বলিউডের হুমকি হয়ে উঠছে হলিউড

হিন্দি ছবি যেন দিন দিন ‘নিজভূমে পরবাসী’ হয়ে যাচ্ছে। ভারতের মাটিতে শক্তপোক্ত ঘাঁটি গড়তে যাচ্ছে হলিউডি ছবি। আলামত এখন বেশ স্পষ্ট। যেখানে বলিউডি ছবি পুঁজির টাকাই তুলতে পারছে না সেখানে শতকোটি রুপি আয় করে নিচ্ছে হলিউডি ছবি। তবে, ভালো গল্পের বলিউডি ছবি এই কঠিন সময়েও প্রচুর আয় করছে।
উদাহরণ দেওয়া যাক। বছরের অর্ধেক পেরিয়ে গেছে। বক্স অফিসের কাগজপত্র বলছে, ভালো ব্যবসা করেছে ‘তনু ওয়েডস মনু রিটার্নস’, ‘পিকু’, ‘দিল ধাড়াকনে দো’ ও ‘বদলাপুর’। এই ছবিগুলোর গল্প আর দশটা বলিউড ছবির মতো নয়। ফলাফলও হাতেনাতে, মন্দ সময়েও ভালো ব্যবসা। ভালো গল্পের দিকে ঝুঁকে পড়ার এই ধারাটাও কিন্তু হলিউডি ফিল্ম থেকেই আসা।
ভারতীয় ছবির পরিচালকরা এখন ভালোই বুঝতে পারছেন, নিজেদের মধ্যে তাঁদের আর প্রতিযোগিতা তেমন নেই। প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এখন লড়তে হবে হলিউডি ছবির সঙ্গে। টাইমস অব ইন্ডিয়ার বিশেষ প্রতিবেদনে বেশ কয়েকভাবে যাচাই করা হয়েছে পরিস্থিতি।
১. বিগ বাজেটের বলিউডি ফিল্মকে টেক্কা দিয়ে দেখিয়েছে হলিউডি ছবি। ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস ৭’, ‘অ্যাভেঞ্জার্স : এইজ অব আলট্রন’ এবং হালের ‘জুরাসিক ওয়ার্ল্ড’ সবগুলো ছবিই ভালো ব্যবসা করেছে ভারতে। একই সপ্তাহে মুক্তি পাওয়া বলিউডি ছবিগুলো এগুলোর দাপটে রীতিমতো মুখ থুবড়ে পড়েছে। ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস’-এর কাছে মার খেয়েছে ‘ডিটেকটিভ ব্যোমকেশ বক্সি’। ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস ৭’ ভারতের বাজার থেকে তুলে নিয়েছে ১১০ কোটি রুপিরও বেশি, আর অ্যাভেঞ্জার্সের আয় ৭৭ কোটি রুপি। ‘জুরাসিক ওয়ার্ল্ড’ এখন পর্যন্ত আয় করেছে ৩৫ কোটি রুপি। ব্যবসা যেমন চলছে, তাতে আয় বেড়ে কততে গিয়ে ঠেকবে তাও হিসাব করা যাচ্ছে না! নির্দ্বিধায় বলা যায়, ছবির ব্যবসার শেষটাও মারমার কাটকাট হবে। এর কাছে মার খেয়েছে এমরান হাশমি-বিদ্যা বালানের লেটেস্ট রিলিজ ‘হামারি আধুনি কাহানি’। বিগ বাজেট বলিউডি ছবি যে হলিউডের ছবির সঙ্গে দৌঁড়ে পারছে না, তা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
২. ভারতের বাজারে হলিউডি ছবি কিন্তু এমনি ব্যবসা করছে না। ইংরেজি ভাষায় নয়, দর্শকদের কাছে পৌঁছানোর জন্য বিভিন্ন ভাষায় ডাব করে মুক্তি দেয়া হচ্ছে এসব হলিউডি ছবি। হিন্দি, তামিল, তেলেগু এবং বাংলা ভাষায় হলিউডি ছবি ডাব হচ্ছে সবচেয়ে বেশি এবং সবগুলো রাজ্য থেকেই ভালো ব্যবসা করছে ছবিগুলো। মূল ইংরেজির ছবির ব্যবসাও ভালো হচ্ছে। কিন্তু ডাব করার কারণে হলিউডি ছবি আরো বেশি ভারতীয় দর্শকদের কাছে পৌঁছাতে পারছে। ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াসের মোট আয়ের অর্ধেকই এসেছে অন্যান্য ভাষায় ডাবিং করা ছবিগুলো থেকে। সায়েন্সফিকশন বা ধুম-ধাড়াক্কা অ্যাকশনের হলিউডি ছবির জনপ্রিয়তা তো রয়েছেই। সামনের দিনগুলোতে হলিউডি হরর, কমেডি এবং রোমান্টিক ছবিও ভালো ব্যবসা করার সম্ভাবনা রয়েছে ভারতের বাজারে।
৩. হলিউডের বড় বড় ছবির প্রযোজকরা এখন নিজ উদ্যোগে ভারতে ছবি মুক্তি দিচ্ছেন। ভারতে ছবি পরিবেশনার জন্য আলাদা করে আর পরিবেশকদের কাছে যাচ্ছেন না। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী ৭ আগস্ট মুক্তি পাবে ‘মিশন ইম্পসিবল রগ ন্যাশন’। এ রকম বিগ বাজেট হলিউডি ছবির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামতে রাজি নন কোনো বলিউডি প্রযোজক। অন্য তারিখ খুঁজছেন তারা এখন ছবি মুক্তির জন্য। বিগ বাজেটের হলিউডি ছবি মুক্তি পেলে সেটাকে এখন হুমকি হিসেবেই দেখেন ভারতীয় প্রযোজক-পরিবেশকরা।
সামনে মুক্তির মিছিলে রয়েছে টার্মিনেটর জেনিসিস (৩১ জুলাই), মিশন ইম্পসিবল রগ নেশন (৭ আগস্ট), স্পেখত (৬ নভেম্বর), স্টার ওয়ারস এপিসোড ৭ (১৮ ডিসেম্বর)। সবগুলো ছবিই দর্শকের বহুল আকাঙ্ক্ষিত। তাই বলিউড যদি ভালো গল্পের ছবি দিতে না পারে তাহলে তাদের দর্শক হলিউডি ছবির কাছেই যাবে। দিন দিন সংখ্যাটা ভারী হতে থাকলে বলিউডি নির্মাতাদের কপালে ভোগান্তি আছে!