আচরণবিধি লঙ্ঘন করে নৌকার প্রার্থীর ভূরিভোজ!

পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার খানমরিচ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন উপলক্ষে বিশাল ভূরিভোজ আয়োজন করার অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বিরুদ্ধে।
এই ভূরিভোজে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী নুর-উন-নবী মণ্ডলের (দুলাল মাস্টারের) কর্মী-সমর্থকরা খুশি হলেও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা ক্ষুব্ধ। এতে সমালোচনাও হচ্ছে।
অন্য প্রার্থীদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন। এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে মৌখিক অভিযোগ করেও কোনো সুফল পাননি বলেও জানান তারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা নিয়ে গত শুক্রবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নৌকা ও ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থকদের কয়েক দফা সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অন্তত ১৪ জন আহত হয়। এ সময় উভয় প্রার্থীর নির্বাচনী অফিস ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে দুই পক্ষের সমর্থকরা। পরে দুই প্রার্থীর কয়েক শতাধিক সমর্থক লাঠিসোটা নিয়ে হামলার প্রস্তুতি নিলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও থানা পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
গতকাল রোববার দুপুরে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর লোকজন আচরণবিধি লঙ্ঘন করে এলাকায় বিশাল মিছিল বের করলে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ভ্রাম্যমাণ আদালতে প্রার্থীকে আট হাজার টাকা জরিমানা করেন। কিন্তু এর পরও আজ সোমবার দুপুরে নৌকার প্রার্থী সহস্রাধিক লোকের ভূরিভোজের আয়োজন করেন।
আজ দুপুরে নৌকার প্রার্থী দুলাল মাস্টারের ময়দানদীঘির গ্রামের বাড়ির পাশে সাতটি চুলায় রান্না করা হয় এ ভূরিভোজের খাবার। প্রায় ১০ মণ চাল ও দুটি গরুর মাংস দিয়ে সহস্রাধিক লোককে ভূরিভোজ করানো হয়। এ সময় ছবি তুলতে গেলে প্রার্থীর লোকজন সংবাদকর্মীদের ওপর মারমুখী আচরণ করে এবং ছবি তুলতে বাধা দেয়।
খবর পেয়ে সেখানে ছুটে আসেন প্রার্থীর ভাই ও স্থানীয় ক্যাডার মাসুদ রানা। পরে তিনি সংবাদকর্মীদের ওপর চড়াও হন এবং সংবাদ প্রকাশ করলে ভবিষ্যতে ভালো হবে না বলে হুমকি দেন। খাবারের প্যান্ডেল তৈরি করা হয় ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মনোয়ার হোসেন (মিঠু) ও শরিফুল ইসলাম (মোজাম) অভিযোগ করে জানান, দুলাল মাস্টার নির্বাচনের আগে ইউনিয়নবাসীকে ডেকে ভূরিভোজ করিয়েছেন—এটা কি নির্বাচনি আচরণবিধির লঙ্ঘন নয়? বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটানিং অফিসারকে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেও কোনো সুফল পাওয়া যায়নি।
ভুড়িভোজের বিষয়ে দুলাল মাস্টার বলেন, এই খাবারের আয়োজন সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। তবে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ এবং উপজেলা আওয়ামী লীগনেতাদের জন্য এই আয়োজন করা হয়েছে বলে জানি।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটানিং অফিসার রোকসানা নাসরিন বলেন, বিষয়টি শুনেছি। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে প্রার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইউএনও মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান বলেন, বিষয়টি আমি অবগত হয়েছি। দ্রুতই এই বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে উপজেলা প্রশাসন।
খানমরিচ ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নুর-উন-নবী মণ্ডল (দুলাল মাস্টার), স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঘোড়া প্রতীকে মো. মনোয়ার হোসেন (মিঠু) ও আম প্রতীকে শরিফুল ইসলাম (মোজাম) নির্বাচন করছেন। আগামী ২৬ ডিসেম্বর ভাঙ্গুড়া উপজেলার চারটি ইউপিতে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।