বাংলাদেশের নির্বাচন সর্বোচ্চ অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে : ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত

‘মুক্ত ও সুষ্ঠু’ নির্বাচন আয়োজনে সরকারের প্রস্তুতির কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনকে অন্তর্ভুক্তিমূলক হিসেবে দেখার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মারি মাসদুপুই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, নির্বাচন কমিশন খুব ভালোভাবে কাজ করবে। এটাই যে তাদের উদ্দেশ্য তা পরিষ্কার। তাই আশা করছি, নির্বাচনটি যতটা সম্ভব অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে।’
তবে নির্বাচন কতটা অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে, তা প্রস্তুতির ধরন ও প্রয়োগের ওপর নির্ভর করছে বলেও এ সময় উল্লেখ করেন ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত।
ইউএনবির সংবাদদাতাসহ কয়েকজন সাংবাদিকের সঙ্গে আলাপকালে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘অবশ্যই আমরা সবাই জানি, বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ রয়েছে। যতক্ষণ না সেই দল নিজেদের সংস্কার করছে, ক্ষমা চাইছে ও তাদের কিছু নেতার বিচার হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত যে তাদের নির্বাচনে অংশ নেওয়া কঠিন সেটি আমরা বুঝি।’
ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতের মতে, অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন মানে শুধু বড় দল নয়, স্বতন্ত্র ও ছোট দলগুলোর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাও গুরুত্বপূর্ণ। যত বেশি দল অংশ নেবে, নির্বাচন তত বেশি অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে।
চলতি বছরের মে মাসে অন্তর্বর্তী সরকার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় এক গেজেটের মাধ্যমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও দলটির অঙ্গসংগঠনগুলোর সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। যতদিন না আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল দলটির নেতাদের বিচার সম্পন্ন করছে, ততদিন এই নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে বলেও জানানো হয়।
রাষ্ট্রদূত বলেন, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ‘মুক্ত ও সুষ্ঠু’ নির্বাচন আয়োজনের পরিবেশ তৈরিতে কাজ করছে। এটি তাদের অঙ্গীকার। ফ্রান্স এই প্রচেষ্টাকে সমর্থন করছে। সম্ভব হলে, আমরা ইউরোপীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক দল পাঠিয়েও সহায়তা করতে চাই।
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি বা এপ্রিলের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে—এমন ইঙ্গিত দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রস্তুতি শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
ঢাকায় ফরাসি দূতাবাসে রোববার (১৩ জুলাই) রাতে অনুষ্ঠিত ফ্রান্সের জাতীয় দিবসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তৃতায় রাষ্ট্রদূত মাসদুপুই বলেন, গণতন্ত্র মানে স্বাধীনতা, সমতা, ভ্রাতৃত্ববোধ ও অন্তর্ভুক্তি। তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার বিচক্ষণ ও অসাধারণ নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন সত্যিকারের গণতান্ত্রিক নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তাতে অনেক বাধা আসবে। তবে সাহস ও দৃঢ় প্রত্যয় থাকলে বাধাগুলো কাটিয়ে ওঠা যাবে।’
এয়ারবাস ক্রয়সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আলোচনা এখনো চলছে। এটি বন্ধ হয়নি।’
যুক্তরাষ্ট্র থেকে বোয়িং বিমান কেনার বিষয়টি বিবেচনায় নিচ্ছে বাংলাদেশ, যাতে বাণিজ্য ঘাটতি কমানো যায় ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপিত ৩৫ শতাংশ শুল্ক (আগামী ১ আগস্ট থেকে কার্যকর) এড়ানো সম্ভব হয়।
রাষ্ট্রদূতের মন্তব্য, ‘আমরা চাই সবাই সমান সুযোগ পাক। আমাদের মনে হয়, বিমানের বহরে এয়ারবাস ও বোয়িং—উভয় ধরনের উড়োজাহাজ থাকলে যাত্রীদের জন্য তা সবচেয়ে বৈচিত্র্যপূর্ণ সেবা নিশ্চিত করবে।’
গত জুনে লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এয়ারবাসের নির্বাহী সহ-সভাপতি ওয়াউটার ভ্যান ওয়ার্স। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে আমরা একটি অগ্রাধিকারমূলক দেশ হিসেবে দেখছি।’
ভ্যান ওয়ার্স আরও জানান, বছরে ৮০০টি বিমান সরবরাহ করা এয়ারবাস শুধু যাত্রীবাহী নয়, হেলিকপ্টার ও যুদ্ধবিমান তৈরিতেও দক্ষ। বাংলাদেশ যদি বিমানের বহরে এয়ারবাস যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে রপ্তানি ঋণ সংস্থা (ইসিএ) থেকে ৮৫ শতাংশ অর্থায়ন পাওয়া যেতে পারে।
রাষ্ট্রদূত মাসদুপুই বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের চলমান সংস্কারের প্রতি ফ্রান্সের সমর্থন রয়েছে। সরকারের সঙ্গে আরও গভীরভাবে যুক্ত হতে আমরা আগ্রহী। অনেক প্রকল্প পর্যালোচনার পর্যায়ে রয়েছে। তাই সেগুলোর জন্য ধৈর্য ধরতে হবে। তবে আমরা চাই, সেগুলো যেন দ্রুত বাস্তবায়ন করা যায়। আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক খুব ভালো, সব সময়ই ইতিবাচক। আমরা নানা খাতে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করছি ও সেটা আরও বাড়াতে চাই।’
মাসদুপুই জানান, জলবায়ু পরিবর্তন পর্যবেক্ষণে স্যাটেলাইট ডেটা ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশের সার্বভৌম সক্ষমতা বাড়াতে মহাকাশ প্রযুক্তি নিয়ে নতুন সহযোগিতা শুরু করছে ফ্রান্স। উন্নয়ন ও কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনের ক্ষেত্রেও সহযোগিতার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।