মাহরিন চৌধুরীকে আসিফ বললেন ‘জয়ী’, পড়শী বললেন ‘বীর’

আগুন ছড়াচ্ছে, ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে আসছে, আতঙ্কে ছোটাছুটি করছে শিশুরা। এমন মুহূর্তে দাঁড়িয়ে নিজেকে সরিয়ে নিতে পারতেন তিনি। পারেননি। শিক্ষিকা মাহেরীন চৌধুরী বেছে নিয়েছেন নিজের নয়, ২০ শিক্ষার্থীর প্রাণ বাঁচানোর লড়াই। শেষ পর্যন্ত তিনিই আর ফিরলেন না—ফিরলেন সাহসিকতার প্রতীক হয়ে।
উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় যে ভবনে আগুন ধরে যায়, সেখানেই ছিলেন মাহেরীন চৌধুরী। ঠিক সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে তিনি ছাত্রছাত্রীদের নিরাপদে বের করে আনেন একে একে। মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে শেষ পর্যন্ত নিজেই আটকে যান আগুনের লেলিহান গ্রাসে।
দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে এই শিক্ষকতার অতুলনীয় গল্প। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হাজারো মানুষ তাকে স্মরণ করছেন গভীর শ্রদ্ধায়। তার মৃত্যুতে যেন এক তীব্র বেদনার স্রোত বইছে—যেখানে শিক্ষক, মা, যোদ্ধা—তিনটি পরিচয় একাকার হয়ে গেছে।
সঙ্গীতশিল্পী আসিফ আকবর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘হেরে গেলেন মা মাহরীন, জিতে গেলেন শিক্ষিকা মাহরীন ম্যাডাম। জিতিয়ে গেলেন শিক্ষকতার মত মহান পেশাকে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভবিষ্যতের আলো বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টায় নিজেই পরপারে চলে গেলেন ম্যাডাম মাহেরীন।’
গায়িকা পড়শীর পোস্টেও ছিল একই রকম আবেগ, ‘এই শিক্ষিকা শুধু একজন শিক্ষক নন, তিনি এই দেশের সত্যিকারের বীর। তাঁর আত্মত্যাগ শহীদের মর্যাদার চেয়ে কম কিছু নয়।’
গত সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের মাইলস্টোন স্কুলের একটি ভবনে বিধ্বস্ত হয় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান। বিধ্বস্তের সঙ্গে সঙ্গেই আগুন ধরে যায় পুরো ভবনে। সেই ভবনে ছিলেন বহু শিক্ষার্থী—অনেকেই আহত, কেউ কেউ আর বেঁচে নেই। আর এই মৃত্যুপুরী থেকে অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থীকে জীবিত ফিরিয়ে আনেন মাহেরীন ম্যাম। নিজের প্রাণ রেখে।
তার এই আত্মত্যাগ শুধু একটি দুর্ঘটনার গল্প নয়, এক দেশের আত্মার গল্প। এক শিক্ষক দেখিয়ে দিলেন—শিক্ষকতা কেবল পেশা নয়, সেটি হতে পারে আত্মার চূড়ান্ত উজাড় করে দেওয়া এক দায়বোধ।