হাসান ইমামকে পরিচালক সমিতির সংবর্ধনা

৮০তম জন্মদিন উপলক্ষে আজ বুধবার দুপুর ১২টায় এফডিসির পরিচালক সমিতির অফিসকক্ষে পরিচালক সমিতির পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হয় বর্ষীয়ান অভিনেতা হাসান ইমামকে। সফল সংগঠক, পরিচালক, নায়ক এমন বহুগুণে গুণান্বিত এই মানুষটির রয়েছে বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবন। গত ২৭ জুলাই হাসান ইমাম ৮০ বছর পূর্ণ করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে দোয়া পাঠ করেন অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামান। নিহত পরিচালক, শিল্পী ও কলাকুশলীদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালনের পর সৈয়দ হাসান ইমামকে পরিচালক সমিতির পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান সমিতির সহসভাপতি সোহানুর রহমান সোহান। এরপর সহকর্মীরা হাসান ইমামের জীবন তুলে ধরেন।
পরিচালক ছটকু আহমেদ বলেন, ‘আমাকে পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার হিসেবে সবাই চেনে, আমি যখন কাজ শুরু করি তখন থেকেই হাসান ভাইয়ের কাছে কাজ শিখেছি। কীভাবে চিত্রনাট্য লিখতে হয়, কোনটার পর কোনটা কেন আসবে, সেটা অনেক সুন্দর করে বুঝিয়ে বলতে পারতেন তিনি, এখনো পারেন।
এ টি এম শামসুজ্জামান বলেন, ‘তিনি একজন সাদামনের মানুষ। কখনো কোনো বিষয় নিয়ে তাঁর কাছে গেলে সমাধান পাওয়া যেত। কোথাও কেউ মারা গেলে বা কারো কোনো সমস্যা হলে সবার আগেই তাঁকে পাওয়া যায়।’
চিত্রনায়িকা সুজাতা বলেন, ‘আমার সঙ্গে প্রথম হাসান ভাইয়ের দেখা হয় ‘ধারাপাত’ ছবির শুটিংয়ে। আমাকে যখন বলা হলো নায়ক হাসান ইমাম, তখন থেকেই আমি খুব ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু কাজ করতে গিয়ে দেখলাম, আমি একজন শিক্ষকের সঙ্গে কাজ করছি। তিনি আমাকে অভিনয় থেকে শুরু করে প্রতিটি বিষয়ে আমাদের সাহায্য করেছেন।’
পরিচালক আমজাদ হোসেন বলেন, ‘যে লোকটি মুখভরা হাসি নিয়ে প্রশ্ন করতেন কী, কেমন আছো? এটি আমাদের হাসান ইমাম। চলচ্ত্রিকে সমৃদ্ধ করতে এমন কোনো বিষয় নেই যেখানে হাসান ইমামের হাতের ছোঁয়া লাগেনি।’
সৈয়দ হাসান ইমামের সহধর্মিণী লায়লা হাসান বলেন, ‘সে বাইরের কাজে যেমন সিরিয়াস, ঘরেও তাই। অনেক মানুষ আছেন যাঁরা বাইরের কাজে এত বেশি ব্যস্ত থাকেন যে ঘরের খবর নেওয়ার সময় পান না। হাসান ইমাম সে রকম নয়। এমনও হয়েছে যে, সে ফোন করে বলল, আমি এই মাত্র ট্রেন থেকে নামলাম। সিলেট থেকে চট্টগ্রাম যাচ্ছি দুদিনের জন্য। এমনও হয়েছে সে বাসায় ফিরতে পারেনি। কিন্তু বাসায় কী আছে, না আছে সব খবরই সে রাখত। পরিবারের প্রতিটি মানুষের সাথে তার আলাদা খাতির আছে। তার সঙ্গে থেকে জীবনে যেটা বেশি পেয়েছি, সেটা সততা।’
অনুষ্ঠানের মধ্যমণি হাসান ইমাম বলেন, ‘আমি মানুষের যে পরিমাণ ভালোবাসা পেয়েছি, জীবনে আর কিছু পাওয়ার নেই। অনেক পেশা আছে যেখানে পরিশ্রম বেশি, কিন্তু আমাদের পেশায় অনেক বেশি সম্মান পাওয়া যায়। যে কারণে এই পেশাটা চালাতে হবে সততার সাথে। অন্যথায় মানুষ প্রতারিত হবে, আর নিজে কোনো স্থান পাবেন না। যা করেছি তা ভালোবেসে করেছি। বাকি জীবনটাও কাজের মধ্যেই থাকতে চাই।’
নির্মাতা এস এ হক অলিক বলেন, ‘হাসান ইমাম, যার নাম উচ্চারণ করতে গেলে আগে তাঁর গুণের কথা বলতে হয়। এক কথায় বলতে গেলে বলব, তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র এবং মিডিয়ার প্রতিটি স্তরেই রয়েছেন শ্বাসপ্রশ্বাসের মতো। তাঁকে পরিচালক সমিতির পক্ষ থেকে সংবর্ধনার মাধ্যমে এই সম্মানটুকু দিতে পেরে আমরা অনেক গর্ববোধ করছি।’
উল্লেখ্য, ১৯৩৫ সালের ২৭ জুলাই ভারতের বর্ধমানে জন্ম নেন জীবন্ত এই কিংবদন্তি।