ট্রাম্প-জেলেনস্কি বৈঠক
ইউক্রেনের পক্ষে অনড় অবস্থানে ইউরোপীয় নেতারা

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সমাপ্তি খুঁজতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির ওয়াশিংটন সফরে তার পাশে থাকবেন ইউরোপীয় নেতারা। আজ সোমবার (১৮ আগস্ট) যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে বৈঠকের সময় জেলেনস্কিকে ঘিরে শক্ত অবস্থান প্রদর্শন করতে চান তারা। খবর আল জাজিরার।
গত শুক্রবার (১৫ আগস্ট) আলাস্কায় ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের শীর্ষ বৈঠকের পর ট্রাম্প হঠাৎই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ থেকে সরে আসেন। এতে ইউক্রেন ও ইউরোপীয় দেশগুলোতে অস্বস্তি দেখা দিয়েছে।
মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ জানিয়েছেন, বৈঠকে পুতিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় মিত্রদের ইউক্রেনকে ন্যাটোর অনুরূপ নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়ার বিষয়ে সম্মতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, “এটাই প্রথমবার আমি শুনলাম পুতিন এমন বিষয়ে রাজি হয়েছেন।”
রোববার (১৭ আগস্ট) ব্রাসেলসে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন ও অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর জেলেনস্কি বলেন, যুদ্ধবিরতি শুরু করতে হলে বর্তমান ফ্রন্টলাইনের ভিত্তিতেই আলোচনার সূচনা করতে হবে। তবে ট্রাম্প পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পরপরই তা প্রত্যাখ্যান করেন।
ট্রাম্পের প্রস্তাব অনুযায়ী ইউক্রেন কিছু ভূখণ্ড রাশিয়ার হাতে ছেড়ে দেবে – এমন ধারণা ইউরোপীয় নেতারা ও কিয়েভ শুরু থেকেই সমালোচনা করেছেন। জেলেনস্কি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ইউক্রেনের সংবিধান অনুযায়ী কোনো ভূখণ্ড হস্তান্তর করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, “ইউক্রেনীয়রা নিজেদের জমি দখলদারকে দেবে না।”
রাশিয়ার দাবি, পুরো দোনেৎস্ক অঞ্চল রাশিয়াকে দিতে হবে; এর বিনিময়ে দক্ষিণ ইউক্রেনের খেরসন ও জাপোরিঝঝিয়া অঞ্চলে অভিযান থামাবে তারা। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট স্পষ্ট করেছেন, এমন কোনো সমঝোতায় তিনি স্বাক্ষর করতে পারবেন না।
সোমবারের বৈঠকে জেলেনস্কির সঙ্গে থাকবেন জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টার্মার, ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটে, ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টুব, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি এবং ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট ভন ডার লিয়েন।
জার্মান সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আলোচনায় নিরাপত্তা নিশ্চয়তা, ভূখণ্ড সংক্রান্ত বিষয় ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে চাপ ধরে রাখার কৌশল নিয়ে আলোচনা হবে। ম্যাক্রোঁ রোববার বলেন, “আজ যদি আমরা রাশিয়ার সামনে দুর্বলতা দেখাই, তাহলে ভবিষ্যতের সংঘাতের ভিত্তি তৈরি হবে।”
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানিয়েছেন, এখনও শান্তি চুক্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছানো যায়নি। তিনি বলেন, “কিছু অগ্রগতি হয়েছে ঠিকই, তবে বড় বড় মতপার্থক্য রয়ে গেছে।”

আল জাজিরার ব্রাসেলস প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন কূটনৈতিকভাবে একদিকে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান দেখানোর চেষ্টা করছে, অন্যদিকে ট্রাম্প প্রশাসনকে ক্ষুব্ধ না করার কৌশলও নিচ্ছে।
সব চোখ এখন সোমবারের ওয়াশিংটন বৈঠকে – ট্রাম্প কী প্রস্তাব দেন, তা নিয়েই তৈরি হয়েছে কূটনৈতিক উত্তেজনা।