বুকজ্বলা : কী খাব, কী খাব না

মাছ ও চিপস, মুরগির তরকারি, ঝাল মসলাযুক্ত খাবার, বিরিয়ানি, রেজালা—এসব খেলে কি বুক জ্বলবে? খাব? ভালো প্রশ্ন। তবে উত্তরটা এত সহজ নয়। বুকজ্বলা যাকে বলে, মানে হার্ট বার্ন, ব্যাপারটি হার্ট বা হৃদযন্ত্রের কোনো সমস্যা নয়। বুক থেকে গলা পর্যন্ত জ্বলুনির মতো অস্বস্তি হলো হার্ট বার্ন।
পাকস্থলী ও খাদ্যনালি—এ দুটোর সংযোগস্থলে রয়েছে একটি রন্ধ্রনিয়ন্ত্রক। পাকস্থলীর অম্ল যদি সেই রন্ধ্রনিয়ন্ত্রক দিয়ে গলিয়ে ওপরের দিকে উঠে খাদ্যনালি বেয়ে যায় এবং খাদ্যনালিকে উত্তেজিত করে, তাহলে বুকজ্বলা হয়। কিছু কিছু খাবার বুকজ্বলা বাড়াতে পারে।
বুকজ্বলা বাড়ায় : বেশি খাবার, খুব বেশি খাবার
বুকজ্বলার সমস্যা হলে কী পরিমাণ খাবার খাচ্ছেন, সেদিকে নজর দিতে হবে। আবার একসঙ্গে অনেক খাবার খেয়ে ফেলা—বুকজ্বলার ব্যাপারে এসব বিচার-বিবেচনা খুব গুরুত্বপূর্ণ। খাওয়ার পরিমাণ কমানোর জন্য ছোট ছোট থালায় খাবেন।
চর্বিবহুল খাবার
চর্বিবহুল খাবার পাকস্থলীতে থাকে দীর্ঘ সময়। ‘আর যত দীর্ঘ সময় থাকবে,অস্বস্তি হবে তত বেশি’, বলেন ‘টেল মি হোয়াট টু ইট ইফ এই এভ এসিড রিফ্ল্যাক্স’ বইয়ের লেখক ম্যাগি। চর্বিবহুল খাবার, যেমন : ফ্রাইড চিকেন, চিপস, উইংস ইত্যাদি। চর্বিবহুল খাবার বেশি পরিমাণে খেলে দুই রকম ক্ষতি হয়—বেশি খাওয়া হলো, আবার বেশি চর্বি খাওয়াও হলো। বুকজ্বলা অনেক বাড়বে।
বকুজ্বলা কমাতে হলে : চর্বি খাওয়া কমাতে হবে
প্রিয় খাবারগুলো যে একেবারে বাদ দিতে হবে, তা নয়। এগুলো ভিন্নভাবে রান্না করলে, প্রস্তুত করলে প্রশমিত থাকবে বুকজ্বলা। কিছু খাবার তেলে না ভেজে, সেঁকে, আগুনে ঝলসে, গ্রিল করে বা রোস্ট করে খাওয়া যায়। রান্নার রকমফের ঘটিয়ে বুকজ্বলা যায় কমানো, স্বাস্থ্যও হয় ভালো।
বুকজ্বলা বাড়ে : অম্লধর্মী খাবারে
অম্ল খাবার, যেমন—টমেটো সস, সালসা, সাইট্রাস ফল, কমলালেবু, জাম্বুরা, গ্রেপফ্রুট খালি পেটে খেলে অনেক সময় ঢেঁকুর বা বুকজ্বলা হয়। ভিনেগারও বেশি অম্ল, তবে এটি তো এমনি খাওয়া হয় না, সালাদ ড্রেসিং ও অন্যান্য ডিশে যোগ করতে হয়।
অম্লধর্মী খাবার এড়ালে ভালো
টমেটো, সাইট্রাস ফল ছাড়া তাজা ফল, সবজি আরো আছে। তবে খেলেও খেতে হবে কম, ছোট টুকরা।
যেসব পানীয় উসকে দেয় বুকজ্বলা
পানীয়র ব্যাপারেও সতর্কতা চাই। এর মধ্যে রয়েছে কফি, ক্যাফেইনযুক্ত চা, কোলা, অন্যান্য কার্বোনেটেড পানীয় ও মদ। ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় পাকস্থলীতে অম্লরস ক্ষরণ উদ্দীপন করে এবং মদ্যজাতীয় পানীয় খাদ্যনালির রন্ধ্রনিয়ন্ত্রককে শিথিল করে, ঘটায় বুকজ্বলা ও কোমল পানীয়ের সোডা পেট ফাঁপায়, তা থেকে হয় বুকজ্বলা।
অন্য পানীয় গ্রহণ করুন
বুকজ্বলা রোধ করতে হলে এমন সব পানীয় পছন্দ করুন, যেগুলো হিসহিসে, গ্যাসযুক্ত নয়। বিকল্প হলো ভেষজ চা, দুধ বা শুধু জল। খাদ্যের সঙ্গে জল পান করলে পাকস্থলীর অম্লরস লঘু হবে; বুকজ্বলা কমবে। টমেটো, কমলা বা লেবুর রস পরিহার করুন।
বুকজ্বলা ধরায় চকলেট
চকলেটে রয়েছে ক্যাফেইনের মতো উদ্দীপক এবং ক্যাফেইন হতে পারে বুকজ্বলার জন্য দায়ী। চকলেট খাওয়া বাদ না দিতে পারলে কম খাওয়া যেতেই পারে।
বুকজ্বলা ঘটায় ঝাল মসলাজাতীয় খাবার
ঝাল মসলা খাবার, হট সস আনে বুকজ্বলা। আবার রসুন ও পেঁয়াজ ঝাল বা তেমন মসলা খাবার না হলেও ঘটায় বুকজ্বলা।
বুকজ্বলা রোধে পরামর্শ
এই ঝাল গরম খাবার নিয়ন্ত্রণ করুন। তবে এর জন্য সারা জীবন পানসে মৃদু খাবার খেতে হবে কেন? কমিয়ে আনুন ঝাল। মরিচ মসলা কম খান। খাবারে যোগ করুন পুদিনা পাতা, ধনেপাতা। মজা হবে ঝালের বদলে।
খাবারের পরপরই শুয়ে পড়বেন না। রাতের খাবারের তিন ঘণ্টা পর শোয়া ভালো। ধূমপান করলে, স্থূল দেহ হলে বুকজ্বলা বেশি হয়। তাই স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, ধূমপান বর্জন শ্রেয়। বেশি বুকজ্বলা হলে, বেশিদিন চললে চিকিৎসককে দেখানো আবশ্যক।
লেখক : চিকিৎসক, বারডেম।