ট্রাম্পের কঠোর অভিবাসন নীতির নেপথ্যে যিনি

লস অ্যাঞ্জেলেসের রাস্তায় মার্কিন মেরিন সেনা। আদালত চত্বর ও রেস্তোরাঁয় মুখোশধারী অভিবাসন কর্মকর্তাদের হানা। অনেক দেশের নাগরিকদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা। এই চিত্রগুলো ট্রাম্প প্রশাসনের এক আগ্রাসী অভিবাসন অভিযানের প্রতিফলন — যার মূল নকশাবিদ হোয়াইট হাউসের সিনিয়র উপদেষ্টা স্টিফেন মিলার। খবর রয়টার্সের।
মিলার বর্তমানে হোয়াইট হাউসের উপ-চিফ অফ স্টাফ ফর পলিসি এবং হোমল্যান্ড সিকিউরিটি কাউন্সিলের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। মে মাসে অভিবাসন কর্তৃপক্ষ প্রতিদিন তিন হাজার অবৈধ অভিবাসী গ্রেপ্তারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেন। এর ফলে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা কৃষিখামার, হোটেল, খাদ্যপ্রক্রিয়াকরণ কারখানা ও রেস্তোরাঁয় হানা দিতে শুরু করেন — যা বিরোধীদের সঙ্গে ব্যাপক রাজনৈতিক উত্তেজনা তৈরি করে।
কিন্তু হঠাৎ এক ফোন কলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেই হস্তক্ষেপ করেন — তিনি তৎকালীন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়েমকে ফোন করে জানান, "আমরা এটিকে লক্ষ্যমাত্রাভিত্তিকভাবে করব"।
এর ফলে আইসিই সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য এসব অভিযান বন্ধ করে দেয়। তবে কয়েকদিন পর সেই স্থগিতাদেশ বাতিল করা হয় — যা প্রশাসনের ভেতরেই বিভ্রান্তি ও ভিন্নমত প্রকাশ করে।
দুজন সাবেক কর্মকর্তার মতে, মিলারের নীতির দৃঢ়তা এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে তা কখনো কখনো ট্রাম্পের জন্যও "অতিরিক্ত" হয়ে দাঁড়ায়।
ট্রাম্পের বিশ্বস্ততম সেনাপতি
হোয়াইট হাউস কর্মকর্তারা দাবি করেন, ট্রাম্প ও মিলারের অভিবাসন কৌশলে কোনো বিভাজন নেই। মিলার প্রাথমিকভাবে কৃষিখামার লক্ষ্যবস্তু করেননি বলেও তারা জানায়।
মিলার এখন শুধু অভিবাসন নীতিতেই নয়, বরং হোয়াইট হাউসের বিভিন্ন ক্ষেত্রেই সিদ্ধান্ত গ্রহণের কেন্দ্রে রয়েছেন। প্রেসিডেন্টের প্রতিটি নির্বাহী আদেশ অনুমোদনের ক্ষেত্রে তার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি ছিলেন জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের চেষ্টার মুখ্য প্রবক্তা — যা মার্কিন সংবিধানের ১৪তম সংশোধনীর ওপর সরাসরি আঘাত।
এক রিপাবলিকান কর্মকর্তা বলেন, “তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি সে ১০০ শতাংশ নিশ্চিত।”
অভিবাসন নয়, বর্ণবাদ?
সমালোচকদের মতে, মিলারের অনেক নীতি নিষ্ঠুরতা নির্ভর এবং অভিবাসন সমস্যা সমাধানের চেয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
২০১৯ সালে কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট সদস্যরা তাকে "চরম ডানপন্থী বর্ণবাদী ও বিদেশি-বিদ্বেষী দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী" বলে অভিহিত করেন। লস অ্যাঞ্জেলেসের বর্তমান মেয়র ক্যারেন ব্যাস এই পক্ষে ছিলেন — যিনি এখন ট্রাম্প প্রশাসনের আইসিই অভিযানের প্রবল বিরোধী।
প্রশাসনে তার প্রভাব অভূতপূর্ব
মিলারের হোয়াইট হাউসে প্রভাব আসলে তার ট্রাম্পের সঙ্গে দীর্ঘ ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ফল। ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের সাবেক চিফ অফ স্টাফ মার্ক শর্ট বলেন, “ট্রাম্প যাত্রার শুরু থেকেই সে ছিল। আর প্রথম মেয়াদে সে সবচেয়ে বিশ্বস্তদের একজন ছিল।”
এক সাবেক কর্মকর্তা বলেন, “ওর সঙ্গে কথা বলা কঠিন ছিল। ও শুধু নিজের কথা বলত, অন্যের কথা শোনার সময় বা আগ্রহ কোনোটাই ছিল না।”
মিলার এতই সক্রিয় ছিলেন যে, হোমল্যান্ড সিকিউরিটির কর্মকর্তারা তাকে সামাল দিতে আলাদা স্টাফ নিয়োগ করেছিলেন।
“সভ্যতার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে এই নীতির বাস্তবায়নের ওপর”
সম্প্রতি একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্টে মিলার বলেন, “রিপাবলিকানরা যুগ যুগ ধরে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে— পূর্ণ, সম্পূর্ণ ও নিখুঁত সীমান্ত নিরাপত্তার। এখনই সেই প্রতিশ্রুতি পালনের সময়— যেটার ওপর সভ্যতার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে।”
নতুন প্রশাসনে আরও আক্রমণাত্মক কৌশল
বর্তমানে অভিবাসন কৌশল আরও শক্তিশালী। অ্যালিগেটর আলকাট্রাজ নামে পরিচিত নতুন বন্দিশিবির উদ্বোধনে ট্রাম্প মিলারকে "আমাদের তারকা" বলে পরিচয় করিয়ে দেন। মিলারও বলেন, “এই কাজের অংশ হতে পারা জীবনের অন্যতম গর্বের বিষয়।”

মিলারের মতে, এখনকার কৌশল কেবল আইন প্রয়োগ নয়, বরং মার্কিন সংস্কৃতি ও পরিচয়ের রক্ষার লড়াই।
স্টিফেন মিলার এখন কেবল একজন নীতিনির্ধারক নন, বরং ট্রাম্পের অভিবাসন যুদ্ধের প্রধান সেনাপতি। তার নীতিমালা যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ব্যবস্থার চেহারা আমূল বদলে দিয়েছে — সমর্থকদের কাছে তিনি ‘দেশরক্ষক’ হলেও, সমালোচকদের চোখে তিনি ‘বিদ্বেষের মুখ’।