকা স্নিগ্ধ মেকআপ করা ভালো’, বলেন অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘এ সময় ওয়াটার প্রুফ মেকআপ করতে পারেন। মুখ অন্তত দুবার ধুতে হবে। ফেস ওয়াশ হিসেবে পেপেসমৃদ্ধ পণ্য ব্যবহার করতে পারলে ভালো। টোনার হিসেবে গোলাপ জল ব্যবহার করতে পারেন।’
বর্জন করতে হবে কোমল পানীয়
খুব গরমে কোমল পানীয় বর্জন করা ভালো জানিয়ে অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী বলেন, ‘খুব গরমে কোমল পানীয় খেলে পানিশূন্যতা বেড়ে যেতে পারে। এ ছাড়া চা, কফি যত কম পারা যায় তত ভালো। এর বদলে লেবুর পানি, শুধু পানি, তাজা ফলের রস, ডাবের পানি খেতে পারেন।’
পানিশূন্যতা প্রতিরোধে
মাথা ঝিম ঝিম করা, ঠোঁট নীল হয়ে যাওয়া, চেতনা লোপ পাওয়া এগুলো পানি শূন্যতার লক্ষণ। পানিশূন্যতা প্রতিরোধে এক লিটার পানিতে এক চা চামচ চিনি, এক চা চামচ লবণ মিশিয়ে খাওয়ার পরামর্শ দেন অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী।
ডায়াবেটিসের রোগীরা থাকুন সচেতন
নববর্ষে ঘুরতে ডায়াবেটিস রোগীদের সাবধান হতে হবে জানিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিকেল অফিসার ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু বলেন, ‘বেশি পরিশ্রম করলে ডায়াবেটিস রোগীদের হাইপোগ্লেসেমিয়া দেখা দিতে পারে। রক্তে শর্করার মাত্রা অনেক কমে গিয়ে এটি হয়।’
মাথা ঘোরা, মাথা ঝিঁঝি করা, অস্থির লাগা, চোখে অন্ধকার দেখা, মেজাজ খিটখিটে হওয়া, দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস ইত্যাদি হাইপোগ্লেসেমিয়ার লক্ষণ। এমন হলে আক্রান্ত ব্যক্তির মুখে মিষ্টিজাতীয় খাবার পুরে দিতে হবে বলেও জানান ডা. হিমু।
হিটস্ট্রোক প্রতিরোধে
ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু বলেন, ‘অতিরিক্ত গরমে থাকলে বা রোদের মধ্যে বেশি শারীরিক পরিশ্রম করলে হিটস্ট্রোক দেখা দিতে পারে। দেহের তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়া, ঘাম হওয়া বন্ধ হয়ে শরীর লালচে হয়ে যাওয়া, দ্রুত হৃৎস্পন্দন, শ্বাসকষ্ট, আচার-আচরণে পরিবর্তন, যেমন— হঠাৎ রাগান্বিত হওয়া, অস্থিরতায় ভোগা, পারিপার্শ্বিক অবস্থা সম্পর্কে কোনো ধারণা না থাকা, খিচুনি থেকে অনেকে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে ইত্যাদি হিটস্ট্রোকের লক্ষণ।’
এমন হলে শরীরে কাপড় যতটুকু সম্ভব খুলে ঠান্ডা পানি ঢালতে হবে। তবে বরফ-শীতল পানি নয়। কুচকি ও বগলের নিচে আইসপ্যাক দিতে হবে। রোগীকে বাতাস করতে হবে। এমনটাই পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।
শিশুদের প্রতি রাখতে হবে খেয়াল
একটু ঘামলেই শিশুরা পানিশূন্যতায় ভোগে এবং হিটস্ট্রোকেও আক্রান্ত হয়। তাই শিশুদের দিকে বেশি খেয়াল রাখা জরুরি জানিয়ে ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু বলেন, ‘শিশুদের রোদের ভেতর বেশি দৌড়াদৌড়ি করতে দেবেন না। শিশুদের পানি ও অন্যান্য তরল খাবার বেশি করে খেতে দিন।’