বাণিজ্যযুদ্ধ সত্ত্বেও দ্বিতীয় প্রান্তিকে চীনের ৫.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা

শক্তিশালী রপ্তানির ফলে দ্বিতীয় প্রান্তিকে চীনের অর্থনীতি ৫ দশমিক ২ শতাংশ হারে সম্প্রসারিত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন যে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধ বছরের শেষার্ধে তীব্র মন্দার কারণ হতে পারে।
এএফপি জানায়, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি বর্তমানে টিকে থাকার জন্য একাধিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। যার মধ্যে সবচেয়ে বড় বাধা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শুল্ক অভিযান।
ট্রাম্প জানুয়ারিতে ক্ষমতায় ফিরে আসার পর থেকেই চীনসহ বেশিরভাগ প্রধান বাণিজ্য অংশীদারের ওপর শুল্ক আরোপ করেছেন, যা বেইজিংয়ের রপ্তানি খাতে গুরুতর প্রভাব ফেলছে। গত মাসে লন্ডনে আলোচনার মাধ্যমে একটি কাঠামোগত সমঝোতায় পৌঁছানোর পর ওয়াশিংটন ও বেইজিং বাণিজ্য যুদ্ধ নিরসনের চেষ্টা করলেও বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে এখনো অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।
মঙ্গলবার প্রকাশিতব্য সরকারি তথ্যচিত্র এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে চীনের অর্থনীতির সার্বিক চিত্র তুলে ধরবে, যেখানে সরকার একদিকে বৈদেশিক চাপ থেকে সুরক্ষা দিতে চায় এবং অন্যদিকে ভোক্তা ব্যয় উৎসাহিত করতে চায়।
এএফপি পরিচালিত বিশ্লেষকদের এক জরিপ অনুযায়ী, মঙ্গলবার প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, গত বছরের তুলনায় দ্বিতীয় প্রান্তিকে চীনের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ৫ দশমিক ২ শতাংশ হারে বেড়েছে। তবে অনেকেই বছরের দ্বিতীয়ার্ধে প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন।
চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, ভোক্তা মূল্য জুনে সামান্য বেড়েছে, যা চার মাসের মূল্য হ্রাস প্রবণতাকে থামিয়েছে। তবে, উৎপাদন পর্যায়ে পণ্যের মূল্য (প্রযোজক মূল্য সূচক) গত মাসে বার্ষিক ভিত্তিতে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ হারে কমেছে। যা প্রায় দুই বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের প্রধান অর্থনীতিবিদ বেটি ওয়াং বলেন, ডিফ্লেশন প্রবণতা এখনো কমেনি। এছাড়া শ্রমবাজারের সূচকগুলোও আশাব্যঞ্জক নয়।
গত বছর চীনের রপ্তানি রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছিল, যা তখনকার অর্থনৈতিক চাপ মোকাবিলায় সহায়ক হয়।
চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিতেও রপ্তানি শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। বিশেষত ট্রাম্প প্রশাসনের ভবিষ্যৎ শুল্ক ঝুঁকি মোকাবিলায় অনেক বিদেশি ক্রেতা আগেভাগেই পণ্য কিনেছে।
নাটিক্সিসের এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রধান অর্থনীতিবিদ এলিসিয়া গার্সিয়া হেরেরো বলেন, এপ্রিল মাসে রপ্তানি ছিল বিশেষভাবে ভালো। কারণ তখন যুক্তরাষ্ট্রে শুল্ক হার বেশি ছিল।
অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, চীনের উচিত এখন রপ্তানি ও নির্মাণনির্ভর মডেল থেকে সরে এসে অভ্যন্তরীণ ভোক্তা নির্ভর প্রবৃদ্ধির দিকে যাত্রা করা।
চীন সরকার গত বছর থেকে বিভিন্ন ভোক্তা উৎসাহমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে, যেমন পুরনো পণ্যের বদলে নতুন পণ্য কেনার জন্য ভর্তুকি।
তবে মুডি’স অ্যানালিটিক্সের অর্থনীতিবিদ সারা টান বলছেন, এসব প্রকল্প আয় স্থবিরতা, চাকরির নিরাপত্তাহীনতা ও দুর্বল ভোক্তা মনোভাবের মূল কারণগুলো সমাধান করতে ব্যর্থ হয়েছে।
চীন এ বছর মোট ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। যা গত বছরের সমান হলেও অনেক বিশ্লেষকের মতে তা অর্জন কঠিন। প্রথম প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি হয় ৫ দশমিক ৪ শতাংশ, যা পূর্বাভাসকে ছাড়িয়ে যায় এবং ইতিবাচক ধারা সৃষ্টি করে।
ম্যাককুয়ারির অর্থনীতিবিদ ল্যারি হু ও ইউসিয়াও ঝাং লিখেছেন, ‘যদিও প্রথমার্ধে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বার্ষিক হিসাবে পাঁচ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে পারে, এটি মূলত রপ্তানি ও শিল্প উৎপাদনের উপর নির্ভরশীল।’
তারা আরও যোগ করেন, ‘অভ্যন্তরীণ চাহিদা দুর্বল থাকায় এই প্রবৃদ্ধি ডিফ্লেশনমূলক চাকরিহীন ও লাভবিহীন হয়েছে।’
বেইজিংয়ের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের চাবিকাঠি এখন ওয়াশিংটনের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক পরিচালনা এবং দেশীয় ব্যয় বৃদ্ধির জন্য সুদের হার কমানোর মতো আর্থিক পদক্ষেপের ওপর নির্ভর করছে।