চলচ্চিত্র শিল্পে ট্রাম্পের শুল্ক বোমা

আবার ট্রাম্পের নতুন চমক! এবার নিশানায় চলচ্চিত্র শিল্প। আমেরিকার বাইরে তৈরি হওয়া সিনেমার ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক চাপানোর ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এখন প্রশ্ন—বলিউড থেকে দক্ষিণী সিনেমা পর্যন্ত, কে কতটা ঝুঁকবে?
অভিবাসন থেকে সিনেমা—ট্রাম্পের “কঠোর নীতি”
ভিসা, অভিবাসন, বিদেশি পণ্য—সব কিছুতেই কঠোর নীতি নিচ্ছেন ট্রাম্প। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হলো সিনেমা। হঠাৎ মনে হচ্ছে, শুধু সিনেমা নয়, ট্রাম্প যেন পুরো বিনোদন জগতকে “চেক” দিতে চাইছেন!
সিনেমার ওপর শুল্ক আরোপ
সোমবার তিনি আবার ঘোষণা দেন। নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন “আমাদের সিনেমার ব্যবসা অ্যামেরিকা থেকে অন্য দেশ চুরি করে নিয়েছে। শিশুর থেকে লিজেন্স নিয়ে নেওয়ার মতো।"
রয়টার্স জানায়, মে মাসে তিনি আগেও শুল্ক হুমকি দিয়েছিলেন, কিন্তু তখন বিস্তারিত কিছু না জানানোয় বিনোদন জগতের মধ্যে ধোঁয়াশা ছড়িয়েছিল। এবার ধোঁয়াশা কাটলো শুল্ক আসছে, এবং বড়সড়।
দ্য গার্ডিয়ান লিখেছে, গত জানুয়ারিতে ট্রাম্প হলিউডের প্রবীণ তারকাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। আলোচনায় ছিলেন সিলভেস্টার স্ট্যালোনও। তারকাদের সুপারিশে হলিউডকে বাঁচাতে কর ছাড় বা ট্যাক্স ক্রেডিটের কথাও বিবেচনা করেছেন তিনি।
কার্যকর কবে, কীভাবে?
চলচ্চিত্র শিল্পে শুল্ক কবে এবং কীভাবে কার্যকর হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। প্রোডাকশন হাউজ, স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম ও সিনেমা হলে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমার ওপর কীভাবে এই শুল্ক ধার্য হবে, তা পরে হোয়াইট হাউস ব্যাখ্যা দেবে।
মার্কিন চলচ্চিত্রের বাস্তবতা
হলিউড শুধু ক্যালিফোর্নিয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। সাম্প্রতিক ডেডপুল অ্যান্ড উলভারিন, উইকেড, গ্লাডিয়েটর ২–এর মতো সিনেমার শুটিং হয়েছে বিদেশে। অর্থাৎ, বিপুল টাকা বিদেশে গিয়ে খরচ হয়েছে।
প্রোডপ্রো-র বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর অ্যামেরিকায় প্রোডাকশনে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২২ সালের তুলনায় ২৬% কম। অন্যদিকে খরচ বেড়েছে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, কানাডা ও ব্রিটেনে।
বিশেষ করে কানাডায় প্রভাব মারাত্মক। কানাডার বণিকসভা বলছে, মার্কিন প্রযোজনার খরচ বেড়ে গেলে দুই দেশের অর্থনীতি ও মাঝারি আয়ের চাকরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
দর্শকের ওপর প্রভাব
যদি প্রযোজকরা বিদেশে শুটিং চালিয়ে যান, ১০০% শুল্ক শেষ পর্যন্ত দর্শকের ঘাড়ে চাপবে। টিকিটের দাম বাড়বে, স্ট্রিমিং খরচও বাড়বে। মানে, সিনেমা দেখার খরচ আরও বাড়ছে—দর্শকরা বলবেন, “ওমাইগড, এবার ওটিটিতেই বসে থাকি!”
বলিউডের জন্য ঝটকা
আমেরিকা হলো বলিউডের বড় বাজার, যেখানে ৫২ লক্ষের বেশি ভারতীয় প্রবাসী রয়েছেন। শুল্ক চাপলে টিকিটের দাম বেড়ে যাবে, দর্শক কমবে, ওটিটি প্ল্যাটফর্মের দিকে ঝুঁকবে মানুষ।
বিদেশে ভারতীয় সিনেমার আয়ের ৩৫–৪০% আসে অ্যামেরিকা থেকে। শুল্ক বাড়লে ডিস্ট্রিবিউশনের খরচ দ্বিগুণ হয়ে অনেক সিনেমার মুক্তি ঝুঁকির মুখে পড়বে। ছোট ও মাঝারি প্রযোজনা সংস্থারই সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে।
বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ
ফিল্ম স্টাডিজের অধ্যাপক মানস ঘোষ বললেন, “হলিউডের অবস্থা এখন খারাপ। অন্যদিকে, এশিয়ার সিনেমা গ্লোবাল সেন্টার হয়ে উঠছে। ট্রাম্প শুল্ক চাপিয়ে অন্তত নিজের দেশের সার্কুলেশন বাঁচাতে চাইছেন।"
তিনি বলেন, বলিউডের জন্য ক্ষতি বেশি, কারণ সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক সিনেমা ফ্লপ হয়েছে। বিপরীতে দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমা টিকে যাবে, কারণ তাদের বড় বাজার রয়েছে মালয়েশিয়া, দুবাই, জাপান, দক্ষিণ আফ্রিকা প্রভৃতি দেশে।
চলচ্চিত্র গবেষক সোমেশ্বর ভৌমিক বলেন, “এটা সাপ্লাই চেইনের যুগ। কোথায় কোন কাজ হচ্ছে, তার ওপর নির্ভর করে খরচ। শুল্ক আদৌ কীভাবে ধার্য হবে, সেটি এখনো অস্পষ্ট। তবে ভারতীয় সিনেমার ব্যবসা এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেই।"
ফিল্ম স্টাডিজের অধ্যাপক অনিন্দ্য সেনগুপ্ত বলেন,“গ্লোবালাইজেশন যেখানে সবার জন্য বাজার খুলে দিয়েছে, ট্রাম্প উল্টো পথে হাঁটছেন। মার্কিন সংস্কৃতিকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন। তবে সফল হবেন না।"
তিনি আরও যোগ করেন,“ট্রাম্প আসলে ভারতের মতো জাতীয় সেন্সরশিপ চালু করতে চাইছেন। বিরোধী স্বর নিয়ন্ত্রণ করতেই বাইরের দেশের সিনেমা আটকে দিতে চাইছেন। এতে ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, বিশ্ব বিনোদন শিল্পেও প্রভাব পড়বে।"