‘টেলিফিল্মে কয়েকটা গান লাগালেই সিনেমা হয়ে যায়’

বাংলা ছবিতে পুলিশের ভূমিকায় প্রায়ই দেখা যায় তাঁর মুখ। তিনি হলেন কামরুল ইসলাম। ফরিদপুরের ভাঙ্গা থানায় বেড়ে ওঠা, এসএসসি পাস করে ১৯৮৮ সালে জগন্নাথ কলেজে (বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) ভর্তি হয়েছিলেন। শখের বশে এফডিসিতে আসা, সেখান থেকে কাজের শুরু। পরে পড়ালেখা আর না করলেও চলচ্চিত্রে পাকাপাকিভাবে ‘পুলিশ’ হয়ে যান। বর্তমানে তিনি চলচ্চিত্রের সব ধরনের পোশাক সরবরাহ করে থাকেন। এনটিভি অনলাইনের সাথে কথা বলেছেন অনেক কিছু নিয়ে।
প্রশ্ন : চলচ্চিত্রের সাথে যুক্ত হলেন কীভাবে?
উত্তর : প্রায়ই এফডিসির গেটে দাঁড়িয়ে থাকতাম, একসময় গোঁফওয়ালা কাদের দারোয়ানের সাথে ভালো খাতির হয়ে যায়। আমি তাঁকে দাদা বলে ডাকতাম, তিনি আমাকে আদর করতেন। মাঝে মাঝে আমাকে ভেতরে ঢুকতে দিতেন।সেখানে নায়িকা রোজিনার ভাই লেবু ভাইয়ের সাথে পরিচয় হয়। তিনি আমাকে আজাদ নামে একজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। সেই আজাদ ভাই আমাকে পুলিশের অভিনয় করার সুযোগ দেন। তখন সিনেমায় কাজের অনেক দাম ছিল। আমি পড়ালেখা ভুলে এখানেই কাজ শুরু করে দিলাম। কিছুদিন পরে তিনি আমাকে পুলিশের কিছু ড্রেস দিয়ে বললেন, ‘এগুলো ভাড়া দে, শুধু অভিনয় করলে পেট চলবে না। এই শুরু পোশাক ভাড়া দেওয়া।
প্রশ্ন : ব্যবসা কেমন চলে?
উত্তর : ব্যবসা যেমন আছে তেমনি সম্মানও আছে। আস্তে আস্তে সব ধরনের মাল সাপ্লাই দেওয়া শুরু করলাম। এখন আমার কাছে থানা, হাসপাতাল, ফায়ার সার্ভিস, স্টেশন-যাই বানাতে চান আমি তার সেট সাপ্লাই দিতে পারব। এমনকি বৃষ্টি চাইলে ঝরনা, অথবা জেনারেটর-মানে একটা শুটিং করতে যা লাগে আমার কাছে তা-ই আছে। টাকা পাই, পরিচয় দিলে মানুষ ভালোবাসে। কিন্তু এখন যে অবস্থা তাতে, নিজের পেট চালাতেই সমস্যা হয়।
প্রশ্ন : এমন অবস্থা হলো কেন?
উত্তর : মাঝে নোংরা ছবির জন্য মার্কেটটা নষ্ট হয়ে গেছে। এখন আর দর্শক হলে আসতে সাহস পায় না। মাঝে মাঝে মনে হয়, এই কাজ ছেড়ে চলে যাই। কিন্তু মন মানে না। ভালোবাসার কারণে এই কাজ ছাড়তে পারি না।
প্রশ্ন : এখন তো ভালো ছবি হচ্ছে...
উত্তর : কিসের ভালো ছবি? আগে যখন ছবি বানানো হতো, তখন একটা ড্রেস ঠিকমতো না লাগলে নতুন কাপড় দিয়ে বানিয়ে দিতে হতো। আর এখন টাকা বাঁচানোর জন্য পারলে ড্রেস ছাড়াই কাজ শেষ করে ফেলে। হাসপাতালের সেট বানাতে আমাকে সব যন্ত্রপাতি কিনতে হয়েছিল, কিন্তু এখন আর এসব ব্যবহার হয় না। কোনোভাবে কাজ শেষ করতে পারলেই যেন হয়। গল্প ঠিক থাকে না। লাইট নেয় না ঠিকমতো। আগের মতো জেনারেটর লাগে না।
প্রশ্ন : সিনেমা কি নাটকের মতো হয়ে যাচ্ছে?
উত্তর : যাচ্ছে কি? গেছে! নাটক বানাইতেও কিছু বিষয়ে সজাগ থাকতে হয়, না হলে টিভিতে দেখাবে না। আর সিনেমাতে এখন আর সে সব নাই। সবার ভাবখানা এমন যে কোনো রকম ছবি শেষ করব, তাহলেই চলে। কেউ দেখলে দেখুক, না দেখলে নাই। আর নাটকের চেয়ে বেশি টাকাও খরচ করতে চায় না। টেলিফিল্মে কয়েকটা গান লাগালেই সিনেমা হয়ে যায়।