পাকিস্তানে প্রবল বন্যায় কলেরার বিস্তার ও স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে সতর্কতা

পাকিস্তানের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে প্রবল বন্যা চলতে থাকায় দেশজুড়ে সতর্কতা জারি করেছে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, এ অবস্থায় জরুরি পদক্ষেপ না নিলে কলেরাসহ অন্যান্য সংক্রামক রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে পারে।
জাতিসংঘের তথ্যানুযায়ী, জুন মাসের শেষের পর থেকে ভারি বর্ষণ, বন্যা এবং ভূমিধসের কারণে ৬০ লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। পাকিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত এক হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে, সাড়ে ১২ হাজারের বেশি বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে এবং সাড়ে ৬ হাজার গবাদিপশু হারিয়ে গেছে। এছাড়া দেশটির বিস্তীর্ণ অংশে ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। খবর আল জাজিরার।
২০ লাখেরও বেশি মানুষ নিজেদের বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র সরে গেছে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা সতর্ক করেছেন, আক্রান্ত এলাকায় পানিবাহিত রোগ, বিশেষ করে কলেরা দ্রুত ছড়াতে পারে।
কলেরা একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ, যা দূষিত খাবার ও পানির মাধ্যমে ছড়ায়। এটি ডায়রিয়া, বমি এবং পেশী ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে। চিকিৎসা ছাড়া এটি কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই প্রাণঘাতী হতে পারে। তবে সাধারণ ওরাল রিহাইড্রেশন বা অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসা প্রাণ রক্ষা করতে পারে।
সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শোভা লক্ষ্মী জানিয়েছেন, “পরিষ্কার পানি, স্বাস্থ্যবিধি এবং পুষ্টিকর সহায়তা ত্রাণ কার্যক্রমের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।”
ব্রিটিশ রেড ক্রস সতর্ক করেছে, “উচ্চ স্থানে থাকা আশ্রয়কেন্দ্র, সরকারি ভবন বা জরুরি শিবিরে যথাযথ শৌচাগারের অভাব রয়েছে। হাত ধোয়ার সুবিধাও নেই। ফলে সংক্রামক রোগ যেমন কলেরা এবং আমাশয় দ্রুত ছড়াতে পারে।”

জলবায়ু পরিবর্তন পাকিস্তানে বন্যার অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। দেশটি বিশ্বের সবচেয়ে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ ১০টি দেশের মধ্যে অন্যতম, অথচ বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণে মাত্র এক শতাংশের কম দায়ী দেশটি। ২০২৫ সালের ক্লাইমেট রেইট ইনডেক্স প্রতিবেদনে পাকিস্তান ২০২২ সালের তথ্যের ভিত্তিতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের শীর্ষে ছিল।
পাকিস্তানে রেকর্ড তাপমাত্রা ও ভারি বর্ষণের ফলে ২০২২ সালে দেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছিল। এতে প্রায় তিন কোটি ৩০ লাখ মানুষ প্রভাবিত হয় এবং এক হাজার ৭০০-এর বেশি মানুষের মৃত্যু হয়, প্রায় ১৪.৮ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয় এবং ১৫.২ বিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়।
দেশটির ১৩ হাজারেরও বেশি হিমবাহ গলতে শুরু করেছে, যা বন্যা, অবকাঠামো ক্ষতি, প্রাণহানি এবং জলসম্পদের অভাবের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এ বছর জানিয়েছে, “পাকিস্তানের স্বাস্থ্যসেবা ও দুর্যোগ মোকাবিলা ব্যবস্থা চরম জলবায়ু পরিস্থিতিতে শিশু ও প্রবীণদের প্রয়োজন মেটাতে ব্যর্থ হচ্ছে।”

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের লরা মিলস বলেছেন, “উচ্চ তাপমাত্রা আরও প্রবল ও অনিয়মিত আবহাওয়া তৈরি করছে। পাকিস্তানের শিশু ও প্রবীণরা জলবায়ু সংকটের সর্বাধুনিক সীমানায় রয়েছে, যা অতিরিক্ত মৃত্যু ও রোগের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ক্রমশ অতিরিক্ত চাপের মুখে অচল হয়ে পড়ছে।”