১৩৫টি প্রেক্ষাগৃহের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত

নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশে সিনেমা হল ছিল এক হাজার ২০০। গুণগতমানের ছবির অভাব ও বাংলা চলচ্চিত্রে অশ্লীলতার কারণে ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যেতে থাকে সিনেমা হলগুলো। ২০১৩ সাল পর্যন্ত ৩৫ মিলিমিটার প্রজেক্টরে চলছিল প্রায় পাঁচশ সিনেমা হল। ভালো ছবির অভাবের সঙ্গে ২০১৪ সালে এসে যুক্ত হয় নতুন প্রযুক্তি—ডিজিটাল প্রজেকশন। কারণ, ২০১৪ সালের শুরু থেকে বন্ধ হয়ে যায় ৩৫ মিলিমিটারের ছবি, যে কারণে সিনেমা হলে যুক্ত করতে হচ্ছে ডিজিটাল প্রজেক্টর। এমনিতেই সিনেমা হলের ব্যবসা নেই, লোকসান গুনতে হচ্ছে প্রতি মাসে। তার ওপর নতুন ডিজিটাল প্রজেকশনের ব্যবস্থা করতে হলে নতুন করে বিনিয়োগ করতে হবে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা, যা কোনো সিনেমা হলের মালিক বহন করতে পারবেন না। এমন অবস্থায় বন্ধ হতে বসেছে বাংলাদেশের আরো ১৩৫টি সিনেমা হল।
এ বিষয়ে জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার আবদুল আজিজ বলেন, ‘আমরা এ পর্যন্ত ১৩৬টি সিনেমা হলে ডিজিটাল প্রজেকশনের ব্যবস্থা করেছি। ২০টি সিনেমা হলের সঙ্গে আমাদের কাজ চলছে, সে হলগুলোতে প্রয়োজনমতো আমাদের প্রজেক্টর দিয়ে ছবি চালাই। আরো ৫০টি হলের সঙ্গে আমাদের কাজ চলছে। আশা করি, আগামী রোজার ঈদের আগে আমাদের ডিজিটাল সিনেমা হলের সংখ্যা দাঁড়াবে ২৫০টিতে। আমাদের একার পক্ষে বাংলাদেশের সব সিনেমা হলে মেশিন বসানো সম্ভব নয়। আমি আশা করব, সরকার এ বিষয়ে নজর দেবে। গত ১৯ এপ্রিল জাজের নতুন ছবির মহরতে তথ্যমন্ত্রী এসেছিলেন। আমি সবার সামনেই এ বিষয়টি তুলে ধরেছি। আশা করি, সরকার বিষয়টি ভেবে দেখবে। আর সরকার যদি এ বিষয়ে নজর না দেয়, তাহলে আমিও বাংলাদেশে ছবি বানানো বন্ধ করে দেব। কারণ, ছবি বানিয়ে দেখাব কোথায়?’
বাংলাদেশ প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিয়া আলাউদ্দি বলেন, ‘বাংলাদেশে এ মুহূর্তে ৩৫০টি সিনেমা হল আছে। এর মধ্যে ১৩৬টি হলে জাজ প্রজেক্টর বসিয়েছে। শুনছি, তারা আরো ৭০টি হলে কাজ করবে। বাকি থাকে আরো ১৩৫টি হল, যাদের পক্ষে নতুন করে টাকা বিনিয়োগ সম্ভব নয়। একেকটি সিনেমা হলকে ডিজিটাল করতে খরচ হয় প্রায় ২৫ লাখ টাকা। শুধু মেশিন বসালেই চলবে না, কারণ আমাদের সিনেমা হলে ব্যবসা নেই বলে দীর্ঘদিন এর কোনো উন্নয়ন হচ্ছে না। প্রায় সিনেমা হলে বসার আসনগুলো ভালো অবস্থায় নেই। এ কারণে আরো খরচ করতে হবে ১০ লাখ টাকা। এই মোট ৩৫ লাখ টাকা, এত টাকা খরচ করে সিনেমা হল চালানোর মতো অবস্থা কারো নেই। এ বিষয়ে আমরা হল মালিকদের পক্ষে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেছি। আমরা কোনো আশার আলো দেখছি না। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে আবারো বসার কথা রয়েছে, সরকার যদি এ বিষয়ে এখনই উদ্যোগ না নেয়, তাহলে একসময় সিনেমা হল দেখতে আমাদের ভারত যেতে হবে।’
প্রায় দেড়শ হল জাজ চালাচ্ছে, বাকি একশ হল কীভাবে চলছে—এমন প্রশ্নের জবাবে আলাউদ্দি বলেন, ‘আমরা যেহেতু সিনেমা হলের মালিক, তাই হল তো আমাদের চালাতেই হবে। এ কারণে বাজারে যে প্রজেক্টর ভাড়া পাওয়া যায়, সেই প্রজেক্টর ভাড়া করে বাকি হলগুলো চালাতে হচ্ছে। এগুলোর গুণগত মান ভালো নয়, যে কারণে দর্শক ছবি দেখে মজা পান না। বাংলাদেশে জাজের মতো আরো কয়েকজন উদ্যোক্তা দরকার, অন্যথায় বন্ধ হয়ে যাবে বাকি ১৩৫টি সিনেমা হল। সরকারের সঙ্গে আমরা একাধিকবার বসেছি, এখনো বসছি, কোনো কাজ হবে বলে আমার মনে হয় না।’