হাকিমপুরের আম গেল সুইজারল্যান্ডে

দিনাজপুরের সীমান্তবর্তী হাকিমপুর উপজেলার গোহাড়া গ্রামের কৃষক নিরঞ্জন চন্দ্র রায় গুড অ্যাগ্রিকালচার প্র্যাকটিস (গ্যাপ) পদ্ধতিতে উৎপাদিত আম প্রথমবারের মতো বিদেশে রপ্তানি করেছেন। হাকিমপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে এবং পরামর্শ অনুযায়ী তিনি এই সাফল্য অর্জন করেন।
নিরঞ্জন জানান, তিনি বারি-৪ জাতের আম গ্যাপ পদ্ধতিতে চাষ করেছেন। এ পদ্ধতিতে আম পরিপক্ব হওয়ার সময় গাছে থাকা অবস্থায় ব্যাগ দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। ফলে কীটনাশক ছাড়াই আম শতভাগ রোগ ও পোকামাকড় মুক্ত থাকে এবং বিষমুক্ত ও নিরাপদ ফল উৎপাদন সম্ভব হয়। এতে উৎপাদন খরচ কমে এবং ফলন বাড়ে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পরিচালিত ‘পার্টনার’ ও ‘ক্লাস্টার ডেমোনস্ট্রেশন ফর গ্যাপ স্ট্যান্ডার্ড অব ফ্রুটস’ প্রকল্পের আওতায় নিরঞ্জন এই আম বাগান তৈরি করেন। এক একর জমিতে বারি-৪, গৌরমতি ও আম্রপালি জাতের আম চাষ করেছেন তিনি।
বাগানের পরিচর্যা কর্মী আব্দুল হাকিম জানান, পাঁচ বছর বয়সী এই বাগানে গত চার বছর ধরে তিনি কাজ করছেন। এবছর আমের উচ্চ ফলন হয়েছে, তবে বাজারমূল্য কিছুটা কম।
নিরঞ্জন জানান, আগে ওই জমিতে ইউক্যালিপটাসের বাগান ছিল। পরে পরিবারের সিদ্ধান্তে আম বাগান করেন। কৃষি অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী বাগান পরিচর্যা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণের ফলে তিনি সফলভাবে আম বিদেশে রপ্তানি করতে পেরেছেন।
আম রপ্তানির আগে প্রয়োজনীয় ম্যাক্সিমাম রেসিডিউ লিমিট (এমআরএল) পরীক্ষা করা হয়, যাতে আমে ক্ষতিকর রাসায়নিকের মাত্রা না থাকে। কৃষি অফিসের সহায়তায় এসব পরীক্ষা করা হয়েছে।
হাকিমপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরজেনা বেগম জানান, এই উপজেলায় চলতি মৌসুমে প্রথমবারের মতো গ্যাপ পদ্ধতিতে পার্টনার প্রকল্পের আওতায় আম চাষ প্রদর্শনী বাস্তবায়ন হয়েছে। পৌর শহরের গোহাড়া গ্রামের উদ্যোক্তা কৃষক নিরঞ্জন রায়কে এক একর আম বাগানের একটি প্রদর্শনী প্লট দেয়া হয়। বাগানের মাটি ও পানি পরীক্ষা, পরিচর্যা থেকে শুরু করে কখন কোন বালাইনাশক স্প্রে করতে হবে, সব বিষয়ে তাকে পরামর্শ দেয়া হয়। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে নিয়মিত তার বাগান মনিটরিং করা হয়েছে। ফল তোলার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত যে পরিচর্যাগুলো না করলেই নয়, তার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
আরজেনা বেগম জানান, সেফ ফ্রুটস হারভেস্ট বা প্রসেসের ক্ষেত্রে ব্যাগিং পদ্ধতি খুব জরুরি একটি পরিচর্যা। যেখানে বালাইনাশকের পরিমিত ব্যবহার থেকে শুরু করে একটি ফলের সবকিছুই এ পদ্ধতির মাধ্যমে করা যায়।
আরজেনা আরও জানান, উপজেলা কৃষি অফিস যখন যে পরামর্শ দিয়েছে কৃষক নিরঞ্জন রায় তা অনুসরণ করেছেন। তিনি গ্যাপ পদ্ধতি অনুসরণ করে বারি-৪ আম চাষ করে প্রথম বারের মতো হাকিমপুর উপজেলা থেকে ২ হাজার ৪৫০ কেজি আম সুইজারল্যান্ডসহ ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে রপ্তানি করেছেন। এটি এই উপজেলার কৃষিক্ষেত্রে একটি মাইলফলক সৃষ্টি করেছে বলে আমি মনে করি।