মসজিদে বিস্ফোরণ : গ্যাস সংযোগের ত্রুটি জানতে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পশ্চিম তল্লায় বায়তুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণের পাঁচ দিনের মাথায় মসজিদের আশপাশে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ শুরু করেছে তিতাস গ্যাস কোম্পানি। তিতাসের কয়েকজন কর্মকর্তা ও সিবিএ নেতার নেতৃত্বে আজ সোমবার সকালে মসজিদটির দরজার সামনে ও ডান পাশের গলিতে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ শুরু করা হয়।
এ বিষয়ে তিতাস কেন্দ্রীয় সিবিএর সভাপতি কাজিম উদ্দিন জানান, মসজিদে বিস্ফোরণের পর তিতাসের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) আবদুল ওয়াহাবকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত টিম গঠন করা হয়। সেই কমিটির নেতৃত্বে গ্যাস সংযোগের কোথায় ত্রুটি বা লিকেজ আছে, তা বের করার জন্য এই খোঁড়াখুঁড়ির কাজ চলছে।
তিতাসের নারায়ণগঞ্জ অফিসের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মফিজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটি তদন্তকাজের অংশ। আমরা লাইনটা বের করার চেষ্টা করছি। লাইনটা বের করে আমরা দেখব, এর অবস্থানটা কোথায় এবং এখানে কোনো লিকেজ আছে কিনা, এটি আমরা আইডেন্টিফাই (চিহ্নিত) করব। অভিযোগ এসেছে যে, গ্যাস লিকেজ থেকে এ ঘটনা ঘটেছে। এখানে কোনো লিকেজ আছে কিনা, লিকেজ থেকে দুর্ঘটনার কোনো আশঙ্কা তৈরি হয়েছে কিনা, সেটাই আমরা আইডেন্টিফাই করব। এখানে তদন্ত কমিটি কাজ করবে।’
তিতাসের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘তিতাস যদি আগে থেকে এ বিষয়ে জানত, আমি চ্যালেঞ্জ করলাম, কোনো খবর আমরা পেয়েছি, অথচ অ্যাটেন্ড করা হয়নি—এটা যদি কেউ বলতে পারে, তাহলে যা ব্যবস্থা নেওয়ার, সেটা আমি নেব। এটা টোটালি মিথ্যা কথা বলা হয়েছে। উনারা তিতাসে যানই নাই। হয়তো দেখা গেছে, উনারা মিস্ত্রি ডেকে নিয়ে আসছেন। তার সঙ্গে যদি কথা বলে থাকে, এর দায়-দায়িত্ব তো তিতাস নেবে না। তিতাসে গেছে, কিন্তু অ্যাটেন্ড করা হয়নি, এমন কোনো রেকর্ড নাই।’
এর আগে বিস্ফোরণের ঘটনায় তিতাসের কোনো গাফিলতি থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আলী মো. আল মামুন। বিস্ফোরণস্থল পরিদর্শনে গিয়ে গত শনিবার সকালে সাংবাদিকদের এ কথা জানিয়েছিলেন তিনি।
আল মামুন বলেছিলেন, ‘গ্যাস লিকেজ ও লাইন মেরামত না করার বিষয়ে মুসল্লিদের অভিযোগ তদন্ত করা হচ্ছে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে দোষী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিস্ফোরণের ঘটনায় পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।
এদিকে বায়তুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় মনির ফরাজি (৩৩) নামের আরো একজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রোববার রাত ১১টার দিকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তাঁর।
বিষয়টি এনটিভি অনলাইনকে নিশ্চিত করেছেন বার্ন ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন। এ নিয়ে এই ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ২৬ জন হয়েছে। এ ছাড়া আশঙ্কাজনক অবস্থায় ১১ জন চিকিৎসাধীন।
ডা. সামন্ত লাল সেন জানিয়েছেন, যাঁরা চিকিৎসাধীন, তাঁদের অবস্থাও খুব ভালো নয়। কেউ শঙ্কামুক্ত নয়।
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার বায়তুস সালাত জামে মসজিদে গত শুক্রবার এশার নামাজের সময় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে এখন পর্যন্ত ২৬ মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। এরই মধ্যে ২৬ জনের মরদেহই তাঁদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ ছাড়া গুরুতর অবস্থায় ১১ জন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন।