রুশ যুদ্ধবিমানের আকাশসীমা লঙ্ঘনে ন্যাটোর পরামর্শ চেয়েছে এস্তোনিয়া

উত্তর ইউরোপের রাষ্ট্র এস্তোনিয়া জানিয়েছে, শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাশিয়ার তিনটি মিগ-৩১ যুদ্ধবিমান তাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে। এ ঘটনায় দেশটি ন্যাটো সদস্য দেশগুলোর জরুরি পরামর্শ চেয়েছে।
এস্তোনিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ঘটনাকে “বেপরোয়া” ও “অভূতপূর্ব” উসকানি বলে অভিহিত করেছে। মন্ত্রণালয়ের দাবি, রুশ যুদ্ধবিমানগুলো অনুমতি ছাড়া ফিনল্যান্ড উপসাগরের ওপর দিয়ে প্রবেশ করে টানা ১২ মিনিট এস্তোনিয়ার আকাশে অবস্থান করে। খবর বিবিসির।
ন্যাটো মুখপাত্র জানান, জোটের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর বিমান তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে রুশ যুদ্ধবিমানগুলোকে আটকায়। ইতালি, ফিনল্যান্ড ও সুইডেন তাদের যুদ্ধবিমান মোতায়েন করে ন্যাটোর পূর্ব সীমান্ত শক্তিশালী করতে।
তবে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছে, তাদের বিমানগুলো “নির্ধারিত রুটে আন্তর্জাতিক আকাশসীমা মেনেই উড়ছিল” এবং তারা অন্য কোনো রাষ্ট্রের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেনি।
এস্তোনিয়ার প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টেন মিখাল শুক্রবার এক জরুরি বৈঠকে বলেন, “ন্যাটোর প্রতিক্রিয়া হতে হবে ঐক্যবদ্ধ ও দৃঢ়। আমাদের মিত্রদের সঙ্গে পরামর্শ করাই জরুরি, যাতে সবাই একই পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত থাকে এবং যৌথ পদক্ষেপে একমত হতে পারে।”
আর্টিকেল ৪ অনুযায়ী ন্যাটোর যে কোনো সদস্য রাষ্ট্র জরুরি পরিস্থিতিতে অন্য সদস্যদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক পরামর্শ আহ্বান করতে পারে। গত সপ্তাহে পোল্যান্ডও রুশ ড্রোন তাদের আকাশসীমা লঙ্ঘনের পর এ ধরনের পরামর্শ চেয়েছিল।
রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পর থেকে ন্যাটো ও মস্কোর মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। সম্প্রতি পোল্যান্ড ও রোমানিয়াও অভিযোগ করেছে যে রুশ ড্রোন তাদের আকাশসীমায় প্রবেশ করেছে।
এ ঘটনার পর ন্যাটো পূর্ব ইউরোপে যুদ্ধবিমান ও সেনা মোতায়েন বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি ও ডেনমার্কের বিমান ইতোমধ্যেই পোল্যান্ডের আকাশে টহল দিচ্ছে।

এস্তোনিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী হ্যানো পেভকুর বিবিসিকে বলেন, “রাশিয়ার যুদ্ধবিমান ১২ মিনিট আমাদের আকাশসীমায় অবস্থান করেছে—এটি নজিরবিহীন। এই পরিস্থিতিতে একমাত্র সঠিক পদক্ষেপ ছিল তাদের আকাশসীমা থেকে বের করে দেওয়া।”
তিনি আরও বলেন, রাশিয়ার উদ্দেশ্য হলো ইউক্রেন থেকে মনোযোগ সরিয়ে ন্যাটো রাষ্ট্রগুলোকে নিজেদের প্রতিরক্ষায় ব্যস্ত রাখা।
ইইউর শীর্ষ কূটনীতিক কায়া কাল্লাস একে “চরম ঝুঁকিপূর্ণ উসকানি” হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লিয়েন বলেছেন, “আমরা প্রতিটি উসকানির জবাব দৃঢ়তার সঙ্গে দেবো এবং পূর্ব সীমান্তে প্রতিরক্ষা আরও জোরদার করব।”
এস্তোনিয়ার মার্কিন দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত স্বেন সাকভ বলেছেন, “ন্যাটোর পূর্ব সীমান্ত রক্ষায় আরও স্পষ্ট ও বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। তবে এস্তোনিয়ার জনগণ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ যে তারা নিজেদের রক্ষা করবে।”