‘এখন এত ছেলেমেয়ে অভিনয় করছে, তারপরও শিল্পী সংকট যাচ্ছে না। এমন অনেক ছেলেমেয়ে আছে যাদের আমি নিজেই চিনি না। আর সাধারণ দর্শক যদি নায়ক-নায়িকা না চেনে, তা হলে তোতারা হলেও আসবে না।’ বর্তমান সময়ের চলচ্চিত্র নিয়ে এভাবেই বলছিলেন ঢাকাই ছবিতে একসময়ের সাড়াজাগানো অভিনেত্রী রীনা খান।

নায়ক-নায়িকাদের দর্শক চেনে না কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন যারা অভিনয় করছে তাদের অনেকেই ভালো অভিনয় পারে না। তাদের ভালো করা নিয়ে কোনো চেষ্টাও নেই। কোনোভাবে একটা ছবি মুক্তি পেলেই পরের ছবির জন্য ব্যস্ত হয়ে ওঠে। পরিচালকরাও কী মনে করে যেন তাকে পরের ছবিতেও নিয়ে নেয়। দর্শকের মতামত যাচাইয়ের কোনো প্রয়োজন নেই এখানে। এখনকার পরিচালকরা ভালো অভিনয়শিল্পী তৈরি করতে পারছে না। আর নায়ক-নায়িকারা ছুটছে টাকার পেছনে।

টাকার প্রয়োজন তো সব সময়ের। তাহলে কি তাঁদের সময়ে টাকার প্রয়োজন ছিল না। এ প্রশ্নের জবাব তিনি দিলেন অন্যভাবে, ‘আমাদের কাছে অভিনয়টা ছিল নেশার মতো। আমাদের চিন্তা বেশি হতো এসব নিয়ে যে চরিত্রের সাথে শাড়িটা ঠিক আছে কি না, শাড়ির সাথে জুতা যেটা পরেছি সেটা ঠিক কি না। আমাদের ব্যক্তিগত চাহিদা কম ছিল। গাড়ি হতে হবে, বাড়ি হতে হবে, এমন বিষয় আমাদের সময় কম ছিল। সবাই ভালো অভিনয় দিয়ে নিজের অবস্থান করতেই ব্যস্ত থাকত। যে কারণে একটি ছবি মুক্তি পেলেই সবাই চিনে ফেলত অভিনয়শিল্পীকে। আর এখন কয়েকটি ছবি মুক্তি পেলেও অনেককেই চেনার উপায় থাকে না।

তাহলে কি ভালো অভিনয়ের অভাবেই আমরা দর্শক হারাচ্ছি? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পর্দায় দর্শক অভিনয় দেখে, গল্পের উপস্থাপন দেখে। এখনকার পরিচালকরা আগের মতো জীবননির্ভর গল্প নিয়ে কাজ করে না। গল্পের প্রয়োজনে সেট নির্ধারণ করে না। কারণ সেটের টাকায় ১০ দিন শুটিং করতে পারে। চলচ্চিত্রের প্রতি শিল্পীদের ভালোবাসা কমে গেছে, দর্শক ভালোবাসবে কীভাবে’?

এ থেকে মুক্তির উপায় তার কাছে একটাই, চলচ্চিত্রের জন্য ভালোবাসা। ‘চলচ্চিত্রের প্রতি ভালোবাসাই পারে সব সমস্যার সমাধান করতে। দর্শকদের কাছে টানতে ভালো গল্প, ভালো পরিচালক লাগবে। সবাই বলে যে এখন সব ডিজিটাল হয়ে গেছে, ছবি বানাতে কিছুই লাগে না। একটা কথা কেউ বুঝতে চায় না। ভিডিও করার মাধ্যমটি বদলেছে, আর কিছুই বদলায়নি। আর যারা ভালো অভিনয় না যেনে কাজ করছে, তাদের বলতে চাই- এটা সাময়িক। এভাবে বেশিদিন চলচ্চিত্রে টেকা যাবে না।

রীনা খান বর্তমানে সায়মন তারেক পরিচালিত ‘গুন্ডামি’সহ আরো চারটি ছবিতে কাজ করছেন।