ইউক্রেনকে অর্থায়নে রাশিয়ার জব্দকৃত সম্পদ কি ব্যবহার করবে ইউরোপ?

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) নেতারা একটি বড় পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করছেন, যেখানে ইউক্রেনের পুনর্গঠনের জন্য জব্দ করা রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যবহার করে ১৬৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়া হবে। একে ‘ক্ষতিপূরণ পরিকল্পনা’ বলা হচ্ছে। রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শেষ হলে ইউক্রেনকে সাহায্য করাই এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য। খবর আলজাজিরার।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে ইইউ নেতাদের বৈঠকে এই পরিকল্পনাটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে ও নেতারা মিশ্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। কেউ আবার জোরালো সমর্থন জানিয়েছেন, আবার কেউ কেউ আইনি জটিলতার বিষয়ে সতর্ক করেছেন।
ইউরোপীয় কমিশনের সভাপতি উরসুলা ভন ডের লেইন সেপ্টেম্বরে প্রথম এই ধারণা দেন। ২০২৪ সালের নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর ইউক্রেনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক সহায়তা কমানোর ইঙ্গিত দেওয়ায় ইউরোপের ওপরই ইউক্রেনকে সহায়তার শূন্যস্থান পূরণের চাপ বেড়েছে।
এই পরিকল্পনা অনুযায়ী, ইউরোপীয় ব্যাংকগুলোতে জব্দ করা রাশিয়ার প্রায় ১৪০ বিলিয়ন ইউরো সম্পদ জামানত হিসেবে ব্যবহার করে ইউক্রেনকে ঋণ দেওয়া হবে। ঋণের অর্থ রাশিয়া যুদ্ধ-ক্ষতিপূরণ হিসেবে দিলে তা থেকে পরিশোধ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে যদি রাশিয়া তা না করে, তবে ঋণ পরিশোধের গ্যারান্টি দেবে ইইউর পরবর্তী দীর্ঘমেয়াদি বাজেট অথবা ইইউ সদস্য রাষ্ট্রগুলো।
ডেনিশ ও সুইডিশ প্রধানমন্ত্রীরা এই ধারণাকে ‘দৃঢ়ভাবে সমর্থন’ করলেও অন্য নেতারা আইনি ও আর্থিক ঝুঁকি নিয়ে সতর্ক করেছেন।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে আক্রমণের পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলো রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রায় ৩০০ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ জব্দ করেছে। এর মধ্যে ২৪৬.৯ বিলিয়ন ডলারের বেশি ইউরোপে রাখা আছে, যার একটি বড় অংশ বেলজিয়াম-ভিত্তিক সংস্থা ইউরোক্লিয়ারের কাছে নগদ অর্থে জমা আছে।
তবে এই পরিকল্পনা কার্যকরে বড় চ্যালেঞ্জ হলো আন্তর্জাতিক আইন, কারণ একটি সার্বভৌম দেশের সম্পদ সহজে বাজেয়াপ্ত করা যায় না।
লুক্সেমবার্গের প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন তুলেছেন, রাশিয়া ক্ষতিপূরণ দিতে অস্বীকার করলে ঋণ কীভাবে পরিশোধ হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মার্কিন সাহায্য কমে আসায় ইউক্রেনকে যুদ্ধে হেরে যাওয়ার ঝুঁকিতে ফেলা এড়াতে ইউরোপের সামনে এই পরিকল্পনা এগিয়ে নেওয়া ছাড়া অন্য উপায় নেই।

মস্কো এই পরিকল্পনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ও এটিকে রাশিয়ার অর্থের ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেছে। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সতর্ক করে বলেছেন, রাশিয়ার সম্পদ জব্দ করার সঙ্গে জড়িত যে কেউ ‘কোন না কোনোভাবে বিচারের মুখোমুখি হবে।’ তিনি আরও বলেন, এই পদক্ষেপ বিনিয়োগ আকর্ষণে আগ্রহী দেশগুলোর ওপর গুরুতর আঘাত হানবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রাশিয়া পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে পশ্চিমা সম্পদ জব্দ করার চেষ্টা করতে পারে, যদিও তাদের কাছে থাকা পশ্চিমা সম্পদের চেয়ে ইউরোপের কাছে থাকা রাশিয়ার সম্পদের পরিমাণ দশ গুণ বেশি।