নওগাঁর সাপাহারে ভাইয়ের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বোন। জমিজমার জাল দলিল করে অন্য জায়গায় বিক্রির অভিযোগ করেছেন তিনি। ভুক্তর দাবি—এর পেছনে একটি চক্র জড়িয়ে আছে। সাপাহার উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজাহান হোসেনেও দিকেও অভিযোগের তীর ছুড়েছেন তিনি।

আজ রোববার (১৫ জানুয়ারি) বিকেলে নওগাঁ জেলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে মাসিরা চৌধুরী নামে ওই নারী সংবাদ সম্মেলন করে তাঁর বড় ভাই মাকসুমুল হক চৌধুরী ও উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মাসিরা চৌধুরী জানান, তিনি পরিবার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকায় থাকেন। জেলার সাপাহার উপজেলার খেরুন্দা ফুটকইল গ্রামে তাঁর বাবার বাড়ি। তাঁর বাবা মকসুদাল হক চৌধুরী মারা যাওয়ার সময় ২২ একর সম্পত্তি রেখে যান। বড় বোন মুনিরা চৌধুরী কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। তাঁদের বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তির ওয়ারিশ তিনি ও তাঁর বড় বোনসহ তাঁর বড় ভাই মাকসুমুল হক চৌধুরী ও মা মৃত নার্গিস মুর্শিদা। বাবার রেখে যাওয়া বাড়ি, আবাদি জমি, পুকুরসহ অন্যান্য সম্পত্তির কোনো বাটোয়ারা দলিল হয়নি। বড় ভাই মাকসুমুল হক তাঁর দুই বোন ও মায়ের স্বাক্ষর জাল করে ২০১৮ সালে তৎকালীন ভূমি কর্মকর্তাদের যোগসাজশে জাল হেবানামা বা দানপত্র দলিল করে ১০ দশমিক ৭৩ শতাংশ জমি লিখে নেন। তিনি জাল হেবানামা দলিল সূত্রে মাসিরা ও তাঁর বোনকে বঞ্চিত করে জুলফিকার আলী নামে এক ব্যক্তির কাছে বায়না দলিল করে নেন।

মাসিরা চৌধুরী আরও জানান, এ বিষয়ে জানতে পেরে ২০২০ সালে ৯ মার্চ ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে একটি মামলা করেন। সেই মামলার শুনানি নিয়ে আদালত বিষয়টি তদন্তের জন্য সিআইডি পুলিশকে নির্দেশনা দেন। সিআইডির তদন্তে জাল হেবানামার বিষয়টি প্রমাণিত হয়। সিআইডি পুলিশের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আলমগীর শরীফ ২০২১ সালের ৩ অক্টোবর আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিলে আদালত মাকসুমুল হক, জমির বায়না দলিল গ্রহীতা জুলফিকার আলীসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। মামলা চলমান থাকা সত্ত্বেও ২০২১ সালের ১২ নভেম্বর তৎকালীন সাপাহার উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার মুক্তি আরা খাতুনের যোগসাজশে জাল হেবানামা দলিল করা ১০ একর সম্পত্তিসহ ২১ একর সম্পত্তি তাঁর ভাইয়ের কাছ থেকে ছয়টি বিক্রয় দলিল ও একটি বায়না দলিল রেজিস্ট্রি সম্পাদন করেন। 

মাসিরার দাবি—জমি ক্রেতাদের মধ্যে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহজাহান হোসেনসহ ১৯ জন ব্যক্তি রয়েছেন। উপজেলার তাজপুর ও খেরুন্দা মৌজায় থাকা বিবদমান ২১ একর সম্পত্তির ওপর বর্তমানে হাইকোর্টের স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা ও নিম্ন আদালতের ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে।

মাসিরা চৌধুরী অভিযোগ করেন, সাপাহার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নিজের নামে নেওয়া ৩৩ শতক কৃষি জমি সাব-রেজিস্ট্র ও বসতবাড়ির ৩৩ শতক জমি বায়না দলিল করে নেওয়া ছাড়া বাকি দলিলগুলোতে তিনি এক নম্বর সাক্ষী হিসেবে রয়েছেন।

মাসিরা চৌধুরী বলেন, ‘বেশ কিছু দিন ধরে তাঁর পেছনে লেলিয়ে দেওয়া সন্ত্রাসীরা খেরুন্দা ও তাজপুর মৌজায় পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া জমির দখল ছেড়ে দেওয়ার জন্য হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।’

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে মাকসুমুল হক চৌধুরী বলেন, ‘১৯৮৩ সালে বাবা আমার ও মায়ের নামে জমি হেবা দলিল করে দিয়ে গেছেন। বাকি যেসব জমি আছে সেগুলো বাটোয়ারা হয়ে গেছে। জাল হেবা দলিল করার অভিযোগের বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমার বড় বোন কয়েক দিন আগে সাপাহারে উপজেলা ভূমি কর্মকর্তার কাছে গিয়ে আমার পক্ষে সাক্ষ্য দিয়ে গেছেন।’ 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাপাহার উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজাহান হোসেন বলেন, ‘আমি যে জমি কেনার জন্য বায়না করেছি এবং অন্যরা মাকসুমুল হক চৌধুরীর কাছ থেকে যেসব জমি কিনেছেন—সেগুলো নিষ্কণ্টক জেনেই আমরা কিনেছি। জমি নিয়ে বিতর্ক থাকলে কি ভূমি কর্মকর্তারা রেজিস্ট্রি করে দিতেন? আমি অন্যায় প্রক্রিয়ায় জমি কিনে নিইনি কিংবা দখলের চেষ্টা করিনি। বরং মাসিরা চৌধুরী আমাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করে জমির দখল নিতে বাধার সৃষ্টি করছেন। আইনিভাবেই আমরা সেসব মামলা মোকাবিলা করব।’