সামরিক বাজেট বাড়লেও ট্রাম্পকে নিয়ে সংশয়ে ন্যাটো প্রতিনিধিরা

২০৩৫ সালের মধ্যে প্রতিটি ন্যাটো দেশ জিডিপির পাঁচ শতাংশ সামরিক খাতে বৃদ্ধি করবে বলে স্থির হয়েছে বৈঠকে। নেদারল্যান্ডসের হেগে বৈঠকে বসেছিল ন্যাটোর দেশগুলো। সেখানে ইউরোপের দেশগুলোর পাশাপাশি যোগ দিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সেখানে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন। দাবি করেছেন, ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধ তার নির্দেশেই বন্ধ হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে সংশয় কাটছে না ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যদের।
কী বললেন ট্রাম্প
ন্যাটোর বৈঠকে ট্রাম্প বলেছেন, ইউরোপীয় নেতারা তাদের দেশকে ভালোবাসে। প্রাণ দিয়ে তারা নিজেদের দেশকে রক্ষা করছে। তবে ইউরোপের নিরাপত্তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে প্রয়োজন। শুধু তা-ই নয়, ট্রাম্প বলেছেন, সাম্প্রতিক ঘটনাবলি ইউরোপ এবং পশ্চিমা সভ্যতার জন্য এক বড় জয়।
ট্রাম্প এতকিছু বলা সত্ত্বেও ইউরোপীয় নেতারা যুক্তরাষ্ট্রকে পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারছে না। তার কারণ, এর মধ্যেই স্পেনকে আলাদা করে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ট্রাম্প।
ন্যাটো সিদ্ধান্ত
ন্যাটোর এবারের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে প্রতিটি দেশ তাদের জিডিপির অনুপাতে পাঁচ শতাংশ সামরিক বাজেট বৃদ্ধি করবে। এর মধ্যে তিন দশমিক পাঁচ শতাংশ সরাসরি অস্ত্র কেনা এবং সেনাবাহিনীর উন্নতিতে ব্যবহৃত হবে। এক দশমিক পাঁচ শতাংশ সামরিক বাহিনীর সার্বিক উন্নয়ন এবং সাইবার নিরাপত্তায় ব্যয় করা হবে। চার বছর পর এর হিসেব নেওয়া হবে।
এই সিদ্ধান্ত হওয়ার পর ট্রাম্প আলাদা করে স্পেনকে হুমকি দিয়েছেন। বলেছেন, স্পেন যদি এই সিদ্ধান্ত অমান্য করে, তাহলে শুল্ক বসিয়ে ওই টাকা তিনি তোলার ব্যবস্থা করবেন।
ন্যাটোয় সবচেয়ে কম ব্যয় করে স্পেন। এখনো পর্যন্ত ন্যাটোয় স্পেনের অবদান এক দশমিক তিন শতাংশেরও কম। স্পেন অবশ্য জানিয়েছে, দুই শতাংশ টার্গেটে পৌঁছানোর চেষ্টা করবে তারা। বস্তুত, স্পেনের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি এবং অর্থনীতির যা অবস্থা, তাতে তাদের পক্ষে পাঁচ শতাংশে পৌঁছানো কার্যত অসম্ভব। স্পেনে গত সপ্তাহেও হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী পেড্রো স্যানচেজের দলের এক নেতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হচ্ছে। অভিযোগ, ওই ব্যক্তি দুর্নীতিতে যুক্ত। ওই ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ চাইছে বিক্ষুব্ধ জনতা। এই পরিস্থিতির মধ্যে এই পরিস্থিতিতে স্যানচেজ জানিয়েছেন, তিনি জিডিপির দুই শতাংশ পর্যন্ত খরচ করতে প্রস্তুত।
স্লোভাকিয়া ইতোমধ্যেই জানিয়েছে, সামরিক বাজেট বাড়ানো ছাড়াও তাদের অন্য সামাজিক কাজ আছে। ফলে এই পরিমাণ অর্থ তারা ব্যয় নাও করতে পারে। বেলজিয়ামের পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্থানীয় সাংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “আমরা চাই এই বাজেট বৃদ্ধি নমনীয় হোক। সকলের পক্ষে এই পরিমাণ খরচ করা সম্ভব নাও হতে পারে।”
অনুচ্ছেদ পাঁচ
ন্যাটোর পাঁচ নম্বর অনুচ্ছেদ নিয়ে বার বার মন্তব্য করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ন্যাটো সম্মেলনে যোগ দিতে যাওয়ার সময় রাস্তায় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, পাঁচ নম্বর অনুচ্ছেদের নানা ব্যাখ্যা হতে পারে। যদিও সম্মেলনে যোগ দিয়ে ট্রাম্প ন্যাটোর অঙ্গীকার নিয়ে বাকিদের সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন। ন্যাটো প্রধান জানিয়েছেন, ট্রাম্প সংঘবদ্ধ থাকার কথা বলেছেন।
শেষপর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র এই অনুচ্ছেদটি নিয়ে মতামত বদলাতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। অনুচ্ছেদ পাঁচে বলা হয়েছে, কোনো ন্যাটো সদস্য আক্রান্ত হলে বাকি দেশগুলো তার পাশে দাঁড়াবে। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১ এর পর প্রতিটি ন্যাটো দেশ তার পাশে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু ক্ষমতায় এসে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন ট্রাম্প। ফলে অনেকেই মনে করছেন, পাঁচ নম্বর অনুচ্ছেদ নিয়ে পরেও সমস্যা তৈরি করতে পারে ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্র।