বিয়ের পর রোহিঙ্গা তরুণীসহ পলাতক শিক্ষক

বিয়ের পর রোহিঙ্গা তরুণীসহ পলাতক এক মাদ্রাসা শিক্ষককে খুঁজছে পুলিশ। গত মাসে কক্সবাজারের টেকনাফের কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির থেকে ওই তরুণীকে নিয়ে এসে বিয়ে করেন ওই শিক্ষক।
ওই শিক্ষকের নাম সোয়েব হোসেন জুয়েল (২৫)। তাঁর বাড়ি মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার চারিগ্রাম এলাকায়। তিনি ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকার একটি মাদ্রাসার শিক্ষক। আর রোহিঙ্গা তরুণীর নাম রাফিজা (১৮)।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে গত ১৩ সেপ্টেম্বর সিংগাইরের চারিগ্রাম দাসোরহাটি গ্রামের মাওলানা তাজুল ইসলামের বাড়িতে আশ্রয় নেয় ৯ সদস্যের একটি রোহিঙ্গা পরিবার। ওই পরিবারের সঙ্গে ছিলেন তরুণী রাফিজা। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে শোয়েব হোসেন জুয়েল ওই বাড়িতে গিয়েছিলেন রোহিঙ্গা পরিবারকে দেখার জন্য।
এদিকে, মানিকগঞ্জে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় নেওয়ার খবর পেয়ে পুলিশ গত ১৪ সেপ্টেম্বর ওই পরিবারসহ উপজেলার ধল্লা এলাকা থেকে আরো ১১ রোহিঙ্গাকে আটক করে সবাইকে কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে পাঠায়।
স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ জানায়, গত মাসে মানিকগঞ্জ থেকে টেকনাফের কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে যান জুয়েল। সেখানে অবস্থান করে রোহিঙ্গা তরুণী রাফিজার পরিবারকে খুঁজে বের করেন তিনি। পরে রাফিজার বাবা ফয়েজুল ইসলাম ও মা হাফসা বিবির সম্মতিতে ধর্মীয় রীতি মেনে তাকে বিয়ে করেন জুয়েল। ওইদিনই টেকনাফ থেকে জুয়েল তাঁর চাচাতো ভাইয়ের মাধ্যমে বাড়িতে রাফিজাকে বিয়ের খবর জানান। এরপর থেকেই ওই দম্পতি পলাতক।
যদিও বাংলাদেশি নাগরিকের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের বিয়ে নিষিদ্ধ করেছে সরকার।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ২১ সেপ্টেম্বর কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে ত্রাণ দিতে যায় সিংগাইর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি। সেখানে পরিচিত এক শিক্ষকের সঙ্গে দেখা হয় জুয়েলের। ত্রাণ বিতরণ শেষে শিক্ষকরা ২৩ সেপ্টেম্বর মানিকগঞ্জে ফেরেন। শিক্ষক সমিতির ওই গাড়িতে করেই জুয়েল তার নববধূ রাফিজাকে টেকনাফ থেকে নিয়ে আসেন।
এ বিষয়ে সিংগাইর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাংবাদিকদের বলেন, গাড়িতে আসন খালি থাকায় জুয়েলসহ বোরকা পরা এক নারী তাদের গাড়িতেই এসেছে। বোরকা পরে থাকায় ওই নারী রোহিঙ্গা কি না, সেটি তাঁরা বুঝতে পারেননি।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে জুয়েলের বাবা বাবুল হোসেন বলেন, তাঁর ছেলে অত্যন্ত মেধাবী। জুয়েল আলিম শ্রেণিতে লেখাপড়া করে ঢাকার একটি মাদ্রাসায় কয়েক মাস হলো চাকরি করছেন। ছেলে পছন্দ করে বিয়ে করেছেন। তাই রোহিঙ্গাদের বিয়ের ব্যাপারে সরকারি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হলে তিনি ছেলের স্ত্রীকে বাড়িতে তুলতে প্রস্তুত।
চারিগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সাজেদুল আলম তালুকদার স্বাধীন বলেন, ‘আমি যতটুকু শুনেছি চারিগ্রামে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা পরিবারের এক নারীকে জুয়েল বিয়ে করেছেন।’
চেয়ারম্যান জানান, বিষয়টি জানার পর জুয়েলের ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
জানতে চাইলে সিংগাইর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার ইমাম হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনাটি তিনি শুনেছেন। তাঁদের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। ওই দম্পতির সন্ধান পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিংগাইর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. যুবায়ের জানান, তাঁর কাছে জুয়েলের বাবা রোহিঙ্গা তরুণীকে বিয়ের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে তাঁর ছেলে ও ছেলের বউ কোথায় আছেন, তা তিনি জানেন না বলে জানিয়েছেন।