গাজায় পানি সংগ্রহ কেন্দ্র ও বাজারে ইসরায়েলি বোমা হামলা, নিহত ৯৫

গাজায় আক্রমণ জোরদার করেছে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী। রোববার (১৩ জুলাই) গাজা শহরের একটি ব্যস্ত বাজার এবং একটি পানি সংগ্রহ কেন্দ্রে বোমা হামলা চালানো হয়েছে। এতে কমপক্ষে ৯৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৮ হাজার ২৬ জনে। খবর আল জাজিরার।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজা শহরের বাজারে বর্বর ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের মধ্যে বিশিষ্ট চিকিৎসক আহমেদ কান্দিলও ছিলেন।
অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় নুসাইরাত শরণার্থী শিবিরে একটি পানি সংগ্রহস্থলে ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানলে আরও অন্তত ১০ জন নিহত হন। বেশিরভাগ নিহতই শিশু, যারা নিরাপদ পানি সংগ্রহে গিয়েছিলেন। এ হামলায় আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১৭ জন।
বর্বর ইসরায়েলি বাহিনী গাজার বাজারে হামলা নিয়ে এখনও কোনো মন্তব্য করেনি। তবে তারা দাবি করেছে, নুসাইরাতে যাদের লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছিল, তাদের একজন যোদ্ধা ছিলেন, কিন্তু “প্রযুক্তিগত ত্রুটির” কারণে ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
যুদ্ধের কারণে গাজায় পানির সংকট দিন দিন তীব্রতর হচ্ছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে অনেক জল পরিশোধন ও স্যানিটেশন প্ল্যান্ট। ফলে বাসিন্দাদের ঝুঁকিপূর্ণভাবে পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ৫৮ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের অর্ধেকের বেশি নারী ও শিশু। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১ লাখ ৮ হাজার ৫০০ জন।
এদিকে, জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানিয়েছে, খাদ্য ও পুষ্টিহীনতায় আক্রান্ত হয়ে আরও এক শিশু মারা গেছে।
জাতিসংঘের শিশু সংস্থা ইউনিসেফ জানিয়েছে, কেবল জুন মাসেই গাজায় ৫ হাজার ৮০০ শিশুর মধ্যে অপুষ্টি ধরা পড়েছে। তাদের মধ্যে এক হাজারেরও বেশি শিশুর অবস্থা গুরুতর।
এক বিবৃতিতে ইউনিসেফ জানায়, “শিশুদের দেহ শুকিয়ে যাচ্ছে। এটি শুধু পুষ্টিহীনতার নয়, এটি একটি শিশু-জীবন সংকট।”
ইউনিসেফসহ আটটি জাতিসংঘ সংস্থা এক যৌথ বিবৃতিতে জানায়, গাজায় জ্বালানি প্রবেশের ওপর অবরোধের কারণে হাসপাতাল, পানি সরবরাহ ও অ্যাম্বুলেন্স সেবা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
তারা সতর্ক করে বলেছে, “জীবন রক্ষাকারী কার্যক্রম টিকিয়ে রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণে নিয়মিতভাবে জ্বালানি প্রবেশ নিশ্চিত করতে হবে।”
এদিকে, গাজার সরকার দাবি করেছে, ইসরায়েল এবং মার্কিন-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)-এর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত সাহায্য বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে সাধারণ নাগরিকদের ইচ্ছাকৃতভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে। তারা জিএইচএফ-কে "মৃত্যুকূপ" হিসেবে আখ্যা দিয়ে একে "যুক্তরাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় গণহত্যা প্রকৌশল" বলে অভিহিত করেছে।
জিএইচএফ চালু হওয়ার পর থেকে সাহায্য সংগ্রহ করতে গিয়ে অন্তত ৮০৫ জন নিহত এবং ৫ হাজার ২৫০ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।
আল জাজিরার গাজা শহর প্রতিনিধি হানি মাহমুদ জানিয়েছেন, “মানুষ খাবার সংগ্রহ করতে প্রায় ১৫ কিমি দূরে রাফায় যায় – কেউ পায়ে হেঁটে, কেউ রাতভর পথ পাড়ি দিয়ে – শুধু একটি খাদ্য প্যাকেটের জন্য। কিন্তু সেখানেও তাদের গুলি করে মারা হচ্ছে।”
এদিকে, কাতারের রাজধানী দোহায় যুদ্ধ থামাতে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভ উইটকফ নিউ জার্সিতে সাংবাদিকদের জানান, তিনি যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আশাবাদী। ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালের ফাঁকে কাতারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার সাক্ষাতের কথা রয়েছে।
৬০ দিনের একটি যুদ্ধবিরতির মার্কিন-সমর্থিত প্রস্তাব এখনো অগ্রগতি পাচ্ছে না।
ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদের উপনেতা মোহাম্মদ আল-হিন্দি আল জাজিরাকে বলেন, “আমরা একটি কাঠামোগত চুক্তি নিয়ে আলোচনা করছি – যেখানে তিনটি বিষয় রয়েছে: আগ্রাসন বন্ধ, গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার এবং নিরাপদ সাহায্য বিতরণ। কিন্তু ইসরায়েল সরাসরি বন্দি বিনিময়ে যেতে চায়, মূল বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা ছাড়াই।”

তিনি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে রাফা শহর দখলের চেষ্টা এবং মানবিক সহায়তার আড়ালে মানুষকে একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে ঠেলে দেওয়ার অভিযোগ তোলেন।
অন্যদিকে, ইসরায়েলের অ্যাটর্নি জেনারেল গালি বাহারাভ-মিয়ারা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা জনাতান উরিচ গোপন সামরিক তথ্য জার্মান সংবাদমাধ্যম বিল্ড-এ ফাঁস করার অভিযোগে অভিযুক্ত হতে পারেন।
অভিযোগ রয়েছে, গাজায় ছয় বন্দির মৃত্যুর পর জনমত প্রভাবিত করতে নেতানিয়াহুর পক্ষ নিয়ে গোপন তথ্য ফাঁস করা হয়েছিল। নেতানিয়াহু এই তদন্তকে “রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র” বলে দাবি করেছেন। উরিচ সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।